জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অন্ধকার ঘরে আমি একা; বন্দী আমি।
আমার অপরাধ- আমি তোমাদের অধিকারের কথা বলেছিলাম
বুটের উদ্ধত গর্ব পিষে ফেলতে চেয়েছে
তোমাদের প্রতি আমার ভালোবাসা।
প্রতিবার আমি প্রতিজ্ঞা নিয়েছি প্রতিফলিত রংধনুর রঙের মত
আমি চাইনি তোমাদের জন্য করুণা, চেয়েছি মর্যাদা।
পায়ে ছিল ভারী শিকলের ঝঞ্ঝা, রক্তমাখা বেয়নেট উদ্যত
শয়তানের হাসিতে কেঁপে উঠত বন্দীশালা
ওদের নিষ্ঠুরতায় আমার আর্তনাদ
ওদের কানে নগ্ন সঙ্গীতের সুর হয়ে বাজত
দিনের পর দিন ওরা আমাকে ঘুমাতে দেয়নি
চোখের পর হাই ভোল্টের লাইট জ্বালিয়েছে
হ্যাংগারের মতো ছাদের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে
আমার শরীরটাকে ওরা পেটাতে পেটাতে যখন হাঁপিয়ে উঠত
নাকমুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ত
তখন ওয়াশ করতে চৌবাচ্চার মধ্যে চেপে ধরত
মনে হতো যেন বুকের ছাতি বোমার মতো ফেটে পড়বে
পৃথিবীর সমস্ত বাতাস শুষে নিতে চেষ্টা করতাম
চোখে দেখতাম বর্ণালী আলোর ছটা।
মৃত্যুর প্রার্থনা করতে করতে জ্ঞান হারাতাম
বৈদ্যুতিক শকে লাফিয়ে উঠে জানান দিতাম বেঁচে আছি
তখন আমি কান পেতে শুনতে পেতাম
ঐ পাপের রাজত্বের মরণের ঘণ্টা ধ্বনি!!
গুমোট বাতাস এসে কানে কানে বলে যেত
‘ অপেক্ষা কর, একদিন তোমার সময় আসবে’
তখন রক্তাক্ত ঠোঁটে কান্নাকে বেঁধে রেখে মুক্তির চারা বুনেছি
সময়ের স্রোত তাদের টেনে নিয়ে গেছে ভাগাড়ে
আর আমি, স্বপ্নের মশাল ধরিয়ে বিজয়ের সুসংবাদ এনেছি তোমাদের জন্য।
এখনো যেন রক্তাক্ত যন্ত্রণার স্মৃতিগুলি প্রখর উজ্জ্বলতায় ভরা
রক্তিম ক্ষতচিহ্ণে আঘাতে নোয়ানো পিঠে চাবুকের আলপনা
কেননা আমি শুধু তোমাদের অধিকারের কথা বলেছিলাম
করুণা নয়, তোমাদের মর্যাদার জন্য লড়েছিলাম।