ফিরদৌসের ফুল সব পৃথিবীতে হয়ে আসে নারী,
স্বর্গ-সুষমা ছড়ায়ে দিয়াছে বিশ্বভুবন জুড়ি'!
ইহাদের রূপ সুষমায় আলোকিত হয়ে ওঠে ধরা,
শক্তি, সাহস দিয়া ঘুচায়েছে পুরুষ জাতির জরা!
শৌর্য বীর্য দেখাল পুরুষ রণভূমে যুগে যুগে,
ঐ সাহসের দীপ-শিখা দিল নারী জ্বেলে তার বুকে!
নারীই শানিত করে যুগে যুগে পুরুষের তরবার,
জালিম শাহের প্রাসাদ সে নর করে তাই চুরমার!
যত বড় বড় বিজয় ছিনিয়ে আনে নর অভিযানে,
সব সে বিজয় ভাস্বর হয় নারীর আত্মদানে!
সৌন্দর্যের আধার এ নারী ধরণীর অপ্সরী,
পৃথিবীতে যত রূপ আছে তাতে দিল রূপ সঞ্চারি'!
গুলবাগিচায় কত ফুল ফোঁটে – অপরূপ মনোহরা,
নারীরূপ ওরা চুরি করে জানো হয়েছে নজরকাড়া?
গাছে গাছে যত ফল ফলে নারী-রূপ-সুধা ধার করে,
কোমল কণ্ঠ চুরি করে পাখপাখালিরা গান ধরে!
নদী বয়ে যায় কুলুকুলু ধ্বনি তুলে সাগরের পানে –
নারী কন্ঠের হাসি চুরি করে বহে সে আপন টানে!
নারী-রূপ ধার করে প্রকৃতি হয়েছে সুশ্যামল,
তাহাদেরি রূপে বিশ্বভুবন করে ওঠে ঝলমল!
নর সে হৃদয়হীন, পশুসম, নখর-দন্ত লয়ে –
ঝাঁপাইয়া পড়ে মানুষের 'পরে – হানাহানি আনে বয়ে।
এরা নিষ্ঠুর, নির্মম, - তাই জনম দিয়া সে নরে –
নারীই করিল মানুষ পুরুষে ভালবাসা দিয়ে ঘিরে!
এই নিষ্ঠুর ধরণীর বুকে নারী না আসিত যদি,
ঝগড়া-ফ্যাসাদ, বিবাদ চলিত নরে নরে দিবারাতি।
নারী ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক – যদি না আসিত ভবে,
ধৈর্য, সহ্য, প্রেম না শেখাত, তবে সে পুরুষ কবে –
হাসিল করিত আপন স্বার্থ আনিয়া সে হানাহানি,
মানব বংশ ধ্বংস করিত করিয়া সে খুনোখুনি।
নারী শেখায়েছে ভালবাসা-প্রেম, তাই তো নিঠুর নরে –
ভালবাসিতে সে শিখেছে তামাম স্রষ্টার সৃষ্টিরে!
নরের জনম সার্থক হয় রমণীর প্রেম লভি',
প্রেম পেলে ওঠে নরের আকাশে সৌভাগ্যের রবি।
নারীই দিয়াছে হৃদয় উপাড়ি পুরুষের পদতলে,
নিষ্ঠুর নর বোঝে না'ক মন, গেল সে হৃদয় দ'লে!
নারী স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, দেবী-সম জ্ঞান করি,
প্রণাম করিয়া করজোড়ে তার পদতলে লুটে পড়ি।
নারীর মিলনে, নারীর বিরহে নর হইয়াছে কবি,
নারী না আসিলে জলে যেত তার কাব্য-কবিতা সবি।
কবির কবিতা অচল নারীর হৃদয়ের প্রেম বিনে,
শূন্য তাহার অনুভূতি সব, ভাষা মরে থাকে মনে।
অমৃত-সম সে নারীস্পর্শ যবে পায় মৃত প্রাণ,
লেখনীতে বহে কাব্যের স্রোত, লিখে যায় অবিরাম।
যত প্রেম গান ফুটিল নরের কন্ঠে – নারীর দান,
হৃদয়-বীণায় সুর দিল, তাই বাণী হল সব গান!
ফিরদৌসের ফুল আজ ভবে নিপীড়িতা, লাঞ্ছিতা,
পুরুষ যমের ক্ষুধার শিকার – অধিকার-বঞ্চিতা।
পুষ্পের মত কোমল অঙ্গে হানে কোন নরে ছুরি?
খৎনা করিয়া নরপশু সব মেটায় লালসা তারি।
ক্ষতবিক্ষত পড়ে রয়, বুকফাটা চিৎকারে নারী,
জংলীর সম উল্লাসে নর যেন সে শিকার ধরি'!
এরা বর্বর পশুসম, ভাবে –“ভোগের পণ্য নারী,
নিপীড়িতা নারী! আয় শেষ কর এসব অত্যাচারী!
নারী দেবী, নারী কভু পুরুষের ভোগের পণ্য নয়,
ভোগের পণ্য ভাবে যেবা, তার জানোয়ার পরিচয়!
নারী মায়াবতী, স্নেহময়ী, প্রেরণা-সিন্ধু নারী,
নিরাশা-আঁধারে আশার দীপ্তি যায় এরা সঞ্চারি'।
নরের জীবনে ঘনিয়ে এসেছে যখনি দুখের রাতি,
নারীই জ্বেলেছে নরের আঁধার জী রমণীর গুণে বনে আশার বাতি!
যখনি এসেছে নরের জীবনে সাহারার হাহাকার,
সে মরুর বুকে ঝরায় ইহারা বারিপাত প্রেরণার!
রমণীর গুণে কেবলি সুখের হয় না'ক সংসার,
শান্তি আনিতে স্বামী দেবতারও মানুষ হবা দরকার।
ভাবিয়াছ তুমি আনিয়াছি দাসী বিয়ের কলমা পড়ে,
দেনমোহরের দামে কিনিয়াছি সারা জনমের তরে।
দেবতার মত ভোগ চাও? - ওতো নহে তব চাকরানী,
দাসী হতে নয়, পদধূলি দেছে সংসারে হতে রাণী!
ফিরদৌসের ফুল কেন আজ লাঞ্ছিতা হবে ভবে?
কেন পবিত্র ফুল ধরণীতে দলিত মথিত হবে?
স্বর্গের ফুল নেমে এসে আলো জ্বালিলে ধরার বুকে,
সেই সে আলোকে আলোকিত হল তামাম বিশ্বলোকে!
সহসা সে নারী বন্দী হইল আঁধার গৃহকোণে,
সেইদিন হতে তিমির রাত্রি নামিল এ ধরাধামে।
মানবজাতির মহিমা গিয়াছে গ্লানির কালিতে ছেয়ে,
বিশ্ব নিত্য উঠিতেছে যেন পাপ-পঙ্কিলে নেয়ে!
নিষ্ঠুর নর ভুলিয়াছে প্রেম – হিংসা বিভেদ আনে,
খুনোখুনি করে মরে পশুত্ব পুষে রেখে এরা মনে।
প্রকৃতির রাণী বন্দী, - প্রকৃতি ফেলিছে চক্ষু-নীর,
চমকে উঠিয়া থমকে দাঁড়াল – বিশ্ব স্থবির!
ফোঁটে না'ক ফুল গুলবাগে, পাখপাখালিরা নাহি গাহে,
আর কতকাল বন্দী রহিবি পুরুষ-যমের গৃহে?
ঘোমটায় বেঁধে ঘরের পণ্য করিয়াছে যেই নরে,
শিকলে বাঁধিয়া বন্দী করিয়া দাসী বানায়েছে ঘরে।
কালনাগিনীর মত ফুঁসে উঠে উদ্যত ফণা ধরি –
ছোবল হানিয়া শেষ কর সব পুরুষ অত্যাচারী।
বন্দী-গৃহে জুলুম করিল যারা এতকাল ধরে,
আয় রে বেরিয়ে পুরুষ যমেরে মরণের মার মেরে!
ভেঙে যমপুরী, ভাঙিয়া মুখের হাজার যুগের তালা-
পুরুষ যমের বন্দীশালায় জ্বালা রে আগুন জ্বালা!
ঘোমটা ছিঁড়িয়া, দুয়ার ভাঙিয়া আয়রে আঁধার ফুঁড়ি,
আলোক কন্যা আলোর বন্যা ছড়াও বিশ্ব জুড়ি'!
ভাঙো অবরোধ, পদ-শৃঙ্খল ভেঙে করো চুরমার,
ভেঙে ফেল, ফেল ছিঁড়ে চলমান বোরখার কারাগার!
সুদিন আসিছে ফিরে –
নারী মুক্তির ডঙ্কা বাজিয়া উঠিছে বিশ্ব জুড়ে!
(উৎসর্গঃ নির্যাতিতা নারীদেরকে)
(ফিরদৌস – জান্নাত)