সাম্য-ধর্ম
'ইসলাম' – খোদার নজরানা এল পাপ-পঙ্কিল ধরণীতে,
সাম্য আনিয়া মানুষে ন্যায্য হক-অধিকার দিতে!
সাম্য, শান্তি কায়েমের বাণী লয়ে এল কোরআন,
মানুষের মাঝে প্রকৃত শান্তি আনে শুধু ইসলাম।
স্বার্থপরের নীতি, মানুষের মনগড়া মতবাদ –
জোঁকসম শুষে তামাম মানবজাতি করে বরবাদ!
ডালে ডালে আজ ভিড় করিয়াছে হুতোম প্যাঁচার দল,
স্বার্থের তরে মানুষের মাঝে সৃজে বিশৃঙ্খল!
লোভী দানবের লালসার বুটে পিষ্ট সে মানবতা,
ছিবড়ে বানায় মানুষে শুষিয়া – থামে না বর্বরতা!
বিশ্বের বুকে ইসলাম এল সত্যের আলো লয়ে,
এরা পায়নি ক' সে আলোক, এরা আঁধারে গিয়াছে ছেয়ে।
কিভাবে পাইবে আলো? – যে অভাগা আলো দেখিতে না চায়,
আল্লার ঠেকা পড়িয়াছে নাকি ধরে বেঁধে তারে দেখায়?
আলোকের ভয়ে সূর্য উঠিলে গাছের কোটরে লুকায়,
আঁধারে বসিয়া ডেকে ডেকে ওঠে এসব হুতোম প্যাঁচায়!
মোরা আল্লার সেনাদল!-ডাকি মানুষেরে হক-পথে,
পথে প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছি তাঁর আলো লয়ে সাথে।
মানুষেরে ডাকি প্রেম দিয়ে - দেখে এসব হুতোম প্যাঁচার -
হৃদয় গিয়াছে হিংসায় জ্বলে - বিদ্বেষ করে প্রচার!
শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে এরা অশান্তি আনে,
সাম্যের বাণী ছড়ায়ে আমরা মানুষে গলাই প্রেমে!
ইসলামে ওরা আঘাত হানিয়া ভাবে ওরা মহাজ্ঞানী,
জানে না বিশ্বে আনে কোরআন প্রথম জ্ঞানের বাণী!
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এনে বিশৃঙ্খলা রচে',
গোরস্তানের ভূত-প্রেত এরা, মানবসমাজে নাচে!
ভোগোন্মত্ত জীব এরা! - লালসার পাঁকে মুখ ঘষে,
মানুষের তরে ত্যাগী হই মোরা, মানুষেরে ভালবেসে।
মানবরচিত আইনের বলে এরা আনে দুর্গতি,
ওহে নির্বোধ! - স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টির নাই গতি!
বিজ্ঞান গিলে জ্ঞান বাড়ে নি ক', তাই অজ্ঞান-সম -
স্রষ্টারে দেখিতে চাহিছে, কহিছে – “না দেখে মানো কেনো?”
ওহে নির্বোধ! - দেখিলে থাকে কি বিশ্বাসের আর দাম?
চক্ষে না দেখে ভালবাসে, মানে - 'বিশ্বাসী' তার নাম!
পরিক্ষা তরে স্রষ্টা পাঠাল তোরে ধরণীর বুকে,
কতটুকু তুমি মানো তারে দুনিয়াবী চোখে নাহি দেখে!
পরিক্ষার হলে উত্তর চাহ? – কি দাম পরিক্ষার?
না দেখে মানে – পাস তার তরে – ওপারে পুরষ্কার।
ওরা উন্মাদ-সম ছোটে দুনিয়াবী স্বার্থের তরে,
লোভের জিহ্বা মেলে ছুটিতেছে, লালা পড়ে ঝরে ঝরে।
ওরা শকুনের দল! লোভ ওদের পঁচা গলা মৃত লাশে,
শবদেহ লয়ে কাড়াকাড়ি করে ভাগাড়ের পাশে বসে।
গলিত শবের গন্ধ এদের আতরের সম লাগে,
স্বার্থের লোভে শকুন সাথীরে মারে যদি পায় বাগে!
উহাদের ধ্যান-ধারণারে রয় লোভ লালসায় ঘিরে,
স্বার্থের তরে হেন হীন কাজ নাই, যাহা নাহি পারে!
স্বার্থান্বেষী! – ওরা দুনিয়াবী স্বার্থের পিছে ছোটে,
খুন শুষে বলে – “পরহিতে ব্রত!” – হিতকারী তুমি বটে!
আমরা চেয়েছি ফুলের বাগান, পুষ্পের মধু লয়ে
মানুষের মাঝে বিলাইয়া দেব, মানুষের প্রেমে নেয়ে!
মোদের এ বাগান আল্লার দেয়া বেহেশতী গুলশান,
মধু পাবে সবে, নাহি হেথা ধনী গরীবের ব্যবধান!
কেহ রহে না এ দ্বীনি ছায়াতলে বঞ্চিত অধিকারে,
ভেদ-বিভেদের প্রাচীর ভেঙেছি সাম্যের হাতুড়ি মেরে!
ভোগী-রাক্ষস! ওরা পৃথিবীতে আনে বিশৃঙ্খলা,
গরীবের হক মেরে খায় সব – এরা শয়তানী চেলা!
'সমাজতন্ত্র' – মন্ত্র জপিয়া মানুষে শোষণ করে,
'সেক্যুলারিজম' তসবি জপিয়া আল্লার সেনা মারে!
জঙ্গিবাদী'র তকমা লাগায় দেখে ওরা টুপি, দাড়ি,
বিশ্বে প্রথম শান্তি এনেছে টুপি আর দাড়িধারী!
সোনালী যুগের মানুষ 'সাহাবা' – আল্লায় ভালবেসে –
মানুষের তরে অকাতরে প্রাণ দিল ওরা হেসে হেসে।
বিশ্বে প্রথম মার খেয়ে আনে মানবজাতির হিত,
টুপি, দাড়িধারী – ওরাই কাঁপাল অত্যাচারীর ভিত! –
উহারা জানেনা! - উল্লুক-সম দন্ত খিঁচিয়ে বলে –
ইসলাম নাকি জুলুম করিছে মানুষেরে ছলেবলে?
প্রলাপ বকেছে মাতালের মত খেয়ে অধর্ম-গাঁজা,
বাঁদর নাচন নাচাতে এবার আসিছে খোদার সাজা!
ওরা পাপ-অনাচার ভরা শয়তানের রাজ্য চায়,
পাপের পঙ্কে দৈত্যের মত দাপাদাপি করে বেড়ায়!
ইহাদের শয়তানের রাজ্যে মার খায় দুর্বলে,
মনুষ্যত্ব আবদ্ধ হেথা জুলুমের শৃঙ্খলে!
নিঃস্ব করেছে দুর্বলদের সর্বস্ব কেড়ে,
স্বার্থের তরে যদি পারে এরা বন্ধুরে খায় ছিঁড়ে!
আত্মীয়-পর সবাই খাদ্য এদের স্বার্থ-চোখে,
নরখেকো চেনে মানব-মাংস, নিজ পর নাহি দেখে!
আমাদের এই খোদার রাজ্যে, আকাশে বাতাসে হেথা –
সাম্যের বাণী ধ্বনি' ওঠে, বাজে নিত্য প্রেমের গাথা!
হেথায় সাম্য আনিয়াছে আল্লার পাক কোরআন,
উঁচুনিচু, ধনী গরিবের মাঝে নাই তাই ব্যবধান!
নাহি ক' কালো ও সাদার দ্বন্দ্ব, মানুষের মাঝে ভেদ,
হেথা সবে ভাই, নাই তাই হেথা বিবাদ বা বিচ্ছেদ।
অন্যের তরে আপনারে দান করেছি নিঃস্ব করি',
একে অপরের সুখে সুখী, দুখে বক্ষে জড়ায়ে ধরি।
ভোগের রাজ্য চাহে ওরা, মোরা ত্যাগের কুটির চাই,
মানবজাতির কল্যাণে ত্যাগ স্বীকারি সর্বদাই!
প্রাণদান করি অকাতরে হেসে মানবমুক্তি লাগি',
বিশ্বের বুকে মুসলমানের সম নাহি কেহ ত্যাগী!
আলোর পথের যাত্রী, হেথা ঝরে খোদার করুণাধারা,
আঁধারে থাকিয়া অন্ধ ওসব পেঁচকেরা পথ-হারা!
মোরা হেথা সবে একই আত্মা, এক দেহ, এক প্রাণ,
একের অসম্মান হেথা যেন সকলের অপমান!
চাহিও না কেহ উহাদের রাক্ষস-রাজ্যের পানে,
ইহ-পরকাল বরবাদ হবে, সাধ-আশা যাবে ভেঙে!
ওরা অশান্তি আনে আঘাত হেনে পবিত্র বিশ্বাসে,
'মুক্তচিন্তা' – নামে মাথা-ভরা ইসলাম বিদ্বেষে!
রক্তপিপাসু দৈত্যেরা যদি নিরীহ মানুষ মারে,
নির্যাতিতেরা অস্ত্র ধরিলে 'সন্ত্রাসী' গাল পাড়ে!
দানবের মত উল্লাসে যদি মাতে গণহত্যায়,
বাঁচার তাগিদে অস্ত্র ধরিলে 'জঙ্গি' খেতাব পায়!
দাঙ্গা লাগায় সাদা দৈত্যেরা মুসলমানের মাঝে,
গর্দভ জাতি, গাধার মতন নাচে চাল নাহি বুঝে।
মেরে মেরে হাত রাঙা করে মুসলিম ভাইয়ের খুনে,
ভায়ের রক্ত চেটে দাপাদাপি করে দৈত্যের সনে!
মুসলমানের বোধ, জ্ঞান সব আজ টাকা দিয়ে কেনা,
মুনাফিক ওরা! ভাইয়ের রক্তে মাখিতেছে হাতে হেনা!
নিশ্চিহ্ন করিতে চাহে কৌশলে মেরে মুসলিম জাতি,
টিকিতে চাহিয়া অস্ত্র ধরিলে কহিছে – “উগ্রবাদী!”
শান্তি কায়েম করিতে যদিবা কোরআন করি প্রচার,
হুতোম প্যাঁচারা আঁতকে উঠিয়া কহে – “তুই রাজাকার!”
নাস্তিকতার নামে ইসলাম বিদ্বেষীতায় মাতে,
তামাম বিশ্ব চাহে এরা টেনে ধ্বংসের পথে নিতে!
শান্তির নাম মুখে জপে, অন্তরে অশান্তি চায়,
ইসলামে ওরা আঘাত হানিয়া ' সাহসী' আখ্যা পায়!
শত সহস্র ভুল মতবাদে ভরা এ পৃথিবীখানি,
নয়! কিছুতেই নয়! – শুধু ইসলামে যত চুলকানি!
ইসলাম! – সে তো ইহাদের তরে বিছুটি পাতার মত,
গাত্রে লাগিলে ছাগল নৃত্য করে চলে অবিরত!
দোযখের পথে ধ্বংসের পথে মহাজ্ঞানী ছুটে যায়,
জাহান্নামের টিকিট কাটিয়া শহিদী খেতাব পায়!
সত্যের আলো পায়নি ক' তাই, আল্লার ফরমান –
কোরানের বাণী লয়ে মুসলিম হও তুমি আগুয়ান –
এদের রাজ্যে, যাতে অজ্ঞানে পায় সুশীতল ছায়া,
আরশের নিচে পাপী, তাপী এসে জুড়াক তপ্ত কায়া!
পাপের রাজ্য হতে ইসলাম তরুতলে আশ্রয় –
পাক এরা, ঘুঁচে যাক জীবনের আঁধার গ্লানিময়!
ভালবাসা দিয়া অজ্ঞানে তুমি ডেকো আল্লার পথে,
বুকে তুলে নিও এদেরে পরম মমতার ডোরে বেঁধে!
আপনার প্রতি জুলুম করেছে, তবু ঐ আল্লার
ক্ষমার দুয়ার বন্ধ হয়নি, খোলা রহমের দ্বার!
পাপী বান্দায় যদি আল্লার পানে পেয়ে হেঁটে যায়,
রহমত লয়ে তাঁর পানে আল্লায় আসে দৌড়ায়!
তাঁহার ক্ষমার দ্বার সদা খোলা তামাম তাপীর তরে,
তাঁর রহমের দ্বার দিয়া সদা রহমের সুধা ঝরে!
তাঁর মুক্তির দুয়ারে দাঁড়িয়ে মানুষে ডাকেন তিনি,
পাপ করিয়াছে কেবা? – ভালবেসে মুছে দেবে তার গ্লানি।
তাঁর করুণার ধারা ঝরে পড়ে ঊর্ধ্ব আকাশ হতে,
আসবি কে আয়, তাঁর অফুরান দান তোরা লুটে নিতে!
খোদার শিক্ষা – যদি ভুল করে ভুল পথে কেহ যায়,
প্রেম দিয়া তারে ডাকিও, সিক্ত করিও ভালবাসায়!
কিন্তু জানিও যদি দাঁত, নখ বাগাইয়া আসে, ভাই! –
ইহাদের তরে প্রহারের চেয়ে উত্তম ওষুধ নাই!
সর্পবিষের মত শান্তির প্রতি বিদ্বেষ দেহে –
ছড়িয়ে পড়ে তো, পিটিয়ে সে বিষ নামাতে কোরান কহে!
মানবতার এরা শত্রু, মনুষ্যত্বের দুশমন,
গরুপেটা করে ভূত ছুটাইব – মোদের জীবনপণ।
দুর্বলের হক কাড়িয়া যদিবা মানুষে শোষণ করে,
মানুষের তরে যুদ্ধ করিব হাতে তলোয়ার ধরে!
উৎপীড়িতের তরে আমৃত্যু করে যাব সংগ্রাম,
প্রাণ দিয়া শহীদ হয়ে আনিব সে সাম্যের ইসলাম!