(মূর্তজ জোছনায় বিমূর্ত ছবি-আমার একটি দীর্ঘ কবিতার শিরোনাম । একটি কবিতা দিয়ে একটি গ্রন্থ এই এরকম একটি ইচ্ছা থেকে কবিতাটি দীর্ঘ করি । এটির রচনা কাল ১০ আগস্ট ২০১১ খৃষ্টাব্দ, শারজাহ, ইউ এ ই । কবিতাটি একজন পুরুষ ও একজন নারীর কথোপকথন আকারে রচিত । নারীটি পুরুষের সাবেক প্রিয়তমা, বর্তমানে অন্যের ঘরণী । নারীটি পুরুষের কল্পনায় এসে ধরা দেয় । এই লেখাটি কবিতার সামান্য অংশ বিশেষ । এইজন্য শেষটা অসম্পূর্ণ মনে হতে পারে । )
• তুমি তো জান,
অবাঞ্চিত ধুলোতে আজ আমি অন্ধ,
কালের ধ্বনিতে বধীর ।
আমি সেই তৃণ,
আমি সেই খড়কুটো ,
কেবল বাতাসে উড়তে উড়তে
নীড়ের সন্ধান করি ।
মাঝে মাঝে মনে হয় ,
আমি যেন স্রোতের শেওলা ।
ভাসতে ভাসতে সাগর পেরিয়ে মহাসাগরে
দিকহারা নাবিকের মত এলোমেলো ঘুরছি
আমার চারদিকে শুধু জলের হিহিংস্রতা ।
• খুব বেশি অভিমান ;
নয় কী ?
• যে পুরুষ ভালোবাসতে শিখেনি,
সে অভিমানও শিখেনি ।
• তবে ?
• অভিযোগ ।
• কেন অভিযোগ ?
• নিজেই নিজেকে দাঁড় করিয়েছি কাঠগড়ায় ।
আজ আমার বিরুদ্ধে আমি,
হৃদয়ের রক্তাক্ত-প্রান্তরে চলছে লড়াই ,
এই লড়াইয়ে জয় নেই, পরাজয়ও নেই ।
কেবল শরবিদ্ধ পাখির মত ছটফটানিতে
নিরন্তর ঝরে আত্মার শিশির ।
• স্বপ্নভঙ্গের মনোবেদনা বড় ভয়ঙ্কর
বিসুয়ভিয়াসের অগ্নিময় লাভার মত
কেবল ধিকিধিকি জ্বলে ।
• নিজের স্বপ্নভঙ্গের কথা মোটেও ভাবিনা ।
স্বপ্নভঙ্গের কথা ওঠলে মনে আসে জাতির জনক ।
যিনি স্বপ্ন দেখাতেন
আমাদের সোনারদেশ হবে ।
• কেন মনে পড়িয়ে দাও
রক্তাত ১৫ই আগস্ট ।
আমি যে কাঁদতেও পারিনা
আবহমান কাল থেকে আমার চোখ নির্জল ।
বাষ্পহীন এ চোখের কথা ভাবলে
মনে হয় আমি দেবী;
দেবীর চোখে জল থাকে না ।
• একবার তার ডাক শুনে গিয়েছিলাম
রেসকোর্সের বিশাল ময়দানে ।
তিনি ধীর পায়ে হেঁটে এলেন জনতার সমুদ্রে
তারপর আমাদের মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে
আবার ধীর পায়ে চলে গেলেন ।
• আজো তাঁর কথা ভেবে
মেঘের অভিমান রোঁদ হয়ে যায়,
কুয়াশা ঝরে হয় মহান শিশির,
দারুন বিস্ময়ে চোখ মেলে ঘাসফুল,
সন্ধের আকাশে উড়াউড়ি বন্ধ করে
নীড়ে ফিরে পাখিরা, পুষ্পের টান ফেলে
মৌমাছি ফিরে আসে মৌচাকে ।
তুমি জাননা, তিনি বড় ভালোবাসতেন দুঃখিনী বাংলাকে ।
• হাঃ ! দুঃখিনী বাংলা !
কবে ছিল কপালে তার ফুল- চন্দনের টিকা ;
ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখ একবার ।
দেখবে, বিজাতীয় পালের রাজ,
শাহী সুলতান, মুঘল, পর্তুগীজ, বৃটিশ
এবং সবশেষে পাকিস্তানের ফাঁদ ।
তারপর একাত্তর ,
রক্তস্নাত বাংলাদেশ ।
বিশ্বাস কর, কোথাও বিজয়ের হাসি দেখিনি
কেবল দেখেছি মুজিবের চোখে জল ।
• আমিও হাসতে পারিনি ।
• কী করে পারবে ?
তুমি যে মানবী ।
• যদি আবার দেবী বলে ডাক
আমি আর আসবনা তোমার কাছে ।