[ শৈশব ও কৈশোরের কবিতা-ছয় ]
      পরিবেশ
    -অসিত কুমার মন্ডল

পরিবেশ তুমি মোরে হানিয়াছ কষাঘাত!
নত মস্তকে বহিতেছি তাই অভিসম্পাত!
তুমি অভিযান ক’রেছো শুরু প্রতিভার;
কষাঘাতে বিদগ্ধ করি সৃষ্টির সঞ্চার!
তুমি কণ্টক বিঁধি করেছো প্রত্যাহত
মোরে! তব পরিঘাতে তবু অক্ষত!
করেছো আটক অসীম ধৈর্য্যের যাতাকলে;
দহিতেছো তাই তিলে তিলে পলে পলে!
যেন ধরেছো পাঞ্জা মম দুর্বল হাতে;
পারি না তব দুর্জয় শৌর্যের সাথে!
শাসিতে যাই তব পারি না দুঃশাসন;
দুর্দমনীয় উড্ডীন রেখেছো বিজয় কেতন!
হরিয়া মম শক্তি সাহস অবিচল ক’রে;
বেঁধেছো লৌহ-নিগড়ে নিরাশায় মোরে!

যে পথে যাই সে পথে তুমি কাঁটা;
অক্ষি গোচরে হেরি বেড়া করি আঁটা!
অন্ধত্বের অভিশাঁপে যেন মরুপথে পড়ি;
তপ্ত বালুকায় বিদগ্ধ হয়ে ছটফটি মরি!
শিরে মোর ভরেছো তুলি কলঙ্ক ডালি;
নিশ্চিহ্ন হেতু দিয়েছো যেন হুতাশন জ্বালি!
তব অনলে দহিছে মম সহিতে পারি না ব্যথা;
বিছায়েছো মম চারিধারে এক বিস্তৃত মায়ালতা!
ঘিরেছে সারা অঙ্গজুড়ি আমি দিশেহারা;
বহিতে পারি না এ ভার তবু বয়ে হই সারা।
অকুল পাথারে যেন ডুবাইতে মোরে;
ঠেলে ফেলি নামিয়েছো হস্ত ধ’রে।
অকুলে সন্তরি আমি পাই না-তো কূল;
হাবুডুবু করি শুধু হতাশায় আকুল!

দারিদ্র দাহনে খর্ব করেছো আমারে;
হানিয়াছো প্রলয় আঘাত হৃদয়-দ্বারে!
ছুটিয়াছো তুমি যেন মোর প্রতিকূলে;
হরিয়া স্পৃহা যতো প্রনাশি সমুলে!
বৃক্ষের ঝরা পত্রসম ধিকৃত হয়ে আজি;
তব প্রতিকূলে যুঝিতে তাই রেখেছি প্রাণবাজি!
পরিবেশ তব গুণাবলী ওগো গাহিব না আর;
মম জীবনে ভরিয়েছো শুধু অসম্মান বার বার!

তোমার নিকৃষ্ট-মোহে কতো জ্ঞানধারী;
হয়েছে ধ্বংস কতো প্রতিভার অধিকারী।
আশাহত হ’য়ে তাই ঘোরা-ফেরা করি;
সেজেছি কৃতদাস তব পরিবেশ অরি!
পৌষ-১৩৯৫ বঙ্গাব্দ।

[ কাব্যগ্রন্থ- শৈশব ও কৈশোরের কবিতা-এর অন্তর্ভূক্ত]