ছোট্ট খোকার প্রশ্ন মাকে – “কেন ও পথ দিয়ে –
যাচ্ছে মানুষ শত শত ফুলের তোড়া লয়ে?
আজকে কি গো হবে নাকি নীল পরীদের বিয়ে?
গাইবে সেথা গান কি মাগো দোয়েল, শালিক, টিয়ে?”
আসবে নাকি সিন্দাবাদের বিশাল সে রক পাখি?
ডালে ডালে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি নাচবে নাকি?
প্রশ্ন শুনে খোকার মাতা মুচকি হেসে কয় –
“না রে খোকা নীল পরীদের বিয়ে তো আজ নয়!”
হঠাৎ মাতা আঁচল তুলে মোছেন আঁখিযুগ,
অবাক চোখে শুধায় খোকা – “এত কিসের দুখ?”
“জানিস খোকা? এদিন প্রভাত বেলায় তোর মামায়,
দু'মুঠো ভাত খেয়ে ছোটে বিশ্ববিদ্যালয়।
দিন গড়িয়ে রাত্রি নামে, তবু নাহি ফেরে,
এইদিকে মা ডুকরে কাঁদে খানিক পরে পরে।
নিদ্রা নাহি আসে চোখে, রাত কাটে নির্ঘুমে,
দীলের মাঝে শঙ্কা জেগে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।
তন্দ্রা আসে ভোরবেলাতে, হঠাৎ কোলাহলে –
টুটল সে ঘুম, ছুটল সবে সদর দুয়ার খুলে।
দেখি একি! ভাইটা আমার খাটিয়াতে শুয়ে –
শাসায় কারে তর্জনীটা সামান্য উঁচিয়ে!
মূক হয়েছে তবুও তাহার নয়ন, বদন হতে,
দ্রোহের ভাষা ঠিকরে বেরোয় প্রতি মূহুর্তে!
সেই সে ভাষা পেয়েছি আজ, খোদার সেরা দান,
ইহার তরে ঝরল কত মায়ের ছেলের প্রাণ।
তাইতো বাছা তাদেরকে আজ বরণ করে নিতে,
ছুটছে সবে শহিদ মিনার, ফুলের তোড়া হাতে।“
অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরে মায়ের গণ্ড বেয়ে,
সরল চাউনি মেলে খোকা দেখে অবাক হয়ে।
হঠাৎ খোকা বলল – “মাগো! একটা কথা ক'ব,
বড় হলে আমি আমার মামার মতন হব।“
ঈষৎ হেসে আম্মাজানে বুকের মাঝে তুলে,
হাত বুলিয়ে মাথায় বলে – “আমার পাগল ছেলে!”
উত্সর্গঃ ভাষা শহিদদেরকে