(বি।দ্র। কবিতাটা উভলিঙ্গকে নিয়ে। শিখণ্ডী, বৃহন্নলা, – এই শব্দগুলো দিয়ে উভলিঙ্গের মানুষকে বোঝায়।)
ভদ্র সমাজে বৃহন্নলারা আজিও অবহেলিত,
ঘুণে-খাওয়া এই নষ্ট সমাজে অধিকার বঞ্চিত!
ওরা নাকি নহে সুসভ্য? করে উদ্ধত আচরণ?
অধিকার কেড়ে গালি দাও তুমি, হে সমাজ! নরাধম!
জন্ম যদি বা দিল কেহ এই সমাজে বৃহন্নলায়,
পশুর সমাজে পিতামাতা মুখ ঢেকে কাঁদে লজ্জায়।
'মানুষ' জন্ম লয়েছে যদি এ অজ্ঞের সমাজে,
মূর্খের দল! ‘মানুষ’ দেখে না, উহারা লিঙ্গ খোঁজে!
অন্ধ সমাজ! খোঁজে হাতড়িয়ে লিঙ্গের পরিচয়,
'মনুষ্যত্ব' মানুষের মনে, কভু লিঙ্গতে নয়।
বিশ্ব এগিয়ে চলিছে, - লিঙ্গ-গাঁজা খেয়ে ওরা আজ –
লিঙ্গের পরিচয় খুঁজে মরে মূর্খ, জংলী সমাজ।
লিঙ্গের প্রেম উহাদের মনে – উহারা লিঙ্গ পূজে,
শিশু জন্মালে তাই তো উহারা ছেলে সন্তান খোঁজে!
মনুষ্যত্ব ভুলিয়া উহারা হয়েছে লিঙ্গবাদী,
মানববাদীরা এসো সেই সমাজের মুখে থুতু দি'!
সন্তান দিল খোদাতা’লা, আর উহারা ভুলেছে খোদা,
উভয়লিঙ্গ দেখে, কহে – “আমি ছেলের জন্মদাতা!”
ছেলে সন্তান দেখে পা মাটিতে পড়ে না অহংকারে,
মুখ ছেয়ে যায় কাল মেঘে, যদি শিখণ্ডী আসে ঘরে।
ওহে নির্বোধ! লিঙ্গ তো আসে খোদার তরফ হতে,
ছেলে জন্মাল! – ভুঁড়ি দোলাইয়া ছোটো তাই মসজিদে।
উভয়লিঙ্গ দেখিয়া তোমরা পাড়িছ 'হিজড়া' গাল,
জ্ঞানহীন তুমি, ও মাথা ভর্তি বিষ্ঠা ও জঞ্জাল!
নারী ও পুরুষ, উভয়লিঙ্গ, সৃষ্টি সে স্রষ্টার,
শিখণ্ডী যারা – দিতে হবে আজ মানুষের অধিকার।
রক্ত, মাংসের মানুষ ওরা, - আছে মানবীয় অনুভূতি,
মানবতাবোধ ভুলে হে সমাজ, হয়েছ লিঙ্গ-জাতি!
লিঙ্গ-অন্ধ! ওরা শুধু খোঁজে লিঙ্গের পরিচয়,
মানুষের পরিচয় সবার আগে, তার আগে কিছু নয়!
উহারা অজ্ঞ ; জানে না ক' প্রেম, দয়া যার বুকে রয় –
মানুষের তরে কাঁদে যেই জন, তাহারে মানুষ কয়!
হোক সে মানুষ পুরুষ, রমণী, উভয়লিঙ্গ ক্লীব,
স্রষ্টার কাছে কোনো ভেদ নাই – সৃষ্টির সেরা জীব।
উভয়লিঙ্গে ব্যঙ্গ করিছ? ওরা কি মানুষ নয়?
মানুষের সম্মান কাড়ে যারা, তাহাদেরে 'পশু' কয়!
ধর্মান্ধরা শোনো! –
বৃহন্নলা যে জন্ম দিয়াছে, তাঁর পাপ নাই কোনো।
মানুষের সন্তান-রূপে ওরা এসেছে মায়ের কোলে,
তুমি সমাজের ভূত-প্রেত, তাই কহিছ – “জ্বীনের ছেলে!”
অমিত সম্ভাবনার সে শিশু আসে যদি ধরাধামে,
জ্বীনের বাদশা হুজুরেরা কয় – “জন্ম দিয়েছে জ্বীনে!”
উভয়লিঙ্গ মানুষের শিশু, শিশু শান্তির দূত,
ওরা জ্বীন-সন্তান হলে, তুমি বৃদ্ধ মামদো ভূত!
জাগিয়াছে মানবতা!-
দূর করো সবে সমাজের কুসংস্কার, অন্ধতা!
কাড়িয়াছে যেই সমাজ বৃহন্নলাদের অধিকার,
সেই সমাজের মুখে আজ তোরা লাথি মার! লাথি মার!
সংস্কারের শিকল আজিকে ভেঙে ফেল লাথি মেরে,
প্রেম ও জ্ঞানের আলো ছড়াও গো নিখিল বিশ্ব জুড়ে!
এই বিংশ শতাব্দীতে –
এসো হে মানুষ আলোকিত হই মনুষ্যত্ব বোধে!
উড়ে যাক যত অন্ধ, বদ্ধ সংস্কারের জাল,
সত্য-শিখায় পুড়ে যাক অপবিশ্বাস-জঞ্জাল।
লিঙ্গের ভেদাভেদ ভেঙে এসো করি সবে একাকার,
মানুষের রূপে জন্মেছ তুমি – তোমার অহংকার।
সাম্যের ধরণীতে লিঙ্গের নামে ভেদাভেদ করে,
ওরা পৃথিবীর জঞ্জাল! দূর করে দাও লাথি মেরে!
বিশুদ্ধ হোক ধরা, পুড়ে যাক মিথ্যের জঞ্জাল,
সত্য জাগুক! নিচে পড়ে থাক কিতাবের কঙ্কাল!
নতুন যুগের তরুণেরা এস, হাতুড়ি তুলিয়া ধরো,
সমাজের গড়া লিঙ্গ-প্রাচীরে মারো রে হাতুড়ি মারো!
এক স্রষ্টার সৃষ্টির মাঝে ভেদাভেদ ভেঙে দাও,
সত্য-ন্যায়ের নিশান উড়িয়ে সাম্যের গান গাও!
শুধাই সুধী সমাজ -
উভয়লিঙ্গ মানব গণ্য হইবে না কেন আজ?
লিঙ্গবাদীরা শোনো –
শিখণ্ডী রূপে জন্মেছে যে বা, লাজ নাই তার কোনো।
শোনো ধর্মের চাঁই,
নারী ও পুরুষ, শিখণ্ডী মাঝে কোনো ভেদাভেদ নাই।
মানবতাবোধ যার মনে রয়, তাহারে মানুষ কয়,
লিঙ্গতে নয়! সবার উপরে মানুষের পরিচয়!