ইসলামের পতাকা তুলে ধরা হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো
আল্লাহর বানী উচ্চারিত মুখে কস্টটেপ আঁটা
পিছমোড়া করে বাঁধা
থেঁতলানো আঙ্গুল, বৃদ্ধাঙ্গুলিতে জমাট বাধা রক্ত।
চোখ কালো কাপড়ে শক্ত করে বাঁধা, দৃষ্টি আঁধারে ঢাকা।
উর্দি পরা একটা লোক তার হৃদয়ের আলো নিভিয়ে ফেলতে
দগ্ধ সিগারেটের টুকরো নেভানোর মতো করে
বুকের উপর দাঁড়িয়ে বুট দিয়ে মাড়িয়ে দিয়েছে!
বুকে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাকায়
আঙুর ফলের মতো টসটসে ফোসকা উঠেছিল সেখানে।
মানুষটি অবাক হয়ে উর্দি পরা লোকগুলোর দিকে চেয়ে আছে
হাসি হাসি মুখ তার; তীব্র ব্যথার কোন চিহ্ন দেখা যায় না।
সে মনে মনে উর্দি পরা লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল
‘তোমরা অন্ধকারের মানুষ
সবার চোখে অদৃশ্য কালো পর্দা টেনে দিয়েছ
তাই তোমাদের কুকীর্তি কেউ দেখতে পায় না।
কালো টাকায় মোড়ানো সামিয়ানার নীচে
শয়তানের জলসা শুনে শুনে তোমাদের জীবিকা চলে
অন্যায় অবিচারের দুর্দান্ত দাপটে আদিম সভ্যতা ফিরে এসেছে
তোমাদের দিন একদিন শেষ হবে আসবে নতুন ভোর’।
সত্য ও ন্যায়ের জন্য গনগনে আগুনের উপর দিয়ে হাঁটে যেতে হয়
ইসলামের পতাকা হাতে চলতে গেলে ফাঁসির মঞ্চ স্বাগত জানায়
রক্ত ঝরা পথে আসে ইসলামের মুক্তি
হাজারো আত্মত্যাগে লেখা হয় বিজয় গাঁথা
যারা স্বপ্ন দেখতে জানে....!
তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই বিজয়ের মহাকাব্য।
গভীর রাতে তাকে অজানায় নিয়ে চলছে উর্দি পরা লোকগুলো
ভারী জীপ গাড়ি চলার স্পষ্ট আওয়াজ হঠাৎ থেমে যায়
জীপ থেকে তাকে টানতে টানতে নামানো হলো জন্তু জানোয়ারের মতো
রাস্তা থেকে পরিত্যক্ত ক্ষেতের কাছে সে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল
একজন চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল
আরেকজন এসে মুখের কস্টটেপ খুলে দিল
চোখের বাঁধন খুলে দিল।
আরও একজন বলে উঠলো, এবার তোকে মুক্তি দেব
সাথে সাথে টর্চের আলো পড়ে চোখ ধাঁদিয়ে গেল তার
তাক করা রাইফেল চকচক করে উঠলো
সে সব বুঝে নিলো নিমিষে।
মানুষটি চিৎকার করে বলে উঠলো
‘আমি ফাঁসির মঞ্চে যেতে ভয় পায় না। তোমরা এখানে এনেছ কেন?
আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে তোমাদের এত ভয়!!
একজন নিরস্ত্র মানুষকে মারতে এতগুলো লোক অস্ত্র হাতে!
তোমাদের দেখলে আমার লজ্জা হয়!
জেলখানার বন্ধ প্রকোষ্ঠে অনায়াসে মারতে পারতে!!
এত পরিশ্রমের কি দরকার ছিল?
একজন উর্দি পরা লোক হা হা শব্দে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল
আমরা একটু হাতের নিশানা প্র্যাকটিস করতে তোকে এখানে এনেছি।
মানুষটি দৃঢ় কণ্ঠে শান্ত স্বরে বলল, ‘আমি মরতে ভয় পায় না।
তোমাদেরও একদিন মরতে হবে!
আর কতদিন তোমরা তোমাদের আত্মা শয়তানের কাছে জিম্মি রাখবে
মহান আল্লাহকে ভয় কর; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল’।
উর্দি পরা লোকগুলো খানিক হতচকিত হয়ে গেল
চোখে তখন তাদের প্রমোশন-পুরষ্কারের ঝলসানো বিজ্ঞাপন
নিমিষেই বন্দুক গর্জে উঠলো, পরপর কয়েকটি গুলির শব্দ।
ভয়ার্ত পাখিগুলো শব্দ করে ডেকে উঠে থেমে গেল
নিস্তব্ধতা ভেঙে শব্দটা আকাশ ফাটিয়ে পৌঁছে গেল ছোট্ট জনপদে
ঘুম ভেঙে কয়েকটি মানুষ
ভয় পেয়ে কৌতূহলে সেদিকে এগিয়ে গেল
তখনও ভারী বুট, বাজখাঁই গলার আওয়াজ ভেসে আসছে
ভারী ভারী টর্চের আলো দেখে বুঝে নিলো সবাই কি ঘটে গেল।
সেই যুবকের মা এখনো তার জন্য কাঁদে!
সেই মা তার জন্য এখনো থাকে অপেক্ষায়।
সব আলো ছাপিয়ে তারা দেখতে পেল একটা আলোর ফোয়ারা
আকাশের দিকে উঠে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল ঘরে ঘরে
পত্রিকার পাতায় সেই সংবাদ পাওয়া গেল কি গেল না
কেউ খোঁজেনি।
অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতনে যখন মানুষের দু:স্বপ্নের রাত
সেখানে সে স্বপ্নের ভেতরে আসে সেই আলো হয়ে
নতুন শিশুর চোখের তারায় তাকে দেখা যায় সে বেঁচে আছে
সুবর্ণ সময়ের অপেক্ষায় সে, আবার ঝলসে উঠবে
ইসলামের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে সে চলে গেছে; জ্বলবে অনন্তকাল।