এক

গল্পটা জনৈক নানার কাছ থেকে
শুনে ছিলাম কয়েক বছর আগে ।
বয়স তার আশি ছুঁই ছুঁই।
উনিশ'শ একাত্তরের তিন এপ্রিল
নানার বয়স তখন ত্রিশের একটু বেশি।
ছবক আলীর পাঁচ বছরের বড়ো।
রহমত গঞ্জের হিন্দুপাড়ায় --
ছবক আলীর এক ছোবলে
সে দিন তিনশত হিন্দুর প্রাণ
বিশ মিনিটেই নি:শেষ!

নানার চোখের সামনে--
তিনজন ষোড়শী কন্যাকে
ছবক আলীর স্বয়ংক্রিয় ধর্ষণ!
তারপর তাদের বিবস্ত্র ক'রে
লজ্জাস্থানে বেয়োনেট দিয়ে--
খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা!

নানা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন।
তিনি জীবনে কখনো কোন অন্যায় করেননি
তবে এই অপরাধ চোখের সামনে
সংঘটিত হ'লে পাথর প্রায় তিনি!
অস্ত্রের সামনে নীরব প্রতিবাদ ছাড়া--
আর কি করার থাকে ?
নানা প্রায় দু'ঘন্টা সংজ্ঞাহীন।
তারপর তার জ্ঞান ফিরলে--
নানা দেখল, ছবক আলী
আর তার দলবলের নির্মম হত্যার
ফসল নিষ্প্রাণ দেহগুলি--
রক্তাক্ত লাল পদ্মের মতো ফুটে আছে !
কিন্তু রক্তের স্রোত গড়িয়ে যাচ্ছে
প্রান্তরের সীমানা ধ'রে--
দিগন্তহীন নীল আকাশের অসীম সীমানা বরাবর!

                  দুই
স্বপ্নের মতো হাজারো নারকীয় কাহিনী
একের পর এক ঘটল নয়মাস ।
নানা চোখ-কান বুজে--
নীরবে সবই সহ্য করলেন ।
অবশেষে বিজয় এলো ষোল ডিসেম্বর।
কিন্তু, এ কি হ'লো ?
ছবক আলীর দলবল সবাই বিজয় উৎসবে!
হায়রে ইতিহাস ! ইতিহাস কি বেইমান ?
স্বাধীনতা বিরোধী ছবক আলী
আর তার দলবল মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেলো।
কি আআশ্চর্য সেলুকাস !
এতো অন্যায়ের পর ও এই পুরস্কার?

নানার ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ স্বপ্ন।
অথচ আশিতিপর বৃদ্ধের ভাগ্যে--
এখনো একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড ও জোটেনি ।

                        তিন

এখনো সেই মসজিদটি আছে
নানা প্রতিদিন যেখানে নামাজ পড়তেন।
আজো সেখানে নামাজ পড়ছেন ।
ছবক আলী ও এই মসজিদে আসে।
এখানে জামাতে শরীক হয়।

নানা ছবক আলীকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক!
শত শত মানুষের হত্যাকারী--
জালেম ছবক আলী এই মসজিদে!
নানা বলে, ছবক আলী?
তুমি কি খোদার ভয় করো ?

ছবক আলী বলে --
নামাজ পড়তে হয় পড়ি।
মসজিদে   আসতে হয় আসি।
নানা বলে --
তুমিতো আজ সোনায় সোহাগা
শাঁপে বর পেয়েছো!
কিন্তু অতীতের পাপের  হিসাব কি করেছো?
ছবক আলী  ক্রোধান্বিত হ'য়ে বলে--
সারা জীবন ন্যায়ের  পথে থেকে
কি পেয়েছেন আপনি?
জীবনে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড ও পাননি।
আপনার আল্লা, ভগবান, গড, খোদা
সবাই কানা হ'য়ে গেছে --
এ জন্যে আপনাকে কেউ দেখে না!

নানা বলে--ছবক আলী
একদিন তোমার পাপের হিসাব হবে
কেয়ামতের ময়দানে।
সে দিন যদি দেখা হয় --
আমার আল্লাহর চোখ আছে কিনা
তুমি দেখতে পাবে।
তার নুরের জ্যোতিতে--
তোমার চেখের জ্যোতি অন্ধ হবে।

তবে শোন ছবক আলী--
অন্যায়ের অহংকার
দুনিয়ায় বেশিদিন টিকে থাকে না!
যে কয়দিন আছো সে কয়দিন !!    
   তাং-- ০৪/১২/১৭


[কবিতাটি-প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-“হাজার বছরের স্বপ্ন”-কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত। বইটি রকমারি ডটকম/বইফেরীতে পাওয়া যাবে। সরাসরি লেখকের কাছ থেকেও নিতে পারেন।]