ধর্ম এসেছে মানুষের শান্তির তরে পৃথিবীতে,
সর্ব ধর্ম চাহে মানুষেরে শান্তির পথে নিতে।
অকল্যাণের কথা, সে তো কোনো ধর্মই নাহি কহে,
অশান্তি আনে যেই মতবাদ – কভু তা ধর্ম নহে!
শান্তি, মানবকল্যাণ – সে তো সব ধর্মের বাণী!
কোনো সে ধর্ম মানুষের মাঝে চাহে না'ক হানাহানি!
তামাম ধর্ম পৃথিবীতে চাহে মানুষের কল্যাণ,
ধর্মের নামে অশান্তি আনে যারা – তারা শয়তান!
সাম্য, শান্তি, সম্প্রীতি – উহা সব ধর্মের গীতি,
রাক্ষস যারা, বরবাদ করে মানুষের সম্প্রীতি!
যাহারা গুণ্ডা, ভুল বুঝাইয়া অজ্ঞান জনগণে –
ভুল পথে নেয়, মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা আনে।
ধার্মিক বেশে যারা যত বড় গুণ্ডা ও ধড়িবাজ,
তারা তত গুণী, সম্মানী – জাতি, সমাজের কাছে আজ!
এক সে স্রষ্টা, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে,
সর্বজাতির মাঝে জেগে, তিনি সর্বজীবেতে মিশে!
সব সৃষ্টির সত্ত্বায় মিশে, সব সৃষ্টির প্রেমী,
সব মানুষের হৃদয় আলোকিত করিয়া আছেন তিনি।
আল্লারে যারা ভালবাসে, তারা ভালবাসে তাঁর জীবে,
তারা শুধু জীবসেবা করে না'ক, তারা আল্লারে সেবে!
ক্ষুধিতে খাদ্য দেয় না'ক শুধু, দেয় ওরা আল্লায়,
আল্লারে জল দেয়, যদি জল দেয় কা'কে পিপাসায়।
আশ্রয় দেয় পরম যত্নে গৃহহীনে যারা ঘরে,
ঘরহারা নয়! তারা যেন আশ্রয় দেয় স্রষ্টারে!
সেই জীব হোক হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান –
নাস্তিক হোক! – আল্লার কাছে নাই কোনো ব্যবধান!
মানুষ মাত্রই সৃষ্টির সেরা জীব আল্লার কাছে,
কোন নরাধম মানুষের মাঝে বিভেদ-প্রাচীর রচে'?
মানুষে বিচার করিবে কেবলি ঐ এক আল্লাই,
অবিশ্বাসীরে বিচার করার তোমার অধিকার নাই!
তোমার বিচার কভু কি মানুষে স্বর্গে পাঠাতে পারে?
তোমার ক্ষমতা নাই – কা'রে ঠেলে দেবে দোযখের দ্বারে!
মোল্লার দল 'আল্লা' সাজিয়া বসিয়াছে দিকে দিকে,
ভাবে যেন – “আমি স্বয়ং স্রষ্টা!” – ঈমান আছে কি বুকে?
এরা ফতোয়ার ঝুলি লয়ে ঘোরে, কভু ফতোয়ার বাণে –
বিদ্ধ করিয়া 'কাফেরে'র গাল পাড়িছে অমুসলিমে!
ভেবেছে – “খোদার বিচার দণ্ড, উহা তো মোদের হাতে।“
বাড়াবাড়ি করে এরা প্রতারণা করে আল্লার সাথে!
ফতোয়ার বাণে বিভেদ এনে ভাবে –“আমিই মস্ত আলেম!”
আলেম তো নহ! ইসলামে কয় ব্যাটা –“তুমি বড় জালেম!”
ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে বিপথে নেয় এরা জনগণে,
মানুষের সম্প্রীতি বরবাদ করে হানাহানি এনে!
ধার্মিক নহে, ইহাদেরে কহে ধর্মীয় উন্মাদ,
ধর্মের নামে তামাম মানবজাতি করে বরবাদ!
ওরা ইসলাম খোঁজে শুধু ভিন ধর্মীর প্লেট, গ্লাসে,
ঠুনকো এদের ইসলাম! – তাই মাথা-ভরা বিদ্বেষে!
বিধর্মী হাতে খেলে কভু কারো ইসলাম নাহি যায়,
ইসলাম, সে তো 'বিশ্বাসী'-মনে নিত্য আলোক ছড়ায়।
বিধর্মী হাতে খেয়েছে নবীরা, করেনি তুচ্ছ জ্ঞান,
'ছোঁয়াছুঁয়ি-রোগ' ছড়ায়েছে যে বা – সে নহে মুসলমান!
ভিনধর্মীর কোনো ভাষা নাই, ভাষা স্রষ্টার দান,
কর্মে তো নহে! – ভাষার ভেতরে খুঁজে মরে ইসলাম!
ধর্ম-উন্মাদনায় মাতিয়া গালি দেয় অজ্ঞান,
ওরা 'মালাউন' হলে তুমি ব্যাটা 'সাক্ষাৎ শয়তান'!
কোনো যোগী, ঋষি, কোনো পয়গম্বর, কোনো দরবেশ –
অন্য ধর্মে দেয়নি ক' গালি, শোনো হে গোবর গণেশ!
ভিন ধর্মের মহামানবেরে দেয়নি ক' ওরা গালি,
গালি দিয়া বুঝি বমি করে দাও কালো হৃদয়ের কালি!
ভিন ধর্মীর ব্যঙ্গে কাঁপায়ে তোলে ওরা দশদিক,
অন্য ধর্মে সহিষ্ণু নহে – সে তো নহে ধার্মিক!
ধূর্ত শেয়াল! – ভিন ধর্মীরে গালি দেয় পড়ে যেচে,
গুণ্ডা, ভণ্ড! – নবীর উপরে মহানবী সেজে আছে!
ভড়ং ধরেছে – বড় ভাব নাকি হয়েছে খোদার সনে,
আজ, নয় কাল নবুওয়্যাত বুঝি পাবে সব শয়তানে!
ভণ্ডের দল! হৃদয়ে নাহি ক' এককণা সে ঈমান,
বাহিরে এদের ইসলাম, মনে হাসে বসে শয়তান!
ব্যঙ্গ করিছে ভিন ধর্মীর দেবদেবীদেরে লয়ে,
কোরানের সাথে তামাশা করিয়া গিয়াছে 'কাফের' হয়ে!
“ভালবাসা দিয়া আল্লার পানে ডাকো” – কহে ইসলামে,
বিধর্মী 'পরে জুলুম করিতে নিষেধ সে কোরআনে।
অকল্যাণের দূত যারা, তারা ভূত সেজে পথে পথে –
টুপি, পাঞ্জাবি পরা জ্বীন – চাহে মানুষে বিপথে নিতে!
ভূত-প্রেত দল দাড়ি নেড়ে কহে – “এসো জেহাদের পথে,”
খোদার সৃষ্টি অকারণে মেরে যাবে নাকি জান্নাতে!
এরা প্রতারক! মুখে বলে মানুষের কল্যাণ চায়,
আজীবন এরা ব্যয় করে শুধু আত্মপ্রতিষ্ঠায়!
তখত, ক্ষমতা লোভে এইসব দস্যু ও দাগাবাজ –
ধর্মের নামে মূর্খ জনতা ক্ষ্যাপাইয়া তোলে আজ!
স্বার্থের তরে মানুষের মাঝে হিংসা বিভেদ আনে,
এরা চাহে শুধু নিজ-কল্যাণ, চাহে না কারোর পানে!
ধর্মের নামে উহারা নিত্য ফেলে মানুষের লাশ,
খুন করে বলে – “ মোরা মুজাহিদ! খোদার বান্দা খাস!”
মানুষ মারিয়া এরা দানবের মত আকর্ণ হাসে,
হ্রেষা রবে কহে – “মানুষ মেরেছি আল্লারে ভালবেসে!”
শৃগালের মত হাঁক ছেড়ে কয় –“জয়! ধর্মের জয়!”
মুজাহিদ! ওতো দূরে থাক, ওরে “পশুরও অধম” কয়!
ধর্মের নামে মানুষের 'পরে যারা বোমাবাজি করে,
ধর্মের নাম লয়ে অবিচারে নিরীহ মানুষ মারে,
ধর্মব্যবসা করে যারা, - ধর্মের নামে রাজনীতি,
মুখে জপে 'খোদা', অন্তরে শয়তান সনে প্রেম-প্রীতি,
ধার্মিক! – ওতো দূরে থাক! – ওরা নহে মনুষ্য জাতি,
ইহাদের শুধু আছে এক নাম “রাক্ষস” বলে খ্যাতি।
রাক্ষস সব মানব-মুখোশ পরে পথেঘাটে ঘোরে,
ধর্মের নামে দাঙ্গা লাগায়ে স্বার্থ হাসিল করে!
আত্মঘাতী বোমা হামলায় মরে কহে – ওরা নাকি শহিদ!
শাহাদাত নয়! – নরকে বুকিং দেয় শয়তান-মুরীদ!
সাম্প্রদায়িকতার বিষ যারা ছড়ায় বিশ্বময়,
পথভ্রষ্ট, উহাদের শুধু 'শয়তান' পরিচয়!
এক আল্লার সৃষ্টির মাঝে রহিবে না কোনো ভেদ,
হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টানে রহিবে না বিভেদ।
আল্লার দেয়া আলো, বায়ু বহে সব ধর্মীর ঘরে,
তাঁর বৃষ্টির জল সব ধর্মীর মাঠে ঘাটে ঝরে!
খোদার উদার আকাশ তামাম মানবজাতিরে ঘিরে,
তাঁর মৃত্তিকা ফসল ফলায় সব ধর্মীর তরে।
তাঁর তরুলতা ফুল ফল দেয়, - করে না ধর্মভেদ,
সর্বজাতির তরে ছায়া দেয় – আনে না তো বিচ্ছেদ!
স্রষ্টার দান করে না ধর্মভেদ, তবু কেন আজ –
ধর্মজাতির নামে ভেদাভেদ আনো তুমি ধড়িবাজ?
বিষাক্ত করে তামাম পৃথিবী ধর্মজাতির নামে,
নাহি কি রে কেউ ইহাদের ঘাড়ে খালিদের অসি হানে?
ভালবাসে না যে খোদার সৃষ্টি, সে তো মুসলিম নয়,
অকারণে যে বা মানুষ মেরেছে, তারে 'জানোয়ার' কয়!
খোদার তামাম সৃষ্টিরে যারা মনেপ্রাণে ভালবাসে,
আপনারে দেয় বিলিয়ে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে,
মানুষের কল্যাণ চিন্তায় রাতে যার ঘুম-হারা,
মানুষের দুখে কাঁদে যারা, মানুষের সুখে হাসে যারা,
যাহার হাতের আহার ক্ষুধিতের কথা স্মরে পড়ে যায়,
আল্লার প্রিয় বান্দা তারাই – তাঁর ভালবাসা পায়!
তাহাদের প্রেম কভুও করে না ধর্মজাতির ভেদ,
সব মানুষেরে বুকে টেনে ভাঙে মানুষের ভেদাভেদ!
সেদিন সুদূর নয়,
ভেদাভেদ ভুলে গাহিবে মানুষ সবে – “মানুষের জয়!”
মানুষের মাঝে জাগিবে সেদিন মনুষ্যত্ব বোধ,
হৃদয়ে জাগিবে ভালবাসা, ধুয়ে যাবে অকারণ ক্রোধ!
ধর্মের নামে অহেতুক করিবে না'ক অহংকার,
আনিবে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার।
ধর্মের নামে দ্বন্দ্ব-কলহ হবে সেদিন অবসান,
মানুষের তরে বিলাবে নিজেরে, নেছার করিবে প্রাণ!
দেখিবে না কভু কেবা কোন ধর্মের, কেবা কোন জাত,
সংঘবদ্ধ হয়ে সবে করিবে জুলুমের প্রতিবাদ!
ঠাসিয়া ধরিবে সবে মিলে সব অত্যাচারীর টুঁটি,
ভেদাভেদ এনে কেড়ে খেল যারা ক্ষুধার অন্ন, রুটি!
শোষণ করেছে কেড়ে লয়ে যারা দুর্বলের অধিকার,
হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম মিলে মারিবে বেদম মার!
সেদিন ধরায় সত্যিকারের সাম্য কায়েম হবে,
সব ধর্ম ও জাতি মাঝে সব ভেদাভেদ ঘুচে যাবে!
আসিবে সত্যিকারের শান্তি, ঘুঁচে যাবে অমারাতি,
উদার গগনতলে এক হবে আসিয়া সকল জাতি।
কন্ঠ মিলিয়ে গাহিয়া উঠিবে নতুন দিনের গান,
নতুন দিনের সূর্য উদিবে, হবে জুলুম অবসান!
সকল দেশের, সকল জাতির সকল মানুষ আসি'
প্রেম নদীর এক মোহনায়, শোনো এক মিলনের বাঁশি!
বিশ্ব জুড়িয়া উঠুক ধ্বনিয়া মানবতার আজ জয়,
মানুষের তরে ধর্ম, মানুষ ধর্মের তরে নয়!
এক সে আকাশ মায়ের ক্রোড়ে এক রবি, শশী দোলে,
হিন্দু, মুসলমানে ভেদ কেন এক দেশমাতা-কোলে?
হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান সব ভাই ভাই,
সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে কিছু নাই!
(নেছার – উৎসর্গ)