জাপানি সাহিত্যে পঞ্চপদি কবিতা দেখা যায় । যাকে তারা ‘ তাঙ্কা ‘ বলে । ‘তাঙ্কা’ কবিতার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একটি কবিতা রচনার  জন্য দুজন কবির প্রয়োজন হয় । প্রথম জন রচনা করবেন কবিতার প্রথম তিন লাইন এবং দ্বিতীয় জন লিখবেন চতুর্থ ও পঞ্চম লাইন । ১৯৬৯ সালে প্যারিসে অক্তাভিও পাজ  ও আরও তিনজন কবি ( চার্লস টমলিনসন , জ্যাকস রৌবার্ড , এডুয়ারডো স্যাঙ্গুইনেত্তি )  মিলে এরকম একটি কবিতা ‘ রেঙ্গা ‘ ( Renga ) লিখেছিলেন ।

অক্তাভিও পাজ পুনর্বার ভারতে আসেন ১৯৮৪ সালে । । ভারত সরকার   তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল  ১৯৮৪ সালে  জওহরলাল   নেহরুর সম্মানে আয়োজিত বার্ষিকীতে ভাষণ দেবার জন্যে । ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধে তিনি আমন্ত্রণটা পেয়েছিলেন । একই বছর  তাঁকে জাপান ফাউন্ডেশনও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল । তিনি প্রথমে জাপান ও পরে দিল্লী যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন । স্ত্রী মেরি হোসে এর সাথে তিনি যখন কোয়েটা-তে অবস্থান করছিলেন, তখন সংবাদ পেলেন দুজন শিখ দেহরক্ষীর হাতে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হয়েছেন । এর কিছুদিন পর তিনি দিল্লী এসে পৌঁছান । তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন ভাষনটি মূলতবি করা হবে । এবং তাই হয়েছিল । নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী আমন্ত্রণটি নবায়ন করেছিলেন । তিনি ভাষণটি দিয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে । এটি ছিল ভারতে তাঁর শেষ  ভ্রমণ । সেই সময়ে লেখক শ্যামলাল তাঁর বাড়িতে একদল বন্ধুর পুনর্মিলনের আয়োজন করেছিলেন । ওখানেই শ্যামলাল প্রস্তাব দিয়েছিলেন হিন্দি কবিদের দিয়ে একটি ‘রেঙ্গা’ রচনা করা যায় কিনা । পাজ রাজী হয়েছিলেন ।

শ্যামলাল অক্তাভিও পাজ, আজায়া ( এস বাৎসানন ) ও শ্রীকান্ত ভার্মা এই তিনজনের হাতে তিন টুকরা কাগজ ধরিয়ে দিলেন ।  শ্যামলালের বাড়িতেই রচিত হল একটি অসাধারণ বন্ধুত্বের  কবিতা ।  

বন্ধুত্বের কবিতা

অক্তাভিও পাজ -   বন্ধুত্ব হলো একটি নদী আর একটি  আংটি ।
আজায়া       -      নদী বয়ে যায় একটি আংটির ভিতর দিয়ে ।
       আংটিটি নদীর বুকে একটি দ্বীপ ।
শ্রীকান্ত ভার্মা -      নদী বলেঃ আগে এখানে ছিলনা কোনো নদী,
       পরে শুধুই একটি নদী কেবল ।
       পূর্ব এবং পরঃ বন্ধুত্ব মুছে যায় যেখানে ।
অক্তাভিও পাজ -   মুছে যায় ? আংটি তৈরি করে নদী বয়ে  যায় ।
আজায়া -বন্দুত্ব মুছে ফেলে সময়ের দাগ আর এইভাবে মুক্ত   করে আমাদের ।
           প্রবহমান এই যে নদী, উদ্ধার করে আংটিগুলো ।
শ্রীকান্ত ভার্মা -নদীর বালুকা বেলায় আমাদের পদচিহ্ন মুছে যায় ।
                   নদীকে আমরা খুঁজি বালুকা বেলায়ঃ কোথায়  গেল সে চলে ?   
অক্তাভিও পাজ- বিস্মরণ আর স্মৃতির ভিতরে আমাদের বসবাসঃ
                    এই মুহূর্তটি হলো
                    অন্তহীন সময়ে পোড় খাওয়া একটি দ্বীপ ।        


( কবিতার অনুবাদ- মোরশেদুর রহমান
ইন লাইট অফ ইন্ডিয়া
মূল- অক্তাভিও পাজ )