মান্তিপিসীর কথা খুব মনে পড়ছে। নদীয়ার তেহট্ট গ্রাম থেকে কলকাতা শহরে সদ্য আসা এক শিশু।বাবার যে শহরে চাকরি তাই পুরো পরিবার ঠাই এখন এক চিলতে টুকরো ঘরে। দেশের আটচালা ছেড়ে গাড়ি ঘোড়া ইট কাঠ পাথরে আমি হাঁফিয়ে উঠতাম তখন আমার কাছে একমাত্র ওয়েশিশ এই পিসী। শহুরে কথায় অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছিল।আমার কথায় বন্ধুরা চরম হাসত।কথা বলার ভঙ্গী নাকি অদ্ভুতুরে। আমি যেন ছিলাম হাসির মজার খোরাক।
কথাগুলো এমন ছিল...'মা... কর্পোরেশনের জল চিকন হয়ি গিছে', "আমি না বালতিটা নলের কাছে থুয়ে এয়ছি মা..." এই যাহ হাতের থালখান মাটিতে পড়ি গ্যালো ঝনঝন করি। ''মা এসি যাবে একনি, আখায় একুন আগুন জ্বালছে।'' এই যে শব্দ চিকন, থুইয়ে, থাল, আখা, বুযেঁ, কনট্রোল(রেশন)এমন অনেক কিছু ওরা শুনলেই হাসির ফোয়ারা ছোটাত, বারবার শুনতে চাইত -এই আবার বল আবার বল,আমি বলতাম ওমনি উত্তাল প্রবল সমুদ্র হাসি। আমার অপরাধ বুঝতাম না চোখে জল এসে যেত। ওদের চাপে পিছু হটতে হটতে ক্রমশ আমি কোণঠাসা।
তখন মান্তিপিসি এসে বারবার বাঁচিয়ে দিত। বলে উঠত তোরা এমন কেন করছিস? ও ওর মাতৃভাষায় বলছে, ওর কথা বলার টান ভাষাকে সম্মান কর। কেননা সাত্যকি ওর মায়ের কোলে বসে যে কথা শিখেছে তাই বলছে। ওই একদিন শহুরে ভাষা তোদের শেখাবে দেখে নিস।পিসীকে তখন মনে হত যেন সাক্ষাৎ স্বরসতী..আজ মাতৃভাষা দিবসে সেই পিসী এখন কোথায় আছে! কে জানে!