বকরীদি চাঁদ উঠেছে ঊর্ধ্বে আঁধার গগন চিরে,
খালিদ এসেছে ঊর্ধ্ব আকাশে বাঁকা তলোয়ার ধরে!
ভোগীদের তরে নহে ঈদ, এ যে ত্যাগীদের তরে ঈদ,
লোভীর, ভোগীর সাম্রাজ্যের চুরমার করো খালিদ!
বিশ্ব জুড়িয়া উৎপীড়িতের চক্ষে নাহি ক নিঁদ,
উৎপীড়িতের রক্ত-মাংসে জালিম গড়েছে ভিত!
তখত-প্রাসাদ গড়িয়াছে দিয়া নির্যাতিতের হাড়,
অত্যাচারীর তখত-প্রাসাদ দাও করে চুরমার!
তপ্ত হয়েছে পৃথিবীর বুক জালিমের পদভারে,
উঠে আসে সব শহিদান তাই মাথা তুলে ভূমি ফুঁড়ে!
ঠাসিয়া ধরিবে বজ্র-হস্তে অত্যাচারীর টুঁটি,
মৃত্যু-দূতের ন্যায় ইহাদের শীতল হস্ত-মুঠি!
যুগযুগান্ত ভূগর্ভে শুয়ে দেখিয়াছে অনাচার,
সহিতে না পারি উঠিয়া এসেছে - হাতে পাঁজরের হাড়!
জালিমের কালো থাবা ভেঙে ওরা মজলুমের অধিকার –
ছিনিয়ে আনিবে – ঐ হাড়ে হবে জিহাদের তলোয়ার!
দলে দলে ওঠে খুনে রাঙা শত শহিদের কঙ্কাল,
দূর করে দেবে লাথি মেরে সবে সমাজের জঞ্জাল!
শহিদ হয়েছে কায়েম করিতে মজলুমের অধিকার,
ফাঁসির মঞ্চে ব্যঙ্গের হাসি হাসে এরা অনিবার।
মরণের মুখে দাঁড়ায়ে মৃত্যু-মুখে দেয় থুতু ছুঁড়ে,
এরা জানে এরা অমর; মৃত্যু আসেনি এদের তরে!
সত্যের তরে অবিরাম লড়ে লভে এরা শাহাদাত,
এদেরে দেখিতে উঠিয়াছে বুঝি আকাশে ঈদের চাঁদ!
অর্থ গুনিতে গুনিতে যাদের চুল গেছে সব পড়ে,
প্রাপ্য আদায় করিতে এসেছে কারা যেন তার দ্বারে!
ধনিকের দল! চেয়ে দেখ কারা দুয়ারে এসেছে তব,
ভিক্ষার থালা হাতে কতকাল ক্ষুধা-যন্ত্রণা স'ব?
দু'মুঠো অন্ন না পেয়ে মরেছে কত শিশু ঘরে ঘরে,
মোদের প্রাপ্য নাহি দিলে আজ কাড়িয়া লইব মেরে!
জমিয়ে জমিয়ে গড়িয়াছ গৃহে স্বর্ণ-রূপার পাহাড়,
তোমাদের সম্পদে আমাদের আছে আছে অধিকার!
দু'পয়সা দিয়ে করুণা করেছ? – করুণা চাহিনি মোরা!
হক মেরে খাবে? - দেখেছো মোদের হাতে ডাকাতের ছোরা?
মোদের প্রাপ্য দেবে না? তো শুনি – “বাঁচার সাধ কি আছে?”
প্রাপ্য না দিলে তোমার মরণ-ঘন্টা উঠিবে বেজে!
রক্ত শুষিবে আর কত? আজ দিতে হবে অধিকার,
তোমারে নাশিতে বকরীদি চাঁদ আজ বাঁকা তলোয়ার!
চারিদিকে আজ তাকাইয়া দেখি প্রতারকে ভরে গেছে,
সম্মুখে জপে আল্লার নাম, ‘শয়তান’ জপে পিছে!
পাঞ্জাবি গায়ে সঙ সাজে, গায়ে আতর মাখিয়া ঘোরে,
বাহিরে এদের সুবাস; ভেতরে ময়লায় গেছে ভরে!
ভণ্ড ইহারা, - এদের মনের তাকওয়া গিয়াছে মরে,
পশু মেরে মেরে এরা আল্লার সনে প্রতারণা করে!
ইব্রাহিমের মতন ঈমান-দীপ্ত ত্যাগী কি আছে?
তাঁহার ঈমান কণা পরিমাণ কার মনে আছে বেঁচে?
তোমার হৃদয়ে এতই যদিবা দীপ্ত ঈমান রহে,-
আপন পুত্র নেছার করিয়া দাও আল্লার রাহে!
বিশ্বের বুকে কায়েম করিতে আল্লার ইসলাম –
আপন পুত্রে শহিদ হতে দেবে, - আছে সে মুসলমান?
জালিমের মনগড়া নীতি ভেঙে মানুষের অধিকার –
আনিতে বিশ্বে প্রাণ দেবে আজ! – আছে সেই দিলাবার?
মুসলিম সেই! – আল্লার ‘পরে পূর্ণ যার ঈমান,
আল্লার রাহে দিতে পারে যারা আপনারে কুরবান।
নির্যাতিতের লাগি যারা প্রাণ দান করে হেসে হেসে,
সত্যের পথে আঘাত সয়েছে আল্লারে ভালবেসে।
প্রশান্ত হাসি দেখে ইহাদের, ক্লান্ত রক্ত-আঁখি,
অত্যাচারীর মসনদ ধরে দেয় ভীম বেগে ঝাঁকি!
হিমালয়-সম কুফরের বাধা ভেঙে যারা ছুটে চলে,
উল্কার বেগে ছোটে জালিমের তখত ও তাজ দ'লে!
আঘাতে আঘাতে টলে পড়ে রাজপথে, তবু মাথা তুলে-
ঝঞ্ঝার বেগে ছুটে চলে শৃঙ্খল দলে নব বলে,
অসির আঘাত বরণ করিয়া লয় বুকে হাসিমুখে,
কামানের গোলা প্রিয়া-জ্ঞানে যারা জড়াইয়া ধরে বুকে!
বুকের রক্তে রাজপথে যারা লিখে যায় ইতিহাস,
শাহাদাত-লোভে মরণের মার খেয়ে পথে হয় লাশ।
ঈদগাহ হতে আসিয়াছে ডাক শুধু ইহাদের তরে,
ভোগী-বিলাসীরে ঈদগাহ হতে তাড়া সবে লাথি মেরে!
দেশ, কাল, পাত্রের ভেদে ভালবাসে যারা মুসলিমে,
পরম স্নেহে ‘ভাই' বলে বুকে তুলে নেয় মজলুমে।
উল্কার বেগে ছুটে যায় শুনে মজলুমের হাহাকার,
ফেরেশতা সম আসে যেন এরা রহমত আল্লার!
অত্যাচারিত মুসলমানের সম্মুখে এসে যারা
ঢাল হয়ে সয় আঘাত, - যাদের চিত্ত শঙ্কা-হারা!
নিখিল উৎপীড়িতের কাঁদন বুকে ব্যথা হয়ে বাজে,
খোদার কাবায় যাবার এদের অধিকার শুধু আছে!
ইহারাই আল্লার সৈনিক, - লাঞ্ছিত-বুকে গতি,
নিরাশ-প্রাণে যুগে যুগে এরা জ্বালায় আশার বাতি!
মানবতার অতন্দ্র প্রহরী – কলেমার অসি হাতে –
দুর্বল মানুষের বল হয়ে লড়ে জালিমের সাথে!
খোদার রহমবারি ঝরে এদের ‘পরে; - মরণের পারে-
হযরত ডাকে ইহাদেরে ফিরদৌসের দ্বার ধরে!
যাহারা অকর্মণ্য, ঘুমায় শুধু তেল দিয়ে নাকে,
‘ভাই’ কাঁদে, - বুকফাটা ক্রন্দন কানে কভু নাহি ঢোকে!
এরা কেন আজ কাবার হজের যাত্রীর বেশ ধরে?
এদের হাজীর লেবাস আজিকে টেনে ফেল সবে ছিঁড়ে!
বকরীদ শুধু ত্যাগীদের তরে নজরানা আল্লার,
ত্যাগীদের শুধু আজি আনন্দে মাতিবার অধিকার।
দীন-দুখীদের তরে অকাতরে সম্পদ করে দান,
চাহে না আত্মকল্যাণ, চাহে শুধু পর-কল্যাণ।
সত্যের পথে প্রাণ হাতে লড়ে, নির্ভীক সেনা যারা,
আল্লার রাহে দান করে যারা নি:স্ব, সর্বহারা,
যার শুধু রয় আল্লা-রাসূল, - আর কিছু নাহি চাহে,
ইহাদের শুধু নামাজ পড়ার অধিকার ঈদগাহে!