আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আজ আমি নিশামের প্রতিবিম্ব দেখছি।
কংকালসার দেহধারী নিশামের ন্যায় আমি যেন ফুজিয়ামার এক তপ্ত কংকাল।
আমার জীবন্ত দেহ থেকে রক্ত মাংস বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে কিছু শকুন শকুনি।
কংকালটা যে সোজা দাঁড়িয়ে আছে, এ আমার সৌভাগ্য।
হাড়গুলো এখনো ভেঙ্গে যায়নি, শুধু এ ভেবেই স্বস্তি আসে।
অবশ্য এতোটা স্বস্তিও হয়ত আশা করা উচিত ছিল না।
আমিই তো ভেঙ্গে ফেলেছিলাম নিশামকে দেওয়া প্রতিশ্রতিগুলো।
তারই পরিনাম হয়েছে আজ তার কংকালসার দেহের অভিশাপ।
নিশামের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমি কখনো কথা বলতে পারিনি।
পারবই বা কিভাবে?
মানুষের চোখে চোখ রাখতে হলে নিজেকে তো মানুষ হতে হয়।
আর আমি তো পশুত্ব বরণের সাধনায় রত এক অমানুষ।
তবুও নিশামের কন্ঠস্বর শুনেছি, তার পদচারণের ছায়া দেখেছি।
সে উদ্দীপ্ত আগুনের দিকে ছুটে চলেছিল,
তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল স্বচ্ছ।
তাই ফুজিয়ামার অগ্নিকুপে তার জ্বলন্ত দেহ
পূর্ণতা পেয়েছিল হাজার রুপকথার সৌন্দর্যে।
আমার জীবন্ত কংকাল কখনো পারবে না
নিশামের সে তপ্ত কংকালসার দেহের সামনে দাঁড়াতে।
শুধু দৃষ্টির কিছু ভুল, আর কিছু অন্যায় পদচারণ,
আজ আমাকে করে তুলেছে নিঃস্ব আর অযোগ্য।
নিশামের মত আমি কখনো যেতে পারিনি ফুজিয়ামার ধারে।
কারন সে সাহস আর যোগ্যতা, এর কোনটায় ছিল না আমার।
আজ আমি তার ন্যায় এক কংকাল দেহ ধারন করেছি,
তবু নিজেকে 'ফুজিয়ামার তপ্ত কংকাল' বলা
হয়ত অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে।
এরপর থেকে আমি আর নিশামের কথা ভুলতে পারিনি।
নিশামের মত হতে চেয়েছি প্রতিবার।
কিন্তু লোভ নিয়ে কেউ কি আর অগ্নিধারী হতে পারে?
তার কংকালসার দেহের অগ্নিবন্যা প্রতিদিন আমায় ভাবিয়ে তোলে,
যেন এক প্রদীপে জ্বলে ওঠা অগ্নিরাশির প্রকোপ,
এরপর সে প্রদীপের ভেঙ্গে যাওয়া,
সাথে সাড়া গৃহে ছড়িয়ে পড়া সে অগ্নিধারা।
শকুনগুলোর প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই।
কারন তারাই আমাকে শিখিয়েছে নিশামকে নিয়ে ভাবতে।
বিষাক্ত রক্ত মাংসে গড়া তাজা শরীর কখনো বুঝবে না
এক কংকালসার দেহের অনুভুতি।
তাই আমি আজ এক ক্ষতবিক্ষত দেহে দাঁড়িয়েছি আয়নার সামনে।
আর দেখেছি নিশামের কংকালসার দেহের ন্যায়
এক ফুজিয়ামার তপ্ত কংকাল।