মাঃ
মা (ইংরেজীঃ Mother, Mum, Mom) হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন। মা শব্দের সমার্থক শব্দ হচ্ছে - জননী, গর্ভধারিণী, আম্মা, আম্মু, আম্মাজান, আম্মী, মাম্মি, মাতা ইত্যাদি। মা, মা, এবং মা। প্রিয় এবং মূল্যবান শব্দ একটিই, এবং একটিই মাত্র। শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন -মা। প্রিয় অনুভূতি -মা। প্রিয় ব্যাক্তি –মা। প্রিয় দেখাশুনা –মা। প্রিয় রান্না -মা। প্রিয় আদর -মা। সব ‘প্রিয়’ গুলোই শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করেই সব প্রিয় স্মৃতি। কারণ মা-ই পৃথিবীতে একমাত্র ব্যাক্তি যে কিনা নিঃশর্ত ভালবাসা দিয়েই যায় তার সন্তানকে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া। পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায়ই 'মা'-এর সমার্থক শব্দটি 'ম' ধ্বনি দিয়ে শুরু হয়। ইসলাম ধর্মের একটি হাদীসে ইসলামের নবী মুহাম্মদ বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ)। অন্যান্য ধর্মেও, মাকে সবার উপরে স্থান দেয়া হয়েছে।

মাতৃত্বঃ
মাতৃত্ব-ইংরেজীঃ Matritwa-The Motherhood, একজন নারীর জীবনের সার্থকতা মাতৃত্ব। মানুষই হোক কিংবা পাখি-প্রাণীই, ঘরই হোক কিংবা নীড়, তার পরিপূর্নতা আসে সন্তানে। স্ত্রী প্রজাতির সার্থকতা মাতৃত্ব! হোক মানুষ কিংবা অন্য কোন পাখি-প্রাণী।

মায়ের ভালবাসাঃ
এই দুনিয়ায় আসার আগে থেকেই তাকে অসহ্য যন্ত্রনা দিয়েছি আমরা। কিন্তু ভুমিষ্ট হওয়ার পর আমাদের মুখ দেখে, এই মমতাময়ীর ভূবনভুলানো হাসি, তার সব কষ্ট মুছে দেয়। নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায় তার সন্তান। আর এই সন্তানের মাঝেই সে খোঁজে পায় পৃথিবীর সব সুখ। ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতে থাকে নিজের ছেলে বা মেয়েটিকে নিয়ে। রাত-দিন, সময়, অসময় কিছুই বুঝে না অবুঝ সন্তান, নিজের প্রয়োজন হলেই কান্না আর মাকে জ্বালাতন। মায়ের মুখে কি তবুও একটু বিরক্তির চিহ্ন পাওয়া যায়। নিশ্চই না, কারন এই সন্তানই যে তার কলিজার টুকরো ।শত কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে তিলে তিলে এই অবুঝ শিশুটিকে বড় করে তোলে এই মা। কত শীতের রাত যে ভিজা বিছানায় নিজে ঘুমুন আর কত রাত যে নিদ্রাহীন ভাবে কাটিয়ে দেন, তা শুধু এই মহামানবীই মা'ই বলতে পারবেন। দুনিয়াতে এই একটি মানুষই আছে, যার ভালবাসা কখনো খন্ডন করা যায় না। স্বার্থপর এই দুনিয়ায় সময়ের সাথে সাথে সবাই স্বার্থপর হয়ে যায়, কিন্তু মায়ের ভালবাসা এতই গভীর যে, এখানে স্বার্থপরতার একটি ধূলি কনাও পাওয়া যায় না। অকৃত্রিম এই ভালবাসা।

শুধুই ভালবাসাঃ
ভালবাসা ও মায়ের ভালবাসা বোঝানোর জন্যে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ভালবাসা জানা প্রয়োজন বোধ করি। পরে ভালবাসা নিয়ে অনুসন্ধানী কিছু লিখার ইচ্ছা থাকল বিস্তরভাবে।

ভালোবাসাঃ একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়,বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায়না। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিস্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি। ধনাত্নক অনুভূতির কথা বিবেচনা করে ভালোবাসাকে ঘৃণার বিপরীতে স্থান দেয়া যায়। ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা একটা গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশী গুরুত্ববহন করে। কল্পনাবিলাসীতার একটা ক্ষেত্র হচ্ছে এই ভালোবাসা। ভালোবাসা সাধারণত শুধুমাত্র বন্ধুত্ব্ব নয়। যদিও কিছু সম্পর্ককে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব বলেও অভিহিত করা যায়।

মা দিবসঃ
(ইংরেজীঃ Mother's Day) মা দিবস হল মায়ের সন্মানের প্রতি অনুগত্য প্রকাশের জন্য বছরের একটি বিশেষ দিন। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উদযাপিত হয়ে আসছে এ দিবস। এই দিনটি মূলত বিশ্বের অনেক দেশে বিভিন্ন দিনে আলাদাভাবে উদযাপন করা হয়ে থাকে। সারাবিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসেই বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯১২ সালে আনা জার্ভিস মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) গঠন করেন। এমনকি তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রোববার’ আর ‘মা দিবস’ এই দুটি শব্দের বহুল প্রচারণা চালাতে সক্ষম হন।

আনা জার্ভিস ও মা দিবসঃ
মে মাসের ২য় রবিবারকে মা দিবস করার মূলে আছেন Anna M. Jarvis (1864-1948) নামের Philadelphia র একজন স্কুল শিক্ষিকা। ১৯০৭ সালের মে মাসের ২ য় রবিবার ছিল আন্না জার্ভিসের মায়ের (Ann Maria Reeves Jarvis.) মৃত্যু বার্ষিকী। সেই দিনটিকেই আন্না জার্ভিস মা দিবস হিসেবে পালন করেন এবং রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদের কাছে এই দিনকে মা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য ও সরকারীভাবে ঘোষনা করার জন্য চিঠি লিখতে শুরু করেন। সবাইকে মা দিবসের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেন আন্না জার্ভিস। পরের বছর Philadelphia রাজ্যজুড়ে পালিত হয় মা দিবস। অ্যানা রিভেস জারভিস তার জীবনের সুদীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়েছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের একটি গির্জায়। সেখানে তিনি সানডে স্কুলের শিক্ষকতা করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মা দিবস ঘোষণা আন্দোলনের হাল ধরে। অ্যানা জীবিত ও মৃত সব মায়ের প্রতি সন্মান জানানোর তথা শান্তির জন্য এই দিবসটি পালন করতে চাচ্ছিলেন। এই লক্ষ্যে তারা ১৯০৮ সালে গ্রাফটনের ওই গির্জার সুপারিনটেনডেন্টের কাছে একটি আবেদন জানায়। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সে বছরই ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভেনিয়ার কয়েকটি গির্জায় মা দিবস পালিত হয়। এভাবে অনেকেই প্রতিবছরই মা দিবস পালন করতে শুরু করে। ১৯১৪ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দান করেন। তার আরও পরে ১৯৬২ সালে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

দেশে দেশে মা দিবসঃ
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, মা দিবস পালন করার রীতি এ যুগের নয়। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগেও অনেক জায়গায় এই দিবসটি পালন করতো মানুষ। কী অবাক হচ্ছেন! খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই মিশর, রোম ও গ্রিসে মা দিবস পালন করা হতো। তবে সে দিবসটা ঠিক আমাদের বর্তমানের মা দিবসের মতো ছিলো না। সেটাকে দেবতাদের মায়ের আরাধনা বলা যায়। সেসময়ে দেবতাদের মায়েদের (যেমন দেবী আইসিস, সিবিলি, রিয়া) পূজা করা হতো।

এদিকে ১৬ শতকে ইংল্যান্ডে মা দিবস পালন করা হতো বলে জানা যায়। এটাই ছিলো দেব-দেবীদের মা ছাড়া নিজের আসল মাকে নিয়ে মানে রক্ত মাংসের মাকে নিয়ে মা দিবস। দিবসটি তারা মাদারিং ডে হিসেবে পালন করতো। সেদিন সরকারি ছুটিও ছিলো। পরিবারের সবাই তাদের মায়ের সাথে দিনটি কাটাতো। তবে এই দিবসটি ততোটা প্রসার লাভ করেনি। ব্রিটিশরা আমেরিকায় তাদের কলোনি স্থাপন শুরু করার পর ইংল্যান্ড থেকে দলে দলে মানুষ আমেরিকায় বসবাস করতে শুরু করে। আমেরিকার এই সব নতুন অধিবাসীরা ইংল্যান্ডের মাদারিং ডে’কেও আমেরিকায় আমদানি করে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে। কিন্তু নানা কারণে সেটা তারা চালু রাখতে পারে না।

এর প্রায় ১০০ বছর পর ১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একটি দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন। সে গানটা সে সময় বেশ জনপ্রিয় ছিলো। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছিলো কারণে বা অকারণে। এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিলো অবলীলায়। এই সব হত্যায দেখে জুলিয়া খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে একসাথে করতে চাচ্ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন। তার লক্ষ্য ছিলো এই দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করার। তিনি ব্যাপকভাবে সাড়া না পেলেও তার নিজের শহর বোস্টনে দিবসটি পালিত হচ্ছিলো বেশ ঘটা করেই। এদিকে ভার্জিনিয়ার একটি মহিলাদের দল জুলিয়া ওয়ার্ড হাও-এর প্রস্তাবিত মা দিবসটি পালন করতো বেশ মর্যাদার সঙ্গেই। এই দলের নেত্রী ছিলেন অ্যানা রিভেস জারভিস। তিনি গৃহযুদ্ধের সময়কালে ‘মাদার’স ফেন্ডসিপ ডে’ পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই দিবসের পালনের কারণে গৃহযুদ্ধ সময়কালে অনেকটাই শান্তির বার্তা এনে দিয়েছিলো।

মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মা দিবস হলেও সব দেশ এই দিবসটি পালন করে না। আসলে অনেক দেশেরই আলাদা আলাদা মা দিবস আছে। আর সেই দিনেই তারা মা দিবস পালন করে। অনেকে মনে করেন, অন্যসব দেশে পৃথক দিনে মা দিবস পালন করলেও সেটা আসলে আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের অনুকরণ। বির্তকে না গিয়ে, কোন দেশ কবে মা দিবস পালন করে সেটা একটু চোখ বুলিয়ে দেখা যাক।

নরওয়েতে ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিকে আফগানস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুস, বসনিয়া ও হারজেগোভিনা, বুলগেরিয়া, লাওস, মেসিডোনিয়া, মলডোবা, মন্টেনিগ্রো, রোমানিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন, দক্ষিন কোরিয়া ৮ মার্চ মা দিবস হিসেবে পালন করে। আবার আলবেনিয়া, বেলারুস, বুলগেরিয়া, গায়ানা, ইটালি, মেসিডোনিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং রশিয়া ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবেও পালন করে। রাহরাইন, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, লেবানন, প্যালেস্টাইন, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সুরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন ২১ মার্চ মা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। আবার হাঙ্গেরি, লিথুনিয়া, পর্তুগাল, স্পেন মে মাসের প্রথম রবিবার মা দিবস হিসেবে পালন করে। এদিকে প্যারাগুয়ে ১৫ মে, পোল্যান্ড ২৬ মে, বলিভিয়া ২৭ মে এবং নিকারাগুয়া ৩০ মে মা দিবস পালন করলেও আলজেরিয়া, ডমিনিকান রিপাবলিক, ফ্রান্স, হাইতি, মৌরিতাস, মরক্কো, সুইডেন ও তিউনিশিয়া মে মাসের শেষ রবিবার মা দিবস পালন করে। জুনের ১ তারিখে মঙ্গোলিয়া মা দিবস ও শিশু দিবস পালন করে। মঙ্গোলিয়া হচ্ছে একমাত্র দেশ যে বছরে দুবার মা দিবস পালন করে। লুক্সেমবার্গ জুনের দ্বিতীয় রবিবার, কেনিয়া শেষ রবিবার মা দিবস পালন করে। থাইল্যান্ড তাদের রাণী সিরিকিট কিতিয়াকারার জন্মদিনকে মা দিবস হিসেবে পালন করে ১২ আগস্ট। কোস্টারিকা ১৫ আগস্ট, মালাও অক্টোবরের দ্বিতীয় সোমবার, বেলারুস ১৪ অক্টোবর, আজেন্টিনা অক্টোবরের তৃতীয় রবিবার, পানামা ৮ ডিসেম্বর, ইরান ১৬ ডিসেম্বর এবং ইন্দোনেশিয়া ২২ ডিসেম্বর মা দিবস পালন করে।

মা দিবস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পালন করা হয় । শুধু কী তাই, দেশভেদে এই বিশেষ দিবস পালনের রীতিও ভিন্ন ভিন্ন। তবে সব দেশের রীতিতে যত ভিন্নতাই থাকুক একটা ব্যাপারে সবাই কিন্তু সেটা আর কিছুই নয়, সবাই চায় এই দিনে মাকে খুশি করতে। মায়ের সাথে সময় কাটাতে, মাকে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানিয়ে উপহার দিতে আরও অনেক কিছু।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেটিনার কথাই ধরা যাক। এই দেশটি অক্টোবর মাসের তৃতীয় রবিবার মা দিবস পালন করে থাকে। এই সময়টা আর্জেটিনায় বসন্তকালের আমেজ থাকে। তাই মা দিবসে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে বেরোয়। অবশ্য সবাই যে বাইরে ঘুরতে যায় এমন নয়। যারা বাড়িতে থাকে, তারা মাকে খুশি করতে নানান কাজ করে থাকে। যেমন ধরো, মায়ের সন্মানে তারা একত্রে খাওয়া দাওয়া করে, কবিতা আবৃত্তি করে। আবার স্কুলে গিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখে বা নিজে হাতে কার্ড বা অন্যকিছু বানিয়ে মাকে উপহার দেয়। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, এইদিনে মায়ের কথা তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এদিকে এইদিনে আর্জেটিনায় পরিরবারের বাবা রান্না ও ঘরের অন্যান্য কাজ করে। যেন আজ মায়ের ছুটি। তাছাড়া মাকে ফুল, কার্ড, ক্যান্ডি, অলংকার বা অন্য চমকপ্রদ কিছু উপহার দেয়। এদিকে ফ্রান্স মে মাসের শেষ রবিবার মা দিবস পালন করে আসছে ১৯২০ সাল থেকে। এই দিনটি তারা সরকারীভাবে পালন করা হয়। মজার ব্যাপার , যে মায়ের যত বেশি সন্তান তার তত বেশি সন্মান। এজন্য যে মায়ের চার বা পাঁচটি সন্তান আছে তাকে মা দিবসে সরকারীভাবে ব্রোঞ্জ পদকে পুরস্কৃত করা হয়। একইভাবে যার ছয় বা সাতটি সন্তান তাকে রৌপ পদক এবং যার আটটি বা তারও চেয়ে বেশি সন্তান তাকে স্বর্ণপদক দিয়ে সন্মান জানানো হয়। জাপানে মা দিবসের পৃথক একটি নাম আছে। তারা মা দিবসকে বলে ‘হাহা নো হি’। ১৯১৩ সাল থেকে জাপানি খ্রিস্টানরা আমেরিকান রীতিতে মা দিবস পালন করতে শুরু করে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে পশ্চিমাদের অনুকরণে এই দিবসটি পালন করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যুদ্ধের পর থেকে আবার তারা মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালন করছে। জাপানিরা এই দিনে মাকে ফুল, রুমাল এবং হাতব্যাগ উপহার দেয়। বাড়িতে আয়োজন করা হয় জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবারের।
মেক্সিকোতে অনেক আগে থেকেই মা দিবস পালন করা হয়। মেক্সিকানরা ১০ মে মা দিবস পালন করে। সকাল বেলায় পরিবারের সবাই মিলে মাকে গান শুনিয়ে মা দিবস শুরু হয়। মাঝে মাঝে ব্যান্ড দলও ভাড়া করে আনা হয় গান গাওয়ার জন্য। মায়ের জন্য সন্তানরা ফুল আর চকোলেট কেনে।

এক নজরে তালিকাটিঃ
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রোববারঃ নরওয়ে
২ ফেব্রুয়ারীঃ গ্রিস
৩ মার্চঃ জর্জিয়া
৮ মার্চঃ আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগভিনা, বুলগেরিয়া, লাউস. ম্যাকডনিয়া, মালডোবা, মন্টেনেগ্রো, রোমানিয়া ও সার্বিয়া।
মার্চের চতুর্থ রোববারঃ আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্য।
২১ মার্চঃ বাহরাইন, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, লেবানন, ওমান, ফিলিস্টিৱন, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।
২৫ মার্চঃ স্টেনেভানিয়া।
৭ এপ্রিলঃ আর্মেনিয়া।
মে মাসের প্রথম রোববারঃ হাঙ্গেরি, লিথুনিয়া, পর্তুগাল ও স্পেন।
৮ মেঃ আলবেনিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া।
১০ মেঃ এল সালভাদর, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো;
মে’র দ্বিতীয় রোববারঃ অ্যাঙ্গোলা, আরোবা, অস্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, বাহামাস, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, বেলিজ, বারমুডা, ব্রাজিল, ব্রুনেই, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, ডোমিনিকা, ইকুয়েডর, ইশোনিয়া, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ঘানা, গ্রিস, গ্রেনাডা, হন্ডুরাস, হংকং, আইসল্যান্ড, ভারত, ইতালি, জ্যামাইকা, জাপান, লাটভিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, পেরু, চীন, ফিলিপাইন, পুয়ের্তো রিকো, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেইন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইন্স, সিন্ট মার্টিন, সিঙ্গাপুর, সুরিনাম, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, তুরস্ক, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা ও জিম্ব্বাবুয়ে।
১৫ মেঃ প্যারাগুয়ে
২৬ মেঃ পোল্যান্ড
২৭ মেঃ বলিভিয়া
মে মাসের শেষ রোববারঃ আলজেরিয়া, ডোমিনিকান, ফ্রান্স, হাইতি, মরিশাস, মরক্কো, সুইডেন ও তিউনিশিয়া।
৩০ মেঃ নিকারাগুয়া
১ জুনঃ মঙ্গোলিয়া
জুন মাসের দ্বিতীয় রোববারঃ লুক্সেমার্গ
জুনের শেষ রোববারঃ কেনিয়া
১২ আগষ্টঃ থাইল্যান্ড
১৫ আগষ্টঃ কোস্টারিকা
অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সোমবারঃ মালাই
অক্টোবরের তৃতীয় রোববারঃ আর্জেন্টিনা
৮ ডিসেম্বরঃ পানামা
২২ ডিসেম্বরঃ ইন্দোনেশিয়া

সূতরাং সারা বছরই দেশে দেশে চক্রাকারে 'মা দিবস'টি ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বাংলাদেশে মা দিবসের ইতিহাসঃ
বাংলাদেশে বিশ্বের অনেক দেশের মতই ‘মা দিবস’টি পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় রোববারে।

মাকে নিয়ে বিখ্যাত কিছু উক্তিঃ
১. আব্রাহাম লিংকন- 'যার মা আছে, সে কখনই গরীব নয়।'
২. জর্জ ওয়াশিংটন-' আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।'
৩. জোয়ান হেরিস-' সন্তানেরা ধারালো চাকুর মত। তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয়। আর,মায়েরা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানদের সাথে লেগে থাকে।'
৪. এলেন ডে জেনেরিস-' আমার বসার ঘরের দেয়ালে আমার মায়ের ছবি টাঙানো আছে, কারণ তিনিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।'
৫. সোফিয়া লরেন-' কোন একটা বিষয় মায়েদেরকে দুইবার ভাবতে হয়। একবার তার সন্তানের জন্য, আরেকবার নিজের জন্য।'
৬. মিশেল ওবামা- 'আমাদের পরিবারে মায়ের ভালোবাসা সবসময় সবচেয়ে টেকসই শক্তি। আর তার একাগ্রতা, মমতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের মধ্যে দেখে আনন্দিত হই।'
৭. নোরা এফ্রন- 'মা আমাদের সবসময় এটা বুঝাতে চাইতেন যে, জীবনের চরম কষ্টের মূহুর্তগুলো তোমাদের হাসির কোন গল্পের অংশ হয়ে যাবে একসময়।'
৮. মাইকেল জ্যাকসন-'আমার মা বিস্ময়কর আর আমার কাছে উৎকর্ষতার আরেক নাম।'
৯. দিয়াগো ম্যারাডোনা-'আমার মা মনে করেন আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি।'ভালোবাস তাকে,যার কারনে পৃথিবি দেখেছো.... ভালোবাস তাকে যে তোমাকে ১০মাস ১০দিনগর্ভে রেখেছে.,,. ভালোবাস তাকে, যার পা এর নিচে তোমার জান্নাত আছে.....সে হল .....মা....
১০. এম. আশিকুর রহমান-যে আবেগ প্রকাশের শেষ কোন ভাষা নেই। বুক ভরে অনুভব করে নিতে হয় একটিমাত্র শব্দে 'মা'।

মাকে ভালোবাসার জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন নেই। মায়ের জন্য ভালোবাসা প্রতিদিনের। তারপরও দিবস বলে কথা! তাই জীবন জীবিকার তাগিদে নিজেও জেনে নিলাম আর সবাইকে জানিয়েও রাখলাম। জেনে রাখা ভাল কিনা!





*মৌলিক নয়, ইন্টারনেটসূত্রে অনুসন্ধানীমূলক লেখনী।