বসন্তের মত ব্যথা
---------------
এমন এক বসন্তের দিন বহুদিন আগের কোন দিন
জেগে ওঠে মনে, দূর শিমুলের ডালে আর তার লাল ফুল বেয়ে-বেয়ে যখন নেমে আসে চেনা নাছোড়বান্দা স্মৃতির শকট, যেন এই গাছ জন্মেছে কত যে বছর আগে আমার সাথে একই ভাবে অঙ্কুরোদগমে।
কোন এক ভোরে এই গাছ চোখে পড়ে
দূরের মাঠে-একা- নিরাপরাধ তপস্বী সাধুর মতো যখন বিকশিত করেছে ধ্যানের মত সৌন্দর্য তার ডালে আর ফুলে, আর বিভ্রম স্মৃতির দূয়ারে দিয়েছিল একটি টোকা ব্যথা জাগাবার;
কি সে ব্যথা! জানি না আমরা তা;
অজানা কারণের মতো কবিরা মরে গেলে যেমন কাঁদে না রাত,সুন্দরী অভিনেত্রীর শরীর ধ্বসে গেলে যেমন কাঁদে না বিকেল, শ্রমিকের মৃত্যু হলে যেমন হয় না ম্লান কোন রোদ্দুর দূপুর।এবং এই সব পৃথিবীর উপাদান-স্মৃতি-সংঘ কিছুই থাকে না থেমে, চলে সব দিন-রাত দূর সময় অবধি, অজানা কালে; চলে সব,অনন্য রহস্য সব বুঝি না কিছু।
যদিও এই চলার ধ্রুবগতির কাছে আমাদের জন্ম ঐ শিমুলের সাথে---যেন দূর গাছ জেগে থাকে একটা সরব বসন্তের সাথে; স্মৃতির জাগরুক--স্মৃতি স্তম্ভ;
জন্ম অথবা মৃত্যুর সময়ের স্বাক্ষ্য।
যেমন কোন এক ভোরে অথবা বিদর্ভ কালে মরেছিল কোন এক কৃষক কি করে অথবা কোন এক বিরাট বিবৃতি দিয়েছিল কিনা রাজাধিরাজ, আমাদের মনে নেই তা, কালের গর্ভে হারালো সময় বলে;
সব ঋতুর সাথে বসন্তও মরে যায়, মরে যায় আমাদের দূরের ঐ শিমুলের লাল স্মৃতি সব, পৃথিবী নিরুপায় হয়ে সব ব্যথা করে খালাস।
সব মরে গেলে যখন থাকে না জেগে একটুও ব্যথা,তখনই পৃথিবী কথা কয় প্রথম ও শেষ বার তার বুকের ভেতর নিয়ে ভয়ার্ত বিপুল ব্যথা আর যত ব্যথা ভরা উপাদান সব, যেমন: বেদনার যৌবন সুরভিত মৌ-মৌ, কবি, অভিনেত্রী, রাজা, রাজ্য,সভ্যতা, সাধু, ধ্যাণ-জ্ঞান, ধর্ম আর মরুভূমি, বিজন প্রান্তর, নিবিড় বন, পাহাড়, অরণ্য, ইতিহাস আর দর্শন--- অত:পর সব মরে যায়।
এইভাবে সব মরে গেলে বসন্তও থাকে না আর, তাই জাগে না আর কোন ব্যথা, থাকে না আর কোন পার্থিব ব্যথা অথবা ব্যথা জাগানোর আর কোন প্রিয় উপাদান।