আমার প্রাণের দুঃখিনী বর্ণমালা
****প্রেমের কবি আসিফ খান রানা****
আমরা মনে কথা আবেগে উচ্ছ্বসিত হয়ে, ভাষায় বলি।
বিশ্ব জুড়ে হাজার ভাষায় একে অপরে সঙ্গে মিশে চলি।
এই তুমি আমি পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে,
মনের ভাব করছি প্রকাশ; তেইশটি ভাষায় অজান্তে।
প্রতিটি জাতি-ই মাতৃভাষা লালন করেন তাঁর মনে প্রাণে।
পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ-ই ভাব প্রকাশে, দুটি ভাষা জানে।
সাত হাজারের বেশি ভাষায় ভাব লেনদেনে গড়া এই বিশ্ব।
বিলুপ্তিতে চব্বিশ হাজার ভাষা –যার জাতি সত্তার-ই নেই সাদৃশ্য।
বিশ্ব মতে -সর্বোচ্চ শব্দ ইংরেজি ভাষা নাকি আড়াই লাখেরও বেশি।
কিন্তু জানেন কী? প্রায় চার লাখ শব্দ আছে, যা আমার স্বদেশী।
স্বদেশী বর্ণের এই আদি জন্ম ক্রমাগত পালি হতে প্রাকৃত।
বিদেশী প্রাদূর্ভাবে আমার প্রাণের দুঃখিনী বর্ণমালা আজ প্রায় মৃত।
সকল রাষ্টের নাগরিকদের ইংরেজির ন্যায় ফরাসিও শেখানো হয়।
রুশ জাতি মহাকাশে প্রথম কথা বলে,তবে বাংলা কেন নয়?
জোড় করে পরমুখাপেক্ষী জ্ঞান চর্চা হয় কি দ্বিভাষী তত্ত্বে?
স্বদেশী জ্ঞান চর্চা বিহীন সাড়বে না মানুষিক রোগ, হাজারো পথ্যে।
দেশ প্রেম ও ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা বোধ কতোটা থাকলে ঋণ!
তার বড় প্রমাণ বিশ্ব জুড়ে কথা হয় বেশি; চীনা ভাষা মান্ডারিন।
কোনো জাতির আছে কী এমন বাংলা ভাষার গৌরব কৃর্তী সম্মান?
জন্মেছে কী রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকত-এর ন্যায় বীর সন্তান?
আমার আছে প্রাণের দুঃখিনী বর্ণমালার ইতিহাস, তাঁজা রক্তে রাঙা।
মাতৃভাষা রক্ষায় গুলির মুখে দামাল ছেলের যায় নি, বুকের দেয়াল ভাঙ্গা।
সেই দেয়ালে একুশের আদর্শিক মর্মবস্তুটুকুর বাস্তবে ঘটছে আজ মরণ।
ঔপনিবেশিক রাজ ভাষার দখলে, বাংলা শুধু একুশের প্রভাতে হয় স্মরণ।
যে রাষ্ট্রের উত্তরসুরি মাতৃভাষার প্রতিবাদে রাজপথে ছিল সর্বস্তরে।
আজ উর্দুর স্থলে ইংরেজি-‘মাই লর্ড’ সম্বোধন এই রাষ্ট্রের-ই ঘরে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা আজ নিছক আবেগের প্রশ্ন, যেন বেকার লোকের!
যার স্বীকৃতি স্বরূপ হচ্ছে পালিত উৎসবে- একুশের মাস শোকের।
ভাষার মাসেই মুখে নেই মাতৃভাষার মিষ্ট বুলি, আমি যে বাক রুদ্ধ।
আকাশ সংস্কৃতির দোহাই দোষে দুঃখিনী বর্ণমালা আজ অপরিশুদ্ধ।
আমি প্রেমের কবি-প্রেমের কালিতে আমৃত্যু খোলা থাকিবে আমার সদর।
ক্ষমা করো শহীদ ভাইয়ে রা,বাঙালী আর কবে বুঝবে মায়ের ভাষার কদর?