শতবর্ষী সদরউদ্দিন বয়োবৃদ্ধ লোক,
মলিন তাহার বদন খানি, ঝাপসা দুটি চোখ,
লাঠির ভরে চলেন ফিরেন শরীরে নেই জোড়,
জীর্ণ-শীর্ণ শরীর তাহার, জিরজিরে হাড়গোড়।
বাসা তাহার ভাঙ্গাচুরা, ঘরের ফুটো চাল,
আসবাব তার একটি চকি আর একটি থাল,
ময়লা মলিন কাপড় গায়ে তাতে কতক তালি,
মাথায় জটা, নোংরা শরীর, গায়ে বালি-কালি।
অন্নাভাবে অনাহারে ধুঁকছে পড়ে পড়ে,
শুকনো মুখে রিক্ত চিতে হতাশ্বাস ই স্বরে।
সদরউদ্দিন একলা থাকেন তারই ভাঙ্গা ঘরে,
কারোর সাথে কন না কথা, না কোন দরকারে,
পড়শী যারা আছেন তারা না থাকার ই মত,
নিত্য দিনের একই ব্যাপার আর সওয়া যায় কত?
কাজের দরুন মাঝে মাঝে ঐ ওদিকে গেলে,
দেখি তারে আছেন বসে শূন্য দৃষ্টি মেলে,
কৌতুহলি হয়ে আমি জিগেস করি তাকে,
জ্ঞাতি-স্বজন কে আছে তার, কোথায় তারা থাকে?
বৃদ্ধ সদর দেয় না জবাব ফ্যালফ্যালিয়ে চায়,
মুখের ভাষা থমকে থাকে বিষাদ চোখে ছায়।
কৌতূহলের রেশ টি টেনে নিজের পথে যাই,
ভাবছি মনে হয়তো তাহার আপন কেহ নাই,
মনে মনেই জবাব খুঁজি এমন কেন তায়,
বাচ্চা কাল আর বুড়া কালে মানুষ অসহায়!
একদিন কবে গেলাম ওদিক কি এক দরকারে,
দেখলাম সেথা লোক-লোকারন সদর বুড়োর ঘরে।
সেজে-গুজে আসছে সবাই, পোষাক-আশাক খাসা,
দাওয়াত সবার, আসছে খেতে সদরের চল্লিশা!
সদরের এক ভাইপো না কি করেছে আয়োজন,
লক্ষ টাকা করেছে খরচ, রাখছে লোকের মন।
উত্তরসুরি হিসেবে পাচ্ছে সদরের ঘর খানি,
গ্রামের দিকেও পাচ্ছে ভিটা জমি তার দুই কানি।
বৃদ্ধ সদর ধুঁকছিল যবে খুঁজছিল পরিজন,
সকলে তখন দূরিয়াছে তারে করিয়াছে ছনছন!
মলিন কাপড় ধূলা-বালি গায় করছিল হায় হায়,
অনাহারে পেটে পাথর বাধিয়া কাঁদছিল নিরালায়!
দু মুঠো অন্ন দেয়ার জন্য ছিলনা তখন কেউ,
আজ সদরের চল্লিশাতে লোকের জোয়ার ঢেউ!
বাঁচিয়া থাকিতে এতটুকু তারে কদর করেনি কভু
মরিবার পরে যে যাই বলিছে সকল ই শুনিছে প্রভু।
মরিবার পরে মুখে মুখে আজ সদরের কত ভাও!
বাঁচিয়া থাকিতে দূরিয়াছ তারে, আজ কেন গুণ গাও?
পাই বড় লাজ, ভাবি আমি আজ, কেন যে এমন হয়?
জীবিত জনের কদর করে না, মৃত নিয়ে পড়ে রয়।
জীবিত যখন, অবহেলা করে কটু কথা কত কয়,
মরিবার পরে স্তব তার কাজের তো কিছু নয়!
কাছের যে জন আনাদরি তারে, কটু কথা কত কই,
সে জন যখন ছাড়ি চলে যায়, একেলা পড়িয়া রই।
হারায় যে জন, ব্যথিত সে মন, ভুল তাহা নিশ্চয়,
বাঁচিয়া থাকিতে করিয়ো কদর, মরিবার পরে নয়!