এক আল্লায় ঈমান এনেছি – নাহি নাহি কোনো ভয়,
আল্লার 'পরে বিশ্বাসী যে বা – বিশ্বে সে নির্ভয়!
কোনো বাধা তারে রুধিতে পারে না সত্যের অভিযানে,
যত বাধা আসে, ততগুণ বল ঊর্ধ্ব হইতে নামে –
খরস্রোত সম বান্দার বুকে, খোদার তরফ হতে,
ঝলসে ওঠে রে মিথ্যের সংহারী অসি তার হাতে!
বিশ্বাসীদের মুসিবতে আল্লার সাহায্য নামে,
ছোটে দুর্বার বেগে – অলঙ্ঘ্য বাধার পাহাড় ভেঙে।
শোনো বিশ্বের অবিশ্বাসী!
আমার জন্মক্ষণে উঠেছিল তুফান সর্বনাশী!
বজ্রপাতের আঘাতে গৃহের ছাদ গিয়েছিল উড়ে,
ইস্রাফিলের প্রলয়-শিঙ্গা বেজেছিল একাধারে!
পূত-পবিত্র “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি শুনি' আমি –
জন্মেছিলাম; সে ধ্বনিতে মোর রোদন গেছিল থামি'!
পবিত্র সেই ধ্বনি তোলে হৃদে ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝনা,
শিরায় শিরায় জাগে মোর বিপ্লবের উন্মাদনা!
উন্মাদনার জোশে ঘোষি' আমি মুক্তির অভিযান –
জালিমের কালো থাবা ভেঙে দিতে নিখিল-পীড়িতে ত্রাণ!
পীড়িতের হাহাকার যেথা – ঝঞ্ঝার বেগে ছুটে আসি,
খোদার কৃপায় ঝলসে ওঠে এ হাতে খালিদের অসি!
কত নদী, কত সাগর ও মরু পেরিয়ে চলি রে আমি,
উৎপীড়িতের ক্রন্দন যেথা – লয়ে যায় মোরে টানি'।
কত যন্ত্রণা, আঘাত ও বাধা পেয়েছি এ পথে তবু –
ঝর্না-সম এ অধমের 'পরে করুণা ঝরাল প্রভু!
আজো এ ধরণী কেঁপে কেঁপে ওঠে মজলুমের হাহাকারে,
অট্টহাসি সে জালিমের ওঠে তামাম বিশ্ব জুড়ে!
কত জনপদ বিলীন হয়েছে জালিমের অত্যাচারে,
দুখের দাহনে পীড়িতের অশ্রু শুকায়েছে - নাহি ঝরে!
মজলুমানের ক্রন্দনে আজো আকাশ-বাতাস ভারি,
জালিমের উল্লাসে চাপা পড়ে পীড়িতের আহাজারি।
বিশ্ব জুড়ে এ জালিম পীড়িতে কতকাল যাবে দ'লে?
দুখের অনল, ক্রোধানল হয়ে কেন বুকে নাহি জ্বলে?
বঞ্চিত-পীড়িত-ক্রন্দন কেন ধরা জুড়ে উদ্ভবে?
পালটে দেব এ তামাম ধরা মহাবিদ্রোহে-বিপ্লবে!
হারাম করিব তামাম বিশ্বের অত্যাচারীর ঘুম –
রণহুঙ্কারে কাঁপাইয়া তুলি' মহাবিদ্রোহী রণভূম!
আজন্ম মুজাহিদ আমি, মোর নাহি ক' মৃত্যুভয়,
মানি না ক' কোনো কুফরের বাধা, মানি না ক' পরাজয়!
ঝঞ্ঝা-তুফান বেগে জালিমের শিরে এসে টুটে পড়ি,
এক হাতে প্রাণ লয়ে, আর হাতে কোরানের অসি ধরি।
পুষ্প-কোমল হয়ে কভু মুছি পীড়িত-চোখের পানি,
জালিমের শিরে বজ্রপাতের মত এসে আঘাত হানি!
বাজের মতন অত্যাচারীর বক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ি'-
তীক্ষ্ণ নখর-চঞ্চুর আঘাতে ফালি ফালি করে ছিঁড়ি!
স্বৈরাচারীর বক্ষে হানি রে ভীমবেগে পদাঘাত,
জালিমের টুঁটি ছিঁড়ে খুন শুষি – উন্মাদ! উন্মাদ!
নিত্য যুঝি রে তাগুতের সাথে – আমি চির-নির্ভীক –
সত্য-পথের মুজাহিদ, আল্লার চির-সৈনিক!
জুলুম দেখিয়া শেরে খোদা-সম হাঁকি রণ-হুঙ্কার,
গগন কাঁপিয়ে – “নারায়ে তাকবীর! আল্লাহু আকবার!”
ইসলাম এল ভাঙিতে মানব-গোলামীর জিঞ্জীর,
শেখাল মানুষে এক খোদা বিনে কভু না নোয়াতে শির।
জুলুম নাশিয়া ইনসাফ আনিতে ভেঙে করে বরবাদ –
স্বার্থপরের নীতি, মানুষের মনগড়া মতবাদ!
মানুষেরই মাঝে মানুষেরই গড়া বিভেদ-প্রাচীর ভেঙে –
ধনী-গরিবের ব্যবধান মুছে দিল সে সাম্য এনে!
একই কাতারে লয়ে এল উঁচু-নিচু ও বাদশা-ফকির,
সাম্যের হাতুড়ি মেরে ভেঙে দিল ভেদ-বিভেদের প্রাচীর!
মুসলমানের জন্ম – পীড়িত বদনে ফোটাতে হাসি,
খুনে রাঙা মুক্তির রবি আনে জুলুমের আঁধার নাশি'।
বীরের ধর্ম 'ইসলাম' – কভু ভীরুর ধর্ম নহে,
মুসলিম সে-ই – জুলুম পীড়নে জ্বলে ওঠে বিদ্রোহে!
পীড়িতের অধিকার কায়েম হল কবে বিপ্লব বিনে?
খুনের দরিয়া সাঁতারি ধরায় আসিয়াছে ইসলামে!
কোনো প্রলোভন, ভয়ভীতি, জেল-জুলুম-অত্যাচার –
ফিরাতে পারেনি সম্মুখ গতি হতে – মানিয়াছে হার!
কেবলি অগ্রপথে ছুটি মোর আল্লার আহ্বানে,
উন্মাদ-বেগে তাঁর পানে ছুটি পরম প্রেমের টানে।
মোর ধ্যান-জ্ঞান চির-চাওয়া খোদা পরম শক্তিমান,
মোরে বাধা দেবে কোন চির-অভিশপ্ত সে শয়তান?
কত বিদ্রোহী, বিপ্লবী ছিল মোর প্রাণাধিক সখা,
সুবিধাবাদের ধ্বজা উড়াইয়া ফেলে গেল মোরে একা।
রহিল কেবলি মোর সাথে মোর আল্লার রহমত,
পেরোই নিমিষে তাই বিপদের অলঙ্ঘ্য পর্বত।
এ অধম 'পরে তাঁর রহমের বারিধারা ঝরে তাই –
দুর্গম গিরি, দুস্তর পারাবার পার হয়ে যাই!
ছুটি কত দুর্গম অরণ্যে, কাঁটাভরা পথ ধরে,
রক্ত-সাগর সাঁতারি পেরোই – কেহ রুধিতে না পারে!
সম্মুখে ছুটি, সহসা কে যেন পিছু হতে মোরে টানে!
পেছনে ফিরিয়া দেখি চির-অভিশপ্ত সে শয়তানে!
জন্মলগ্নে উঠেছিল ঝড় – সে ঝড় ফিরিয়া এল,
প্রলয়ঙ্করী তুফানে বিশ্ব হয় বুঝি এলোমেলো!
সহসা খোদার তেজ কোথা হতে এল, তাহা নাহি জানি,
খোদা-প্রদত্ত ঐশী শক্তি মোর দেহে এল নামি!
“আল্লাহু আকবার!” – হেঁকে মারি শয়তান শিরে লাথি!
খোদার আরশ পানে ছুটে চলি লয়ে উল্কার গতি!
মোর সে পরম প্রভু আল্লায় আদেশ দিয়াছে মোরে –
উৎপীড়িতের ক্রন্দন যেথা – যা রে তলোয়ার ধরে।
সেই ফরমান লয়ে অবিরাম ভীমবেগে চলি ছুটে,
তুফানের বেগে অত্যাচারীর শিরে পড়িয়াছি টুটে!
খোদার আদেশ – “পীড়িতের তরে লড়ে যা, পাস নে ভয়,
শহিদী মৃত্যু লভিতে পারিলে 'বিশ্বাসী'র হয় জয়!”
কক্ষচ্যুত গ্রহের মতন তাই সদা চলি ছুটে,
নির্যাতিতের হাহাকারে মোর আঁখি-নিদ গেছে টুটে!
সত্যের বুকে যুগে যুগে যারা হানিয়াছে পদাঘাত –
ত্রাস সৃজে আজি বিনাশ করিব হানিয়া বজ্রাঘাত!
দু:শাসনের বক্ষ ফাঁড়িয়া খেলিব রক্ত-হোলি,
জুলুমের শত শৃঙ্খল যাব ভেঙে পদতলে দলি'!
নিশ্বাস-প্রশ্বাসে নিশিদিন প্রভু মোর প্রার্থনা –
আমার শহিদী রক্তে লিখিও আমার আমলনামা!
এক আল্লার সৈনিক আমি, মানি না ক' বাধা-ভয়,
আল্লাহ বিনে কারো সম্মুখে শির নত নাহি হয়!
আল্লার শক্তিতে সব বাধা-বন্ধন ভেঙে যাই,
পথরোধী তাগুতেরে তাঁর তেজে জ্বালাইয়া করি ছাই!
ঝঞ্ঝা-তুফান, উল্কা-বৃষ্টি - জন্মের সাথী আমার,
“জিহাদ! জিহাদ! বিপ্লব! বিদ্রোহ!” – মোর হুঙ্কার!
(শব্দার্থ: *) প্রলয়-শিঙ্গা: হযরত ইস্রাফিল যে শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে কেয়ামত আনবে।
সৃজে – সৃষ্টি করে, শেরে খোদা – হযরত আলীর উপাধি। এর অর্থ আল্লাহর বাঘ।
টীকা:
*) খালিদ - ইসলামের ইতিহাসে অদ্বিতীয় বীর হযরত খালিদ (রা) । খালিদের রণকৌশল ছিল অসাধারণ। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন যুদ্ধ করতেন তখন দূর থেকে দেখে মনে হত খালিদ যেইদিকে অশ্বপৃষ্ঠে ছুটছে, সেইদিকে যেন শত্রুর ব্যূহ ভেঙে পড়ছে তাঁর তরবারির আঘাতে।
ইসলামের বড়বড় জয়গুলো তাঁর হাত ধরেই আসে।
৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মুতার যুদ্ধে বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে তিনি সাইফুল্লাহ (খোদার কৃপাণ বা আল্লার তরবারি) উপাধি লাভ করেন।)