খুব গভীরভাবে কবিতা পড়তে হবে, কবিতার ভিতরে ডুবে কবিতা পাঠ। একেকটা শব্দ পাঠককে কবির আরও কাছে নিয়ে যাবে, একজন কবি পাঠক হয়েও আসর মাতাতে পারেন, তখন একটা কবিতা লিখলে, দশটা কবিতা পাঠ, নাকি পুরো আসরের কবিতাই! পাঠক-কবি হলে মোটেও তা অসম্ভব নয়, কেননা কবিতাই তখন তার দিনের প্রধান খোরাক। মন্তব্যের কথা কিন্তু বলছিনা। কবিতা পাঠ, কোন কবিতায় মনে ভাবাবহ সৃষ্টি হলে তবেই মন্তব্য!
একটা কবিতায় বহু মন্তব্যই কি দারুন এক কবিতা করে তোলে! মন্তব্য দিয়ে কবিতা রিফাইনিং করা হয়! বাহ, বেশতো! ফলে একটা অপেক্ষাকৃত অপরিপক্ক কবিতাও পরিণতি লাভ করে। কবিতা লিখার এটাই বোধ হয় আসরের চিরন্তন রীতি!! সাম্প্রতিককালে আলোচনা সভায় কবিদের কবিতাবিষয়ক জ্ঞানগর্ব আলোচনা ও বিদগ্ধ কবি-পাঠকবর্গের সুনিপুণ কাব্য-সমালোচনা পড়ার পর এ বিষয়ে আমার জ্ঞানভাণ্ডার প্রভূত সমৃদ্ধি অর্জন করেছে! প্রথমেই যেটা বুঝতে পেরেছি তা হলো, একটা কবিতা লিখে ছেড়ে দিলেই কবি হিসেবে আমার দায়িত্ব প্রায় শেষ, ও-কবিতার অর্থ বা শাব্দিক কিংবা আক্ষরিক অর্থ উদ্ধারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পাঠক-কবির আর আমার দায়িত্ব বাকীদের কবিতা জুড়ে স্তুতি গান করা। তাহলেই আমার মন্তব্যের পাতা ভরে কবিতার পরিনতি ঘটবে! কবিতার মন্তব্যের পাতায় কবি পাঠকের যত স্তুতি হবে, কবি হিসেবে আমার কৃতিত্ব বা বড়ত্ব ততোই বেশি। কবি-পাঠক সকলেই তাতে জটিল সৃজনীশক্তির কাছে পরাস্ত হয়ে আসরে আমাকেই কুর্ণিশ করবেন!
কবিতা যদি পানির মতো তরল ও স্বচ্ছ হয়, তা সত্যিকারেই কোনো কবিতা হয় না বোধ হয়! আমাদের আসরে কিছু কবি তাই মনে করেন। আমিও শুনেছি মন্তব্যে সোজা সাপ্টা কবিতা! তাহলে আমার প্রিয় কবি জসীম উদ্দীনের কবিতা সেই বিবেচনায় ‘কবিতা’ কিনা তা এখন তাঁদের বিচার্য্য বিষয় বটে! আজ সেকথা থাক, অন্যদিন আসবো প্রাঞ্জলতা নিয়ে! তবে আসরে তথা ব্লগে কবিতা লিখে নাম কামানো, নজরুল-রবীন্দ্র যুগের চেয়ে আজকাল অনেক অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিছু সাবলীল ও কিছু অপ্রচলিত শব্দগুচ্ছ ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে নতুন করে ছেড়ে দিলেই হলো, তার যদি একটা ভাল অর্থ থাকে তো ভালো, না থাকে তো আরো ভালো- বুদ্ধিমান কবি-পাঠকগণ জটিল ও দুরূহ গাঁথুনির মন্তব্যের ভেতর দিয়ে অমূল্য ব্যখ্যা তুলে এনে সগর্বে কবির সামনে উপস্থাপন করবেন। ঐ যে আগেই আমি তাদের কবিতায় স্তুতি করে এসেছি! কবি অতিশয় চমত্কৃত হবেন, এটাইতো তার কবিতার পরম পাওয়া! এতো বাঙ্ময়, এতো বহুব্রীহিময় মন্তব্য- কবি নিজেও হয়তো কবিতা রচনার কালে ভেবে উঠতে পারেন নি। প্রকৃতপক্ষে, কবিতার অন্তর্নিহিত অর্থোদ্ধারের দায়িত্ব পাঠকেরই, কবির নয়, কবি-পাঠকগণই গবেষণা করে বের করবেন রচিত কবিতার মুল কথা, তবে মন্তব্য আর কবির ভালবাসার প্রতিদানে, সেটা যেন স্রেফ তেলে ভাজা স্তুতি না হয়ে যায়! আমি বোধ হয় এটাই বলতে চেয়েছিলাম। সর্বোপরি এবং প্রায়শ, কবির চেয়ে কবি-পাঠকগণই কবিতা বিষয়ে বেশী ভাল বলতে পারেন, তা যেন বাস্তব সম্মত হয়! আমি আসরের জনপ্রিয় সিনিয়র বিজ্ঞ কবির মাঝেও এ ধনের প্রবনতা দেখেছি! যার দরুন আজ আমার মন্তব্য করার স্বাদ মরে গেছে!!
কবি-পাঠকের মাঝে (যাঁরা বেশিরভাগই আমার অগ্রজ ও আমার থেকে সর্বাংশে পরিণত) খুব সাহস করেই আসরের কবিতা ও মন্তব্য নিয়ে ধারণাটা দিলাম। আপনাদের তিক্ত, ত্যাক্ত ও বিরক্তির মতামত পেলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।