কেতকি এখন আমার অগাধ ছুটি। আমায় ডাকবিনা তোদের দেশ বাড়ি দেখবার জন্য। একবার ডেকে দেখনা এবার গেলে আমি আর
কোনদিন ফিরবনা কথা দিলাম। তোদের ওখানেই থেকে যাব খুব সাধারণ হয়ে। গুল্লুকে ছাড়িয়ে দিবি ওর কাজগুলো আমিই করব। তোদের যে মস্ত আমের বাগান আছে এই ফলনের সময় পাহারা দেব। চার বাঁশের খুঁটি তার ওপর পাতায় ছাওয়া ছোট্ট ঘর বানিয়ে থেকে যাব। তুই মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যাবি। সকাল হলে গরুগুলোকে দুরের মাঠে চড়তে দিয়ে আসব। অবশ্য তার আগে হাঁস মুরগির ঘরের পাল্লা খুলে দেব। খুব মজা হয় জানিস লাল কালো মুরগিগুলো কি ভীষণ ডাকতে থাকে যেন পাড়া জাগানো ওদের একটা মহান দায়িত্ব। আর হাসগুলো হেলে দুলে চৈ চৈ করতে করতে গা ঝাড়া দিয়ে পুকুরের দিকে চলে যায়। তোদের পুকুর মানে সরোবর...গা শিহরন দিয়ে ওঠে... কাউকে কোনদিন বলবনা ভেবেছিলাম কিন্তু না বলে পারলাম না।
সেবার যখন গেছিলাম সবে মাধ্যমিক দিয়েছি, তারপর ছিল সাময়িক দুই তিন মাস ছুটি। কাকার কথায় চলে গেলাম উড়িষ্যার সেই বামরা গ্রামে। ওখানে তোর সাথে আলাপ। চোখ চিনে নেয় কতকিছু আর কে কত আপন হতে চায়। যাবি আমাদের বাড়ি
কত কি দেখবার আছে জমির শেষে পাহাড় আছে । ওখানে মাঝে মাঝে ভালুক আসে মহুয়া ফুলের নেশায়। যদি দেখার ইচ্ছে থাকে চল। চলে গেলাম তোদের বাড়ি। গুল্লুকে নির্দেশ দেওয়া হোল ও যেন আমার সাথে সাথে পাহাড় বেড়িয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু তোর যে শান্তি নেই মনে তাই লুকিয়ে লুকিয়ে ওঁত পেতে আমাদের সাথেই পাহাড়ে গেলি। আর পাখীর মতন শিস দিয়ে চমক দিয়ে দেখা দিলি। নদী ঝর্ণা জল পাখী গাছ দুরের গ্রাম এতো কিছু দেখিয়ে তোর যেন আঁশ মেটেনা। এটাও বেশ নতুন লেগেছিল খুব তৃষ্ণায় বিড়ি পাতায় মুড়ে ঝর্নার জল খাওয়া আজো ভুলিনি এখনও মনে আছে। বাড়ি ফিরে এসে তোদের বিশাল আমবাগান দেখতে গেলাম। এক মানুষ সমান গাছে অজস্র সব আম ফলে আছে। কি সব অদ্ভুত যেন ওদের নাম ভুলে গেছি। দেখার পড়ে মনে হয়েছিল এ বুঝি সারাজীবনের আম দেখা। হাসি গল্পে ফেলে ছড়িয়ে আম খেয়ে যেন আঁশ মেটে না। মাঝদুপুরে হঠাৎ বলেছিলি আমাদের পুকুরে জলপরী আছে দেখবি? আমি যেন তোর খেলার পুতুল তৎক্ষণাৎ বললাম- চল যাবো। কৌতূহল বিস্ময় আমার কিছু কম নাকি! পুকুরপারে দাঁড়িয়ে আমায় চোখ বন্ধ রাখতে বলেছিলি কিছুক্ষনের জন্য। তারপর জলের ছপাত ছপাত শব্দে চোখ খুলে দেখি জলপরী নয় সেটা হাস্যময়ী তুই। চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলি সাঁতার জানলে জলে ঝাঁপ দে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতন জলে ঝাঁপ দিলাম আর তলিয়ে গেলাম সেই মুহূর্তে... তারপর আর কিছু জানিনা।
আমাদের শহর কলকাতায় তুই খুব বেমানান। তোকে হারিয়ে ফেলেছি কেতকি আর একবার যদি ছুটির নিমন্ত্রণ দিস চলে যাব সেই আশায় উড়ো চিঠি লিখলাম।