বাঙালি এখন কবিতার বই পড়ে না, তাই রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুলেরা আবার ফিরে আসে না। যদি তারা কবিতার বই পড়তো, তাহলে ১৫ বছর বয়সী কোনো এক রবীন্দ্রনাথ আবার লিখতো,
"চাই না জ্ঞেয়ান, চাই না জানিতে
সংসার, মানুষ কাহারে বলে।
বনের কুসুম ফুটিতাম বনে
শুকায়ে যেতাম বনের কোলে!"
নতুন কোনো ছোট্ট নজরুল শিক্ষকের নিকট ভয়ে ভয়ে আবৃত্তি করতো,
"ভোর হলো দোর খোল
খুকুমণি ওঠো রে
ঐ ডাকে জুঁই শাঁখে
ফুল খুকি ছোট রে।
খুলি হাল তুলি পাল
ঐ তরী চলল
এইবার এইবার
খুকু চোখ খুলল।"
কিন্তু এখন মানুষ কবিতার প্রতি আগ্রহ খুঁজে পায় না।কবিতাকে বুঝতে চায় না।ওরা ভাবে, কবিতা হলো সাহিত্যের রূপকথা।সাহিত্যিক মানুষরাই এ নিয়ে পড়ে থাকবে, এর স্বাদ আস্বাদন তাদের মতো ডিজিটালাইজ মানুষদের দ্বারা অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে কবিতা হলো মনের আকুতি। মন যা শুনতে চাই তাই কবিতা।উদাহরণস্বরূপ-
জুলাই বিপ্লবে আমাদের মন শুনতে চেয়েছিলো,
"বল বীর, বল উন্নত মম শির। "
কৃতঘ্ন মানুষ দেখলে মন শুনতে চায়,
"আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা,আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাদিয়া বেড়ায়, যে মোরে করেছে পর।"(জসিমউদদীন)
কোনো জায়গায় অন্যায় দেখলে মন শুনতে চায়,
"এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়—
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।"(সুকান্ত)
কিংবা কোনো মনের মানুষ দেখলে মন শুনতে চায়,
"নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে। হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।"
যখন এই বাংলার ইতিহাস নিয়ে পড়তে যায়,তখন মন শুনতে চায়,
"প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?"(আল মাহমুদ)
তারপরও লোকে কবিতাকে এমন এমন লোকদের জন্য বরাদ্দ রেখে দেয়,যারা বড় বড় টিপ পড়বে,কাঁধে পাটের ব্যাগ ঝুলাবে।কেনো? কবিতাতে এমন কি নেই যা আমাকে আপনাকে আগ্রহী করে তুলতে পারেনা।ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন,মনুষ্য সকল আবেগ, বিবেক, আনন্দ,দুঃখ,ইতিহাস, সংস্কৃতি, উঁচু -নিচু কি বাদ আছে কবিতায়?
দশেক গল্পগ্রন্থ সংগ্রহ করলেও একটি কাব্যগ্রন্থের পিছে কেনো ব্যয় করি না আমরা?
অথচ আমাদের মন সদা ছন্দে সাজানো মনের কথায় শুনতে চায়।আর আমরা নির্দ্বিধায় সেই চাওয়ার গলা টিপে দিই আর পরিণত হই এক একটি রোবোটিক প্রাণীতে।কবিতার মর্মার্থ উপলব্ধি করা খুবই সহজ, সবসময় নিজের জীবনের সাথে মিলালেই তা খুঁজে পাওয়া যায়।কবিতায় এক ধরণের রস আছে যা শুকনো মনকে সর্বদা সতেজ রাখে। তাই আমাদের কবিতাকে 'হ্যাঁ' বলা উচিত। এই কবিতা নামক মনের খাবারকে একটি দলের জন্য বরাদ্দ না করে তাঁর নতুন নতুন স্বাদ আমাদের সকলের আস্বাদন করা উচিত।তাহলে হয়তো আমাদের মানবিক উন্নতির পাশাপাশি পরের যুগের জন্য একটি নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথ রেখে যেতে পারবো।
-আশফাক।