আজকাল প্রায়ই লেখা চুরির অভিযোগ শোনা যায়, এটা ঠিক যে একটি লেখা আসল লেখকের কাছে তার সন্তানের মতোই। কিন্তু সেই লেখা যদি কেউ চুরি করে তাহলে তার কষ্ট লাগাটাই স্বাভাবিক। তবে সাহিত্য চুরি (প্লেজিয়ারিজম) বা লেখা চুরির ঘটনাটি মোটেও নতুন কিছু নয়। মহান লেখকেরাও নাকি লেখা চুরি করেছেন, লেখা ধার করেছেন। আসুন সেসব কিছু বিখ্যাত প্লেজিয়ারিজম-এর তথ্য জেনে নেই। বিখ্যাত মার্কিন লেখক এডগার অ্যালেন পো গল্প, উপন্যাস ও কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। এই বিখ্যাত লেখক আমাদের প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশেরও প্রিয় কবি ছিলেন। জীবনানন্দ দাশের অতি বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’-এর উৎস এডগার অ্যালেন পো’র কবিতা ‘টু হেলেন’। পো’র ‘হেলেন’ থেকে হয়েছে জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’। এডগার অ্যালেন পো আমাদের কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথেরও নাকি প্রিয় কবি ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ‘একই গাঁয়ে’ আর এডগার অ্যালেন পো’র ‘অ্যানাবেল লি’ একই কবিতা। পার্থক্য বলতে অ্যালেন পো লিখেছিলেন ইংরেজিতে আর কবি গুরু লিখেছিলেন বাংলায়। বলতে গেলে কবিগুরুর অনেক লেখাই নাকি ইংরেজী সাহিত্য থেকে কপি করা!!! এমনকি মনোযোগ দিয়ে শুনলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক গানের সুরেও বেশ কিছু ইংরেজি গানের সুরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের লেখক হর্ষ দত্ত খোলাখুলি লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নেওয়া হয়েছে মেটারলিংকের ‘ব্লু বার্ড’ থেকে। হর্ষ দত্তের মতে, অবনীন্দ্রনাথের ‘বুড়ো আংলা’ আর সেলমা লাগেরলফের লেখা ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল অ্যাডভেঞ্চারস অব নিলস’ প্রায় হাত ধরাধরি করে চলেছে। বিষ্ণু দের অনেক কবিতায় গাঢ় ছায়া ফেলেছেন টি এস এলিয়ট। তাই তাকে বাংলার এলিয়ট বলে ডাকা হতো। সুকুমার রায়ের প্রচুর ছড়া এডওয়ার্ড লিয়র ও লুইস ক্যারলের প্রত্যক্ষ প্রভাবে লেখা। আমাদের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যারও নাকি অনেক বিদেশী গল্পের ভাব চুরি করে, উপন্যাস লিখেছেন! এই কথাগুলি কিন্তু, এসব বিখ্যাত লেখকদের সমালোচকেরও হতে পারে! মজার ব্যাপার আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কিংবা সমালোচনা নেই! তবে এই প্লেজিয়ারিজম বা সাহিত্য চুরির ব্যাপারে অনেকরই মতের ভিন্নতা রয়েছে। যেমন জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন এবং এডগার অ্যালেন পো’র টু হেলেন’ কবিতা দুটোর বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট একই হলেও কবিতা দুটোর উপস্থাপন ভঙ্গিতে বেশ অমিল রয়েছে। তাই কোন লেখা হঠাৎ মিলে গেলেই অনেকে সেটাকে প্লেজিয়ারিজম বা সাহিত্যচুরি বলতে চান না। বরং এই বিষয়টিকে অনুকরণ করা বললেই খানিকটা ভালো শোনায়। আবার অনেকের মতে, সাহিত্য সংস্কৃতির বিনিময় না হলে কোনো সাহিত্যই সমৃদ্ধ হয় না। কথায় আছে, ভালো লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হবে। তাই আমাদের লেখক, কবিরা যেমন অন্য দেশের কবি-সাহিত্যিকদের বই পড়েন। তেমনি তাঁরাও আমাদের দেশের কবি-সাহিত্যিকদের বই পড়েন বলেই আমার বিশ্বাস। ডিজিটাল এই আধুনিক ইন্টারনেট কল্যানে সেটি আরো সহজ হয়ে গেছে! প্রসঙ্গত আমার এই লেখাটির অনেকটা অংশই, ইন্টারনেট হতে তথ্য সংগ্রহ করে, আসরের কবিবন্ধুদের জানার সার্থে তুলে দিলাম, জানিনা সেটিও ইংরেজ ভদ্রলোকের ভাষায় প্লেজিয়ারিজম হলো কিনা!!!
(তথ্যগুলো সংগ্রহ করা, তাই মতামতের জন্যে লেখক দায়ী নন, যুক্তি খন্ডন ও গ্রন্থনায় লেখক)