গতকাল একটা পেপার পড়ছিলাম, চীন দেশের কবিদের নিয়ে। ট্যাং চুং নামক একজনের একটা লেখা পড়ে অবাক হয়ে গেলাম। ভাবলাম আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। কিন্তু এই বিষয়ে লেখার মত জ্ঞান আমার আছে কিনা জানি না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ছোট একটা লেখা দিয়ে শুরু করছি, আপনাদের মতামত জেনে তারপর এগাবো কিনা ভাববো।
রবীন্দ্রনাথ যে দুবার চীন দেশে এসেছিলেন তা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন। কিন্তু এই দেশে ওনার আগমনের প্রভাব কি রকম ছিল? তাই নিয়ে দুকথা লিখছি। চীন দেশের কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বললে প্রথমেই জু ঝিমো-র নাম মাথায় আসে।
জু ঝিমোর মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথের কিছু ছায়া দেখতে পাই, ধনী, প্রতিভাবান, প্রেমিক, ভাবনায় অগ্রগতিশীল কিন্তু রাজনীতি থেকে বেশ দূরে। যৌবন কালে তিনি প্রাকৃতিক মাধুর্যে ডুবে থাকলেও, পার্থিব জীবনকে কোনদিন অবহেলা করেননি। জু ঝিমো ছিলেন সম্ভাব্য চীনা রবীন্দ্রনাথ, দুর্ভাগ্য যাকে পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হবার আগেই কেড়ে নিয়েছিল পৃথিবী থেকে।
সেই সময়কার চীনা কবিদের মধ্যে, জু ঝিমো নিজেকে রবীন্দ্রনাথের ছাঁচে বানিয়ে নিয়ে ছিলেন। তিনি ১৯৩০ সালে তাঁর বন্ধু হু শি-কে উৎসর্গ করে একটি কবিতা লিখেছিলেন। 'আই দে লিন গান' নামক কবিতাটিতে গীতাঞ্জলির ছাপ দেখা যায়। এটি একটি গদ্য কবিতা, একটি অদৃশ্য আত্মার সাথে কথপোকথন আর শেষটায় ঠিক রবীন্দ্রনাথের ছোঁয়া।
"এখন আমি নিশ্চিন্তে মৃত্যু বরন করতে পারি। আমি চাই
তুমি আমাকে জড়িয়ে থাকো যতক্ষণ না আমি যাই, যতক্ষণ
আমার চোখের পাতা আর খুলবে না। যতক্ষণ আমি উড়ি, উড়ি, উড়ে যাই
মহাকাশের পানে, ছড়িয়ে পড়ি বালির মত, ছড়িয়ে যাই
আলোর মত, ভেসে যাই হাওয়ার সঙ্গে। আর, বেদনা!
কিন্তু দুঃখ তো অতিথি, বেদনা যে ক্ষনস্থায়ী।
শুধু সুখ তো চিরসবুজ, আর ভালবাসা অমর।"
জু ঝিমোর এই প্রেমের অনুপ্রেরণা ঠিক রবি ঠাকুরের গীতাঞ্জলির দিকেই ইশারা করে।
আদর্শের খোঁজ রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটা চিরন্তন বিষয়। জু ঝিমোর কবিতাতেও সেই একই খোঁজ।
"সে তো নেই।
সে কোথায়?
সে থাকে ওই উজ্জ্বল
সাদা মেঘের মাঝে।
সে থাকে ওই অর্ধেক চাঁদটায়,
দূরবর্তী আর নিশ্চল।
সে থাকে ওই পদ্ম পাতার মাঝে
শান্ত ও লাজুক।
সে থাকে সেই ফুলে যেটা
পদ্মের বীজ বহন করে।
সে থাকে কিশোর হৃদয়ে
যেখান থেকে প্রার্থনার জন্ম।
সে থাকে সরল, কৌশলহীন।
সে তো নেই।
সে থাকে প্রকৃতির মাঝে, তারই প্রতিমূর্তি হয়ে।"
এই কবিতাটার নাম 'সে কোথায়?' জু ঝিমোর লেখা একটু মন দিয়ে পড়লেই বোঝা যায় যে তাঁর আর আমাদের রবি ঠাকুরের খোঁজ একই। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আদর্শের যে সব সঙ্কেত থাকে, যেমন অর্ধচন্দ্র, পদ্ম, কিশোর হৃদয় ইত্যাদি, সেই সবই আমরা এই কবিতাটিতেও পাই। জু ঝিমোর লেখায় রবীন্দ্রনাথের ছায়া স্পষ্ট।
* * *
আজ এইটুকুতেই শেষ করলাম। আর সাহস হল না। লেখার ছিল তো অনেকই। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আমি লেখার যোগ্য কিনা তা আপনাদের মন্তব্যই ঠিক করে দেবে। আবার বলছি, ছোট মুখে বড় কথা হয়ে গেলে ক্ষমা করবেন।