অজানা সীমারেখা
----------------
দূরের মাঠে যত দূর চোখ যায়
কেবলি দেখি কুয়াশা ধূসর দিগন্তের রেখা
মাঠের ভিতরে কাঁদা-কাঁদা জমিতে  কৃষকের পায়ের  ছাপ;
এ ছাপ যেন এক একটি স্মৃতি চিহ্ন স্নায়ুর গোড়ায়--
মনে হয় মোমরেজ যায় মাঠ দিয়ে
একমাঠ বাতাস তার গা'য়,
সেই সে বিলের মাঠ;মোমতলা,হেলনার বিল
চোখে ভেসে এলে প্রাচীন মানুষেরা কথা কয়,
স্মৃতি কাতর এই আমার
কতকাল যে হলো না বাড়ি যাওয়া!
এ শহরের মানুষের ঘাম,স্ব-শব্দের বিরাট স্বর সংগ্রাম
আর পিঁপড়ার মত পরিচিত সারি ঠেলে ঠেলে
বাসে ঝুলে কদাচিৎ গাল-মন্দ খেয়ে পাশের যাত্রীর
আমি কিনি কষ্টের শহরে কষ্টের সময়,
তারপর  নি:শব্দ আসমানে ছুটে চলা তারার মত নিরব বেপরোয়া জীবনের গতি ভুলে কিছু সময়
কাটাতে যে হবেই আমাকে একা একা!
যাবো কোথা?
আমাদের শৈশবের গ্রামের পুকুরটিতো আর নাই
ওখানে ভরাট মাটি,বিলীন সবুজ ঘাস,
মানুষের বাড়ি কয়েক সারি;
মনাদের বাগ আর নাই
দিনের ভূতুড়ে আলো-আঁধার ঠেলে
ভয় আর আনন্দ মেশানো খেলা হত কত
সেখানে  বেলা অবেলায়,
ও পাড়ার বশিরের বাড়ির একজন মাত্র মানুষ কি আছে যার গায়ে  অতীতের গন্ধ মেলে?
আর তার চোখে তাকালে তৃপ্তি ভরা স্মৃতি মনে আনে অনায়াসে পুরোনো দিনের?
সে রকম নেই একজনও আর;
কি অদ্ভুত, সব নতুন মুখ!
আমি নাকি এ গ্রামের বাসিন্দা
অথচ এরা আমাকে চেনে না, আমিও তাদের----
চকচকা চেনা বড় মাঠটি ছোট হয়ে গেছে
চারিদিকে নতুন মাঠের সীমারেখা এঁকেছে
অহরহ নতুন নতুন ছাদ বাড়ি,মানুষের এত চাপ!
তাই কৃষকেরা চোখ দিয়ে সবুজ দেখে না অত
আর ফসল জোয়ারেও তাদের চলে না পেট তেমন; হাভাতে বাজারের দোষে, আর কিছু দাদন ব্যাবসা শোষণ করে তাদের রুজি-রোজগার।
অন্য পেশা ধরেছে তাদের ছাওয়ালেরা;
সেই কৃষি নির্ভর রোজগার আর নাই;
আজ যেন কিছু নাই,কেউ নাই মা-বাপ,দাদা-দাদী,চাচা-চাচী, গ্রামের তাবৎ মানুষ নাই;আমিও আজ নাই ; কোন এক সীমারেখা দিয়ে সেখান থেকে আমাকেও বিদায় জানায়,
অথচ এই শহরে থাকা আমার জন্য হয়েছে বিষের মত ভয়াবহ; যেখানে খুন-গুম, ধর্ষণ,ছলচাতুরী, ছিনতাই অহরহ----
এখানে বড় বড় সূউচ্চ দু'দালানের মাঝে কত অজানা লাখ-লাখ পাতলা চেরা সুড়ঙ্গ;
সে সুরঙ্গ বেয়ে গায়ের রহিমার কণ্ঠস্বর বেজে ওঠে
"মিয়া ভাই, এ শহরে এখানে আমি বেশ ভালো আছি,
বহুকাল ধরে ভালো আছি, কিছু জোটেতো খাবার আর শাড়ি,মেটাতে পারি নিজেদের প্রয়োজনটুকু কোন মতে।"
ওর কন্ঠে ছোট-ছোট ভাঙা-ভাঙা শব্দের উচ্চারণ!
মানুষ আর দালানের চাপে ওর এই বেঁচে থাকা বেশ নিদারুণ!
অক্সিজেন স্বল্পতা মনে হয় ওর রক্তে, কারণ সবুজতো নেই এইখানে, কোনখানে----সব কংক্রিট, ইট,লোহা পিচ কালো।
ও আমাদের গাঁয়ের প্রাচীন মেয়ে,কাজের খোঁজে এ শহরে বহুকাল ধরে, আমিও এ শহরে বহুকাল আছি ওর মতো---
গ্রাম ছেড়ে এ অস্থির শহরে পাতলা ঘুমে স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন একটু ঘুমালে;
শহুরে রাজনীতির রং মেখে দেখি এ সময়ে
গ্রাম্য রাজনীতির কূটচক্রে  যারা পিছে ফেউ ধরে
সেই মানুষেরা আজ কাহিনী সাজায়ে বিচার করে,
আর ভুল সাজা পেয়ে
পাগলের মত চিৎকার করে
আমাদের গাঁয়ের ছেলে
আজ ভয়ে-ভয়ে
অপমান আর লজ্জ্বায়
ঐ লাজুক ছেলে ফরিদ আর কোথাও বেঁচে নাই,
তাকে বেঁধে রেখেছে জীবন ও মৃত্যুর মাঝে অজানা  সীমারেখা দিয়ে বেদীন সময়;
এখন কোথাও শহর নাই, এখন কোথাও গ্রামও নাই
আমি আজ ফরিদের মত অনন্যোপায়;
যাবো কোথায় আজ একটু প্রশান্তির খোঁজে?
আমি কি বেঁচে আছি নাকি ফরিদের মত মৃত প্রায়!
আমাকেও তাড়া করে সমগ্র বাংলাদেশ ধরে নিদারুণ অস্থির  সময়।