আমি কবিতা বলবো না, এ যেনো এক গল্প।
ভারতেরও ওপার থেকে উড়ে এসে
আগে থেকে জুড়ে বসেছিলো শকুন,  
হায়না আর জোঁকের দল।
শাসনের নামে দিব্যি মানুষ মারছে,
মানুষের লাশও যেনো ছিঁড়ে খাওয়ার উপক্রম।
বাদ দেয় নি মা বোনের সম্ভ্রমটুকুও।
রক্ত শুষে নিচ্ছিলো এই জোঁক গুলো।
ঠিক তখনই শুরু হয় একটি স্লোগানের গল্প,
রেসকোর্সের ডাক।
এ যেনো এক পিতার সংসার,  সন্তান রক্ষার্থে
সকলকে এক করে শত্রুর মোকাবেলার ডাক।
এ যেনো এক সাহসিকতার স্লোগান।
শেখ মুজিবের সেই স্লোগান।।

সাতই মার্চের আঠারো মিনিটের ভাষনের সেই
"জয় বাংলা" স্লোগান।
আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পরলো সেই স্লোগান।  
যেসব বাচ্চারা তখন নতুন কথা শিখেছে
তারাও প্রথমেই শিখেছি " জয় বাংলা"
ছেলে বুড়োর মুখে জয় বাংলা।
শিশু-কিশোর মাঠে খেলতে গিয়েও
বলে উঠতো "জয় বাংলা"।
আকাশে বাতাসে "জয় বাংলা"।
"জয় বাংলা" "জয় বাংলা" "জয় বাংলা"।।।
অবশেষে বাঙালী জাতীর নামই হয়ে যায় "জয় বাংলা"।
এই " জয় বাংলা"ই হয়ে ওঠে বাঙালীর সাহস,  
বাঙালীর ভালোবাসা, বাঙালীর অস্ত্র।।
এ এক স্লোগানের গল্প।
"জয় বাংলার" গল্প।
মার্চের ছাব্বিশ,
উড়ে এসে জুড়ে বসা শেয়াল, কুকুর, হায়না গুলো
মৃত্যু আর রক্তের নেশায় মেতে উঠেছিলো।
ধরে ধরে গুলি করে, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে,
গলা কেটে রক্তের সাগর বানানো হয়েছিলো "জয় বাংলা" জাতির।
আর করা হয়েছিলো লাশের পাহাড়।
পিতাও তখন জানিয়ে দেয় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।।
আর বন্দি করা হয় পিতাকে।
পিতার স্লোগান রক্ত দিয়ে আগলে রাখে
বাধ্য বাঙালী সন্তান।
এরপর খোঁজা শুরু হয়েছিলো,
" জয় বাংলা কাহা হ্যায়?"
" জয় বাংলা কাহা হ্যায়?"

খুঁজে খুঁজে মারা হয় "জয় বাংলা"
আবার রক্তের সাগর,  লাশের পাহাড়।
সম্ভম নষ্ট করা হয় মা বোনদের।  
ফুটবল খেলে মা- বোনের স্তন কেটে।
বোয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করা হয়
সারা জীবন পর্দা করে আসা মায়ের শরীরটাকে।
ফেলে দেয়া হয় উলঙ্গ করে।
মৃত্যুর আগেও তাদের মুখে থাকে "জয় বাংলা"।
মাঠে খেলতে থাকা বাচ্চার মুখে "জয় বাংলা" শুনে
সেখানেই গুলি করে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়।
বাপ ভাইকে ধরে নিয়ে এক লাইনে দাড় করি বলা হয়,
"জয় বাংলাকি বাচ্চা আব বোল পাকিস্তান জিন্দাবাদ "
তারা বুক ফাটিয়ে বলে  "জয় বাংলা"।।।
ব্যাস, একটি গুলি আর এক নদী রক্ত আর রকটা লাশের স্তুপ।
আমি কবিতা বলবো না, এ যেনো এক গল্প।
একটি স্লোগানের গল্প।।
আহ, কি করুন এই স্লোগানের গল্প।
আবার এই "জয় বাংলা" সাহসেই  
দা-বোটি, খন্তা নিয়ে ঝাপিয়ে পরে জয় বাঙালী জাতি।  
এই "জয় বাংলা"ই জ্বালিয়ে দেয় তাদের ভেতরকার আগুন।
এই " জয় বাংলা"ই প্রত্যেককে এক একটা
সুন্দরবনের বাঘে পরিনত করে।
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সেই বাঘর গর্জন শোনা যায়
" জয় বাংলা" " জয় বাংলা" "জয় বাংলা"
এই " জয় বাংলা"ই ছিলো তাদের
প্রতিশোধের আগুনের স্লোগান।
এই " জয় বাংলা"ই ছিলো মা,বোন, সন্তান
আর প্রেয়সীকে রক্ষার স্লোগান।
দেশ রক্ষার স্লোগান।  
এই " জয় বাংলা" বাঘের গর্জনেই পিছিয়ে যেতে
থাকে শকুন,  হায়নারা।
কিন্তু পিছাতে পিছাতেও এক সাগর রক্ত বইয়ে দিয়েছে এই নয় মাসে।
একটা সময় শকুন আর হায়না গুলো বিদায় নেয়।
আর রক্তস্নাত একটি নতুন দেশে লাল সূর্য ওঠে।
এ যেনো এক স্লোগানের গল্প।
করুন এক স্লোগানের গল্প।
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এই স্লোগানের রচয়িতা
নতুন একটি দেশে ফিরে তার চোখ ছল ছল করে উঠে
লাখো সন্তান হারানোর বেদনায়।
এ এক করুন স্লোগানের গল্প।