(এক)
এক পাথুরে স্যাঁতস্যাতে জমিতে
হঠাৎই জন্ম নিল একটি নিমগাছ।।
সেখানে তাঁর জন্মানোর কোন কথাই ছিল না
সবাই আশা করেছিলো
হয়তো গোলাপ গাছ হবে
সুন্দর সুন্দর ফুল ফোটাবে
কিন্তু হলো কিনা নিমগাছ।।
সর্বদা জুটতো একরাশ অবঙ্গা।
শুধুমাত্র যেই পাথরের সরসে
গাছটি জন্মেছিল।
সে একরাশ স্বপ্ন ও অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে-
গাছটিকে বুকে করে আগলে রেখেছিলো।।
(দুই)
পাথরটিও বৃষ্টির জলধারায় একদিন
কোথায় ভেসে চলেগেলো।।
নিঃসঙ্গ জীবনে তখন শুধুই প্রতিযোগিতা
কখনো খাদ্যের জ্বালায় ত্রাহিমাঙ অবস্থা
সামান্য সূর্যের আলোর জন্য
গাছটিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হতো
নির্মম পৃথিবীতে কেউ একটুখানি জমি ছাড়েনি
তাঁরজন্য
(তিন)
এতকিছুর পরও গাছটি একদিন বড়ো হলো
ডালপালা মেলে মাথাতুলে দাঁড়ালো
এখন তাঁর ভিষন কদর-
কেউ তাঁর কচি পাতা নিয়ে রান্না করছে
কেউ কচি ডগা দাঁতন হিসেবে
ব্যবহার করছে
আবার চিকিৎসকের দল
তাঁর ছাল ছাড়িয়ে ঔষধ বানাচ্ছে।।
তাঁর কোনকিছুতেই কোন আপত্তি নেই
সে মনে করে এটা তাঁর জন্মদাত্রী পাথরের স্বপ্নপূরণ ।।
(চার)
ইতিমধ্যে গাছটির সাথে বন্ধুত্ব হয়-
একটি ফুটফুটে ছেলের
ছেলেটি সারাদিন গাছটির সাথেই থাকে
শুধু সন্ধে হলে বাসায় ফেরে
বাসায় যাবার আগে সে রোজ নিমপাতা, নিমদাঁতন নিয়ে যায়
সকালে গ্রামের হাটে ছেলেটি-
সেগুলি বিক্রি করে সংসার চালায়।।
নিমগাছটি ভাবে এইবুঝি তাঁর
একাকিত্বের অবসান হলো।।
এইরকম কিছুদিন যাবার পর-
গাছটি দেখে ছেলেটির একটি গোপিনী জুটেছে
ছেলেটি আর আগের মতো তাঁর কাছে আসে না
কিছুদিন পরে হঠাৎই ছেলেটি
একটি কাটারি হাতে গাছতলায় উপস্থিত হয়
গাছটিকে ছেলেটি কেটে ফেলে।।
(পাঁচ)
আজ ছেলেটির ফুলশয্যা
নববধূকে নিয়ে সে খাটে শুয়ে আছে
যদিও খাটটি সেই নিমকাঠেরই তৈরী।।
কাল দেখে এলাম,
নিমগাছটির পরিত্যক্ত গোড়া থেকে
কতকগুলি সবুজ ডালপালা বেড়িয়েছে
হয়তো আবার সে একদিন বড়ো হবে
কিন্তু প্রশ্ন একটাই-
সে কি আর কোনদিন কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে কি?