রমজানের ঐ রোজা শেষে আজ এসেছে দুখের ঈদ,
ক্ষুধার জ্বালায় দীন-কাঙালের চোখে নাই আজ নিঁদ!
খুশির জোয়ার খেলিছে কেবলি ধনিকের ঘরে ঘরে,
ঈদ আনন্দ আসেনি ক' কভু লোভী ভোগীদের তরে!
দেখ! ভুখারির দল ভিড় করে ভুঁড়িওয়ালাদের দ্বারে, -
রুগ্ন দেহের চর্ম-মাংস শুকিয়া মিশেছে হাড়ে!
“কোথায় চলেছ ভুঁড়ি দোলাইয়া? ঈদগাহ ময়দান?
তোমাদের গৃহে জমা আমাদের আল্লার দেয়া দান।
প্রাপ্য আদায় করো আগে ভোগী, ঘরে যা রয়েছে জমে,
নইলে তোমায় যেতে নাহি দেব ঈদগাহ ময়দানে!
ভিক্ষা চাহি না! সম্পদে ভাগ লইতে এসেছি বুঝে,
হক মেরে খেলে দাওয়াতে পাঠাব আজরাইলের কাছে!”
মহাজন! তব ফসলের মাঠ উপচে পড়েছে নাকি?
ধান ফলিয়াছে বিপুল – খুশিতে রাতে ঘুম-হারা আঁখি!
দিবারাতি খেটে মোদের দেহের রক্ত করিয়া পানি –
ধরণীর বুক হতে নজরানা স্বরূপ ফসল আনি!
খাদ্য জোগাই, আমরা কৃষক, মরণ-খাটুনি খেটে,
পরিবার মরে অভাবে – জোটে না দু’মুঠো অন্ন পেটে!
দিবারাতি খেটে মাঠে রোদে পুড়ে কি’বা ভিজে বৃষ্টিতে –
জ্বর-সর্দিতে ধুঁকে তবু ব্রত মানবজাতির হিতে।
তবু এরা নাকি কাজে দেয় ফাঁকি? – জ্বলে না ভাগ্যে বাতি,
পরিশ্রমের বিনিময়ে পিঠে জুটিয়াছে কিল, লাথি!
জীবন ভরিয়া না খেয়ে শুধু আমরাই রোজা রাখি,
উপবাসী মোরা! বুক-পিঞ্জরে প্রাণ করে থাকি থাকি।
ক্ষুধার জ্বালায় মৃতপ্রায় মোরা! কে শোনে এ হাহাকার?
সম্পদ দেয় নাই খোদা! – বলে নেই বাঁচার অধিকার?
জনমের খাওয়া খেয়ে একেকটা তোমরা খোদার খাসি,
মেঘ-সম নাদে ঢেঁকুর তুলেছ, তেলতেলে মুখে হাসি!
সংযমের নাই বালাই তোমার, ঐ রোজা – রোজা নহে,
ইফতার ভাগ দেয় অভাবীরে, তারে রোজাদার কহে!
দুইবেলা না খেয়ে প্রতারণা কর আল্লার সাথে,
নিভু নিভু প্রাণ লয়ে রোজা মোরা, না খেয়ে পড়ে পথে!
উদরের জ্বালা কাঁদিয়া ফিরিছে আল্লার দরবার!
মোদের কষ্ট সহিষ্ণুতা কি পাবে না পুরষ্কার?
না খেয়ে মরি! এদিকে আবার ঋণে বাঁধা দুই হাত,
রক্ত শুষেছে মহাজন! এবার নেবে মাংসের স্বাদ!
কপর্দকহীন কাঙ্গালে চাও তোমার ঋণের শোধ,
তুমি পশু তাই, আজো জাগে নাই মনুষ্যত্ব বোধ!
আমরা ফলাই মাঠের ফসল, আমরাই নাহি পাই,
মোদের রক্তে ফসল ফলেছে, মোদের অধিকার নাই!
ক্ষুধায় মরেছে ছেলে ঘরে, - হায়! কেহ ফিরে চাহে না তো!
ধ্বংসিব সব ক্ষেতের ফসল পঙ্গপালের মত!
যুগযুগান্ত ক্ষুধা-যন্ত্রণা সয়ে আজি ভয়হারা,
প্রাপ্য ফসল দেবে না? - তো মাঠে আগুন জ্বালাব মোরা!
আজ ধনিকের ঘরে ঘরে দেখি ধনের অভাব নাই,
হাবুডুবু খায় ধনের সাগরে, তবু তার আরো চাই!
উদরপূর্তি করেছ তোমরা ইফতার, সেহরিতে,
দু'মুঠো অন্ন জোটেনি এ পেটে সাঁঝে কিবা শেষরাতে।
হাড়ভাঙা খাটুনি খাটি সারাদিন – ক্ষুধার আগুন পেটে,
পোড়া এ কপালে ক্ষুদকণা তাও দিনশেষে নাহি জোটে!
যন্ত্রের মত খেটে খেটে দেহে হাড়গুলো সব পানি,
দিনশেষে তবু ভোগী মনিবের দেখি চোখ রাঙ্গানি।
বেতনের নাম মুখে নিলে চোখ ভাঁটার মতন লাল,
হাড়ভাঙা কাজে খুঁত ধরে করে বেহিসেবি গালাগাল!
ওহে গালি-রাজ! ওহে ফাঁকিবাজ! – ঘরে যাহা সঞ্চয় –
আছে, সেই সম্পদে ইহাদের হক আছে নিশ্চয়!
তোমার রাক্ষস-উদর ভরাতে খাটাও পশুর মত,
এদেরি দুঃখে খোদার আরশ কাঁপিতেছে অবিরত!
হতদরিদ্রের যন্ত্রণা টাকাওয়ালা নাহি দেখে ফিরে,
বুকফাটা তার হাহাকার আরশে ফরিয়াদ করে ফেরে!
এদের হাহাকার খোদার ক্রোধে পরিণত হবার আগে –
পাওনা মেটাও, - নয় টাকাওয়ালা গজব পড়িবে টাকে!
মোদের রক্ত পানি করে ডাকু! মুনাফা লুটেছ বেশ!
প্রাপ্য না দিলে বংশ সুদ্ধু মারিয়া করিব শেষ!
ধনিকের দল! ধনের পাহাড় জমে আছে তব কাছে,
আল্লার দেয়া ঐ সম্পদে মোদের অধিকার আছে।
ভিক্ষা নহে ক'! – আমাদের হক! – বুঝাইয়া দাও আজ,
নইলে তোমার গৃহে শুরু হবে দেদার লুটতরাজ!
তোমার সাধের কারখানা আজ আগুনে জ্বলিয়া যাবে,
মোদের রক্তে গড়া ও প্রাসাদ উড়ে যাবে আজ তবে!
তোমার ধনের পাহাড় ভাঙিয়া পড়িবে তোমার শিরে,
বাঁচিতে চাও তো, আল্লার দান, দাও! তবে যাব ফিরে!
পুঁজি লয়ে এদিকে ডাকু ধনিকেরা ব্যাংক খুলে বসে আজ,
ঋণের বোঝায় শির নত হতভাগা দরিদ্র সমাজ!
তিনবেলা যারা উপবাসী রয়, অন্ন বস্ত্রহীন!
কপর্দকহীন কাঙাল, - কেমনে শুধিবে পাহাড়-ঋণ?
সাধের ও ভুঁড়ি ফেঁপে ধামা ঝুড়ি খেয়েদেয়ে পাঁচবেলা,
সোনার চামচ মুখে জন্মেছ – বোঝো না খিদের জ্বালা!
ব্যাংকে বসিয়া এসব শোষক সুদের অঙ্ক কষে,
রক্ত শুষিয়া নরখাদকেরা অস্থিমজ্জা চোষে!
এদের উদরে বিষাক্ত সব সাপ, বিচ্ছুরা ঘোরে,
মাতাল এরা! – শয়তানী স্পর্শে টলে টলমল করে!
'ক্ষুদে ঋণদান' নামে প্রতারণা! – চাহিনা! - ও দান ঝুট!
প্রাপ্য দেবে না? – ব্যাংকে ডাকাতি হবে! – হবে হরিলুট!
রক্তে মাখানো টাকা জমা করে ব্যাংকে মেরেছ তালা!
আর সহিব না জুলুম! – ভল্টে চালা! রে হাতুড়ি চালা!
মোরা নিরক্ষর, তাই প্রতারণা বুঝিনে – ভেবো না ঠগী,
তোমার চামড়া খুলিয়া আমরা বাজাব রে ডুগডুগি!
কোথায় ইমাম? ঈদের জামাতে খোৎবা পড়িবে নাকি?
খোদার কেতাবে মোদের হক নাহি দেখে লোভাতুর আঁখি!
মসজিদে তব জামায়াত আসে, মাতো তুমি পিকনিকে,
ক্ষুধার্তদের কান্না আতরমাখা কানে নাহি ঢোকে!
তব লোভাতুর আঁখি চেনে শুধু মন্ডা, মিঠাই, খাজা,
আর দেরি নাই! আকাশ হতে ধেয়ে আসিছে খোদার সাজা!
হুজুর বাবাজি বোঝে না'ক আজ কী ভীষণ মার খাবে,
তোমাদের হাড়ে ভেল্কির খেলা খেলিবে এ গরীবে!
তব মসজিদ গড়িয়াছ দিয়া সুদী কারবারি টাকা,
মসজিদের ঐ প্রতি ইট দুখী গরীবের খুন মাখা!
ভোগ বিলাসের অঙ্ক কষিছ মসজিদে বসে শুয়ে,
ধ্বংস করিব তব মসজিদ হাতুড়ি, শাবল লয়ে!
ভোগ বিলাসের মজা আজ তুমি টের পাবে হাড়ে হাড়ে,
তোমার ভোগের আস্তানা খড়কুটো সম যাবে উড়ে!
এক শ্রেণির তরে এই ঈদ! – নহে ক' খোদার বিধান,
ঈদ আসিয়াছে সকলের তরে! – আল্লার ফরমান!
আজ দেখি শুধু ভোগী রাক্ষস ঈদগাহ পানে ছোটে,
পথবাসী শিশু চেয়ে রয়, - বুকে বেদনার ঢেউ ওঠে।
জরির পোষাকে শরীর ঢাকিয়া ছেলে লয়ে ছোটে ধনী,
এদের ছেলের মুখে হাসি ঝরে – ওদের চক্ষে পানি।
শিশুর আবদারে মা'র চোখে জল, বলিতে পারে না কিছু,
আঁচলে কান্না চাপা দিতে মাতা মুখ করিয়াছে নিচু।
মানিকের দুখে বুক ফাটে, - মা'র মুখে অদৃশ্য তালা,
ভোগী বিলাসীর ঈদগাহে আজ জ্বালা রে! আগুন জ্বালা!
ইমামের হাতের কেতাব কাড়িয়া মার! মুখে ছুঁড়ে মার!
ক্ষুধার অন্ন কেড়ে খাব আজ! – কেড়ে নেব অধিকার!
বিশ্ব জুড়ে যে দাপিয়া বেড়ায় ভোগী জন্তুর দল,
চাপা পড়ে তার নিচে শত বঞ্চিত-ক্রন্দন-রোল।
রক্ত শুষিয়া মানুষেরে এরা করে কঙ্কালসার,
লালসার জিভে পেঁচিয়ে ধরেছে এ বিশ্ব-সংসার!
লুটেপুটে খায় ধনসম্পদ, অভাবী মুখের গ্রাস,
তাহাদেরি তরে আসিতেছে আজ ভীষণ সর্বনাশ!
বাঁচিবে না আর পৃথিবীর বুকে লোভী ভোগী বর্বর,
গরীবের ক্রোধে ভোগীর প্রাসাদ পুড়ে হবে ছারখার!
চাষার কাস্তে তোমার ভোগের জিহ্বা কাটিবে আজ,
তোমার মাথায় পড়িবে খোদার গজব স্বরূপ বাজ!
মহাযুদ্ধের রূপে আসিতেছে আল্লার ফরমান,
ঊর্ধ্ব হইতে আদেশ এসেছে, - কেড়ে নেব তোর প্রাণ!
হাড়ভাঙা খেটে খেতে নাহি পেয়ে মোরা কঙ্কালসার,
আমাদেরি পাঁজরের হাড় হবে যুদ্ধের তলোয়ার!
আজ জগতের ভোগীদের উল্লাসে এ ধরণী কাঁপে,
বঞ্চিতদের ক্রন্দনে খোদার আরশ ওঠে কেঁপে কেঁপে!
বিশ্বের মাঝে মানুষেরে দিতে ন্যায্য সে অধিকার –
এসেছে কোরান, এসেছে এ দ্বীন-ইসলাম আল্লার!
তাই এ ধরায় যেদিন কায়েম হবে তার ফরমান,
সেইদিন হতে ঘুঁচে যাবে ধনী গরীবের ব্যবধান!
মানুষের মত বাঁচার অধিকার সেদিন মানুষ পাবে,
হাসিবে ধরণী, সেইদিন হতে ঈদ সকলের হবে।
অন্ন, বস্ত্র পাবে সবে, নব জীবন পাইবে বুকে,
ক্ষুধার জ্বালায় পথেঘাটে কেহ মরিবে না ধুঁকেধুঁকে!
সুদের অভিশাপে সর্বস্বান্ত হবে না মানুষ আর,
গরীবের টাকা গরীব পাইবে – পাবে ফিরে অধিকার!
গরীবের সুখ ফিরিবে, ফিরিবে কৃষকের মুখে হাসি,
বাঁকা চাঁদ ঈদের খুশির বার্তা ছড়াবে আকাশে বসি'।
চাষাভুষা পাবে ন্যায্য ফসল, শ্রমিক মজুরী পাবে,
ধূলির ধরায় সত্যিকারের ঈদ সেইদিন হবে!