চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়, এক দল কবির আবির্ভাব হয়ে যারা সেই যুগের সাহিত্যের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে অন্য রকম কবিতা লেখার সাহস দেখান। এনাদের লেখা সেই সময় অশ্লীল বলে বাতিল করা হয়। ওনাদের লেখা ধোঁয়াশা পূর্ণ ছিল বলে ওনাদের 'মিসটি পোয়েট' অথবা 'ছায়া কবি' বলা হয়।
এই আন্দোলন প্রথম শুরু হয় 'জিনথিয়ান' অথবা 'আজ' নামক পত্রিকা থেকে। এই পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন বেই দাও আর মাং কে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত, তারপর এটিকে ব্যান করা হয়।
এই সময়ের প্রধান কবিরা ছিলেন বেই দাও, গু চেঙ, দুও দুও আর ইয়াঙ লিং। ১৯৮৯ সালের তিয়ানান্মেন বিপ্লবের পর এই কবিদের নির্বাসিত করা হয়। ১৯৯০ সালে চীনা কবিদের সম্বন্ধে একটি ফোরামে 'জিনথিয়ান' পত্রিকাটি আবার পুনরপ্রকাশ করা হয়।
সেই সময়ের কবিতা সম্পর্কে গু চেঙ বলেছেন, ""The defining characteristic of this new type of poetry is its realism - it begins with objective realism but veers towards a subjective realism; it moves from a passive reaction toward active creation."

এবার একটু বলি এই কবিতা বিপ্লবের জন্মের ইতিহাস। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মাও জে ডং সাহিত্য চর্চার কিছু নিয়মাবলী তৈরি করেছিলেন। এই নিয়মাবলী অনুযায়ী সাহিত্যিকরা 'সাংস্কৃতিক যোদ্ধা' নামে বিভিন্ন দল গঠন করে সাধারণ মানুষকে বিপ্লবের মানে সম্বন্ধে শিক্ষিত করবে। তার ফলে, সেই সময়ের সমস্ত সাহিত্য রাজনৈতিক প্রপাগ্যাণ্ডা ছিল, সাহিত্য ছিল না। সেই সময়ের একটা কবিতা দিলাম।

                       "চাঁদ পৃথিবীকে অনুসরণ করে,
                         পৃথিবী অনুসরণ করে সূর্যকে,
                        তেল অনুসরণ করে আমাদের,
               আর আমরা অনুসরণ করব কমিউনিস্ট পার্টিকে।"

সাংস্কৃতিক বিপ্লব শেষের পর সারা চীনে একটা গৃহযুদ্ধের পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় রাজনৈতিক কারন দেখিয়ে প্রচুর মানুষকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয় চীন সরকার। সেই সব মানুষের কথাই বলা হত এই 'মিসটি পোয়েট'-দের কবিতায়। যদিও এই ধরনের লেখার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল সেই সময়, তবুও এই ধরনের বহু কবিতা ছাপা হয় গুপ্ত ভাবে।
'জিনথিয়ান' পত্রিকা ছিল এইসব কবিদের বিচরণ ভূমি। এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় ছাপা হয় 'উত্তর' নামক একটি কবিতা। এই কবিতার একটি লাইন 'আমি বিশ্বাস করি না' এই 'মিসটি পোয়েট'-দের শ্লোগান হয়ে গিয়েছিল।
সেই সময়ের একটা কবিতার অনুবাদ দিয়ে লেখাটা শেষ করছি।

                                     বক্তব্য
                                   বেই দাও

                          হয়তো শেষ সময় আসন্ন
                      আমি কোন কথা দিয়ে যাচ্ছি না
            শুধু একখানা কলম রেখে যাচ্ছে আমার মায়ের জন্য।
                          এই নায়ক বিহীন সময়ে,
                        শুধু ব্যক্তি রুপেই বাঁচতে চাই।

                                 শান্তির দিগন্ত
               জীবন আর মৃত্যুকে আলাদা করে দেয়।
                    আমি আকাশের পানেই তাকাই
                    হাঁটু মুড়ে বসতে আমার আপত্তি।
               জল্লাদকে অনেক উঁচু মনে হবে তোমার
                        এই পরাধীনতার শহরে।

                   এই গুলি বিদ্ধ তারাদের শরীর থেকে
                     ঝরে পড়বে রক্তে রাঙা স্বাধীনতা।