ফাঁসির রশ্মি ধরি –
সত্য-সেনানী আসে বিভীষিকা-ভরা পথ অনুসরি'।
বিপ্লবীদের খুনে রাঙা পথের লাল পদাঙ্ক রেখা –
ধরিয়া চলিছে পথিক, আহত পদতল খুনে মাখা!
আঁধার আকাশে কালো নীরন্ধ্র মেঘরাজি গর্জায়,
ঘনঘন পড়ে বাজ পথে, নভে বিদ্যুৎ চমকায়।
কণ্টকাকীর্ণ সংকীর্ণ পথে সেনানী সে ছুটে চলে,
যত ঘিরে আসে পথ-সঙ্কট, চলে তত নববলে।
বুকের সত্য আগুনের শিখা ছুঁয়েছে গগন-দ্বার,
অসত্য, পাপ, জুলুম, অবিচার জ্বলে হবে ছারখার!
লক্ষ্যের পানে ছোটে মুজাহিদ, হাতে লয়ে নিজ প্রাণ,
লক্ষ্য মানবজাতির মুক্তি, তার চির কল্যাণ!
লক্ষ্য স্বাধীন, মুক্ত জীবন – জুলুমের অবসান,
জালিমের কালো থাবা ভেঙে দেবে নিখিল বিশ্বে ত্রাণ!
লক্ষ্য ফোঁটাবে পীড়িতের অশ্রুসিক্ত বদনে হাসি,
জাতির সুবহে সাদিক আনিবে জুলুমের আঁধার নাশি'।
বিভীষিকাময় কুফর সহসা এসে তার সম্মুখে –
আগলে দাঁড়ায় পথ, আতঙ্ক অনুসারীদের চোখে!
খঞ্জর লয়ে কুফর, আরক্ত চোখে – তার পথ রোধে,
হুঙ্কার হেঁকে থামাইতে চাহে সত্যের মুজাহিদে!
নির্ভীক চোখে, প্রসন্ন মুখে সেনা তার পানে চায়,
কোরানের জ্যোতি বারেবারে তাঁর চোখেমুখে চমকায়।
বলে – “বিশ্বের উৎপীড়িতেরে দিতে আসিয়াছি ত্রাণ,
মুক্তির হাসি ফোঁটাব ওদের মুখে, - যায় যাবে প্রাণ।
মোর পশ্চাতে ঐ অগণন জনগণ কেঁদে মরে,
নিখিল উৎপীড়িতে ত্রাণ দিতে খোদা পাঠায়েছে মোরে!
মারিবে আমায়? – আমি তো অমর, অযুত আত্মা মাঝে –
জাগিয়া উঠিব! – বিপ্লবী মাঝে র'ব চিরকাল বেঁচে!”
পিছনে অযুত কণ্ঠে নিযুত হাহাকার ওঠে ধ্বনি',
কহিল পথিক – “আমি গেলে পুনঃ আসিবে নব সেনানী!”
বিকৃত অট্টহাস্যে কুফর, পথিকের সম্মুখে –
কতক মাথার খুলি ফেলে দিয়ে ব্যঙ্গের চোখে দ্যাখে!
কহে – “পুরাতন পথিক উহারা! – দেখিয়াছ পরিণাম?
আহাম্মকের সাহস দেখায়ে অকালে হারাল প্রাণ!”
পথিক উঠিল মৃদু হেসে – চোখে শঙ্কার কণা নাই!
বুকে চেপে খুলি কেঁদে কহে – “আমি হেন পরিণামই চাই!
মরেনি ক', মৃত্যুঞ্জয়ী – রয় যুগ যুগ ধরে বেঁচে,
ওরা সঞ্চারে নতুন জীবন নব পথিকের মাঝে।
সত্য পথের বিগত পথিক , ওরাই ডেকেছে মোরে,
চির-মুক্তির পথ দেখায়েছে, - ছুটি সেই পথ ধরে!”
বিক্ষত পদ, কাঁটাভরা পথ তবুও সে দ'লে চলে,
আঘাত-চিহ্ন দেহে খুন ঝরে, তবু চলে বেখেয়ালে।
সহসা প্রবল আঘাতে সেনানী ঢলে পড়ে পথ 'পরে,
কুফরের আঘাতে প্রাণ গেছে নিভে, তবু মুখে হাসি ঝরে!
নতুন পথিক আসিয়া তখনি ধরে তুলে লয় বুকে,
সমুখে মুক্তি-তোরণে দাঁড়ায়ে হাঁকে মহাকাল হাঁকে!
পথিকই র'চে ইতিহাসে পথ, র'চে না পথিকে পথ,
সেই পথ বেয়ে যুগে যুগে আসে মুক্তির জয়রথ!
অগ্রপথিক ব্যগ্র চরণে চলে, কভু নাহি থামে,
ঝঞ্ঝার বেগে ছোটে – সহস্র আঘাতে সে নাহি দমে!
সার্থক তার মরণ –
যার প্রাণদান করে সহস্র প্রাণের উদ্বোধন!
প্রাণ দিয়ে কোটি আত্মা জাগায়, - চিরঞ্জীব, ওরা অমর,
পীড়িত আত্মা নব প্রাণ পেয়ে রচে জালিমের কবর।
আঁধার কারায় যেথা নিপীড়িত সত্য-আত্মা জাগে,
বধ্যভূমিতে মুক্তির পানে শহিদী আত্মা জাগে,
যেথা শহিদের পবিত্র খুন ক্রমাগত লিখে চলে –
নিখিল মানবজাতির মুক্তি-বার্তা এ ধরাতলে!
পিষ্ট হতেছে মজলুম যেথা জালিমের পদতলে,
নতুন পথিক, সত্য সেনানী সেই পথ ধরে চলে।
ক্রমাগত সেনা হাঁকে –
“পীড়িত আত্মা! ঘুমাস নে আর, ছোট এইবেলা জেগে।
কাঁদিছে জুলুমে অগণিত প্রাণ আঁধার ধরার বুকে,
মুক্তি-সূর্য ওঠে শহিদের খুনে রেঙে যুগে যুগে!
উৎপীড়িতের মুক্তি এসেছে কবে সংগ্রাম বিনে?
নতুন প্রভাত আসে সত্যের সেনাদের প্রাণদানে!”
মুক্তি-পাগল জনতা সকল আগল ভাঙিয়া ছোটে –
পথিকের পিছে; মুক্তকণ্ঠে মুক্তির শোর ওঠে!
যেথা রাজপথ শত সহস্র শহিদের খুনে রাঙা,
সেই পথে আসে ভবিষ্যতের মুক্তি-পাগল সেনা!
চোখে জ্বলে বিদ্রোহের অনল – ওরা বিপ্লব ঘোষে,
জানে, খুনরাঙা পথ বেয়ে যুগে যুগে বিপ্লব আসে।
বঞ্চিত বুকে শত বছরের সঞ্চিত যত ব্যথা –
ক্রোধে পরিণত হয়ে দাবানল সম জ্বলে ওঠে সেথা!
জালিমের মসনদ পদাঘাতে ওরা করে চুরমার,
বুকের রক্ত ঢেলে রোখে শত অন্যায়-অবিচার।
বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত মুজাহিদ –
যুগে যুগে প্রাণ দিয়ে ওরা আনে মানবজাতির হিত!
হাসিতে হাসিতে প্রাণ দেয় ওরা নির্যাতিতের তরে,
জীবনের নয়! – উহারা শহিদী মৃত্যু সাধনা করে!
কুসুমকীর্ণ পথে কভু ঐ বিপ্লব নাহি আসে,
কাঁটাভরা পথ বেয়ে যত বিপ্লব এল ইতিহাসে!
শান্তি এসেছে পৃথিবীর বুকে কবে বিপ্লব বিনে?
শত শহিদের খুনে রাঙা পথে আসিয়াছে ইসলামে!
বিপ্লব আনে মানবমুক্তি, উৎপীড়িতের ত্রাণ,
সেই বিপ্লব আনিতে সহস্র বিপ্লবী দেয় প্রাণ!
সেই বিপ্লব আনে অগণিত পীড়িতের মুখে হাসি,
সে হাসি ফোঁটাতে হাসিতে হাসিতে বিপ্লবী পরে ফাঁসি!
সত্যের তরে, নির্যাতিতের তরে যারা দেয় প্রাণ!
যুগে যুগে রয় কালের পাতায় অক্ষয়, অম্লান!