মামা বাড়ি
প্রেমের কবি আসিফ খান রানা
আহা মামা বাড়ি!
মামা বাড়ি মানেই ছিল, স্কুল ছুটির মজার ছেলে বেলা।
বর্তমান যুগ, সব নিলো কাড়ি।
স্মৃতির পাতায় নব্বই যেন, হাজারো আনন্দ মেলা।
উঠোন জুড়ে নতুন ধানে।
তাওয়া'য় তাওয়া'য় সিদ্ধ ধানের চলত আয়োজন।
কচিকাঁচা সেই পানে।
উঠতো জেগে উনুন তাপে, নাচতো সবার মন।
সিদ্ধ ধানের গরম ধোঁয়ায়।
চলত আহার দেশী ডিমে, পড়তো হানা- নানির খোঁপে।
মায়ের হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায়।
খই; মুড়ি আর চিড়ে; মোয়ায়, থাকত বয়াম থোপে থোপে।
গোয়াল ঘরে বড় মামা।
পিতল কলসি করছে বোঝাই, টেনে টেনে দুধের বাটে।
গোয়াল আসলে যায়না থামা।
দুধের খাঁচি ঘাড়ে বয়ে,তেড়ে যাবে বুধ বারের হাটে।
নানা ভাই কাস্তে হাতে।
শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে, সবজি নিয়ে ফেরেন ঘরে।
শীতের কাঁপন লাগতো দাঁতে।
গরম ধোঁয়ার পরশ পেতে ছুটে যেতাম পুকুর পাড়ে।
খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি।
কুয়াশার ফাঁকে; ভাঁড় বোঝাই, চলছে দেখো বুড়ো গাছি।
রসের গন্ধে ম-ম বাড়ি।
খোলা পিঠা-ডুবো দুধে রসে, খাচ্ছে সবে নাচি নাচি।
কতো মজার বাহারে!
খেজুর রসে টইটম্বুর, চুই পিঠে আর আতপ চালের নাস্তা-তে।
সকাল বেলার আহারে।
পেট পুড়ে সব ছেলে মেয়ে, খেলতে যেতাম পুলের ধারের রাস্তা-তে।
খেলার; নাম যে ছিলো কত শত।
সাত চাড়া,বৌ-ছি,ডাংগুলি,মারবেল,হা-ডু-ডু, দাঁড়িয়াবান্ধা।
এসব খেলা রোজ ই হতো।
রসের কলস-কলাই ছৈ, চালতে, বরই চুরি এই ছিল সব ধান্দা।
পুকুরের ঝাঁপা-ঝাঁপি।
ডুমুর গাছের আড়াল হতে; মামার ছুড়ে মারা ঝাঁকি জালে।
শীতের কাঁপুনিতে কাঁপা কাঁপি।
কৈ,টাকি,খোলসা, চিংড়ি ও পুঁটি মাছ, ধরা পড়ে বিলে খালে।
দুপুরের খাবারে।
চালের রুটি আর মুরগির সুঁড়রায় ডুবিয়ে কব্জি।
সাথে নিয়ে বাবা রে।
আহা! গরম ধোঁয়া ভাতে, মাছের শালু নে টাটকা সবজি।
পড়ন্ত বিকেলে।
মা-খালারা উঠনে,গ্রামীণ নকশী ফোঁটায় কাঁথার শিলিতে।
চোখ জুড়ায় দেখিলে।
সরতায় সুপারি কাটিয়া; বুড়ো বুড়ি ঠোঁট রাঙ্গায় পানের খিলিতে।
যুবতী মেয়ের দল।
ইচিংবিচিং, ফুল টোকা, কুত-কুত, দড়ি লাফে ব্যস্ত।
ভরিয়া চারিতে জল।
গোয়ালে বাঁধিয়া গো; খড়, খৈ,ভুষি দিচ্ছে গৃহস্থ।
সন্ধ্যা নামিয়া এলে।
ডাকিয়া আয় আয় চৈ-চৈ; তৈ-তৈ, হাঁস-মুরগি ভরে খোয়ারে।
পাড়ার যত ছেলে।
মাঠের খেলা শেষে; নাইতে নামে খালের জোয়ারে।
কর্জ করিয়া হাটে।
মামা-খালু; নানা জান, সপ্তা'র সদাই আনে ডালা ভরিয়া।
শিশুরা মুড়িয়ে খাটে।
রাক্ষস খোক্কস;পরীদের গপ্পে মজে, ভয়ে নানুর গলা ধরিয়া।
জোনাকিরা উঁকি মারে।
ঝি ঝি পোকা গান গায় ঝাউগাছ, বাঁশঝাড় আঁড়ালে।
রাতের আঁধার যত বাড়ে।
আচমকা ভয় লাগে, কেউ পাশে দাঁড়ালে।
সন্ধ্যার উনুনে।
দুমুখো চুল্লোতে, চলে মা-খালার তোড়জোড় খই-হুড়ুম ভাঁজাতে।
ঝাঁকি জালের বুননে।
নানা ভাই ফোঁড় দেন; জোর দেন, নূতন স্বপ্ন সাজাতে।
নানা-নানির সে যতন।
নানির বকায় পালিয়ে উঠে যেতাম মামা, নানার ঘাড়ে।
মা- খালাদের মতন।
সে ধোঁয়া উঠা পিঠের উৎসব; জমে না আর চুলোর পারে!
আহা! সেই সব দিনগুলি।
শহুরে আলো আঁধারের মার-প্যাঁচে; বন্দি হয়ে গ্যাছে মর্গে।
আজো কথা কয় কবির তুলি।
রঙের ক্যানভাসে তাকিয়ে; নিজেকে হারাই ছেলেবেলার সে স্বর্গে।
আহারে! মোর ছেলেবেলা!
পাখির মতো ডানা মেলে ঘুরে বেড়িয়েছি গ্রামের বন-বাদারে।
আজ কত অবহেলা!
শিশুরা জানেই না, কীভাবে গা'য়; মাখিতে হয় মাটি-কাদারে।
এখন শুভেচ্ছা'র শোভাতে।
পিঠের উৎসব ব্যানারে; হয় না আয়োজন আর ঘরে ঘরে।
শীতের গন্ধ আসে না প্রভাতে।
এসব চিত্র শুধুই দেয়ালে,বাস্তবতা হারিয়ে গেছে চিরতরে।