সাগরিকার আকাশীরং পোশাক
সাগরপাড়ের মেয়ে সাগরিকার আকাশরঙা জামা
অবশেষে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে
আশ্রয় নিলো কাব্যিক আইনের
আজব মনে হলেও মোটেও তা গুজব নয়
রটনা মনে হলেও বাস্তবে তা সঠিক একটি ঘটনা
মিথ্যে নয় বিন্দু তার সত্য একদম
নয় তা কল্পলোকের বানোয়াট কোনো গল্পও
যে আদালত প্রকৃতির
কৃতীমানের স্বীকৃতির
যে আদালত কবিতার
দুঃখভরা সবিতার।।
এজলাসে দাঁড়িয়ে জলভরা চোখে সে
অভিযোগের স্পষ্ট আঙুল তুললো সাগরিকার প্রতি
বেদনামাখা কণ্ঠে বললো-
"আকাশের সুবিশাল দেহ থেকে
জোরপূর্বক ছিনতাই করে
সাগরিকার গায়ে আমাকে পরিধান করা
অনধিকারচর্চা ছাড়া অন্যকিছু নয় মাননীয় আদালত"
আমি তার তদন্ত চাই পরিপূর্ণ তদন্ত
আমি তার বিচার চাই নিরপেক্ষ বিচার
আমি তার শাস্তি চাই নজিরবিহীন শাস্তি
কোটিকোটি মিলিয়নমিলিয়ন বিলিয়নবিলিয়ন
মেট্রিকটনওজনের আজন্ম বিরহী আকাশের
সাদা আর নীল মিশ্রিত আকাশরঙা
যন্ত্রণাময় ভারী পোশাক আমি
সাগরিকার বিলাসবহুলজীবনের
সুখভরপুর শরীরে কীকরে শোভাপাই
তা আপনিই বলুন মাননীয়আদালত!
তাই আদালতের কাছে আমার অনুরোধ
আমাকে তার গায়ে জড়ানোর উপর
জারি করা হউক চরম নিষেধাজ্ঞা
সেইসাথে তার সদানন্দ দেহ থেকে
আমাকে খোলে ফেলার
কার্যকরী নির্দেশও চাই সুদক্ষ বিচারক!
পোশাকের রংটা যেমন আকাশী
নালিশের ধরনটাও বিশালকায় সেইরকম
প্রায় ৪.৫৪ বিলিয়ন বছরের
সুদীর্ঘ রেডিওমেট্রিক জীবনে
এটাই সম্ভবত কবিতার কোনো সুউচ্চআদালতে
বিচারিক কবির প্রথমশ্রেণির কোনো এজলাসে
পৃথিবী নামক বৃহত্তম সংবিধানের
আকাশীরঙের সুস্পষ্ট ধারা-উপধারায় দায়েরকৃত
প্রথম কোনো অভিযোগও নথিভুক্ত জটিল মামলা।।
বিচারক সম্ভবত জীবনের এই প্রথম
এমন একটি কঠিন মোকদ্দমার সম্মুখীন
যার কোনো ফয়সালা আসছেনা তার মাথায়
যার কোনো রায় লিখতে পারছে না তার কলম
ব্যাপারটি বিচারককে থ বানিয়ে দিলো একেবারে থ
বাধ্য করলো আদালত মুলতবি ঘোষণা করতে
পরবর্তী দিন আবারো শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে
আজকের জন্য স্থগিত করা হলো বিচার কার্যক্রম।
ধীরেধীরে দিন গত হতে থাকে আর
সূর্যের নিভুনিভু আলো নিয়ে আসতে থাকে
সন্ধার আগমনীবার্তা
তারপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে রাতের এলান করে আঁধার
আস্তেআস্তে নীরব নিস্তব্ধ হতে থাকে আশপাশ-চারপাশ
ইতিমধ্যে অন্যান্য কাজকর্ম সেরে বাড়িফেরা বিচারক
ঘরের কারো সাথে কুশলবিনিময় না করেই
সরাসরি প্রবেশ করলেন শয়নকক্ষে
শুইতে গেলেন পালংকের নরম বিছানায়
এই চিৎ ওই কাত
এইকরে কাটে রাত
আকাশীরং পোশাকের অদ্ভূত নালিশে
চোখ বন্ধকরার ফুরসত পায়নি
গতরাত তার কোনো একটি মুহুর্ত
ভাবনার পৃথিবীতে বারবার ঘোরপাক
চিন্তার রাজ্যে স্নায়ুর চক্কর
বিষয় কেবল একটাই
আকাশীরং পোশাকের মামলাও
তার ইনসাফপূর্ণ নিষ্পত্তি
এমনিকরে বিচারকের অনুভূতির দূরবীন
হঠাৎ একটি বৃত্তে আটকে গেলো
যেখানে আকাশীরং পোশাকের আকাশী নালিশটা
যৌক্তিকই নয় কেবল শতভাগ বিজ্ঞানসম্মতও বটে
আশ্চর্যজনকভাবে পুরোপুরি ধর্মসম্মতও
প্রায়ক্ষেত্রে ধর্মও বিজ্ঞানের সম্পর্ক
দা-কুমড়া'র মতো দেখা গেলেও
এখানে পরিলক্ষিত হয়েছে ধর্মও বিজ্ঞানের সখ্য
সংঘাত তো দূরেরকথা
নুন্যতম বৈপরীত্যের আঁচ মিলেনি
বরং সম্প্রীতির অভিনব বন্ধনে তারা
একই থালায় বসে একত্রে সেরেছে রাতের খাবারদাবার
খোশগল্পে কাটিয়েছে চমৎকার সময়।
এরপর কবি মহাবিশ্ব মহাকাল
সৌরজগতও পৃথিবীর
আদিনিবাস ভ্রমণ করে
সাগরের মূলসত্তায় তাবু গেড়ে
পানির অপর নাম কেন জীবন
তাও শোনলেন তার মুখে
আবিস্কার করলেন জলকম্পের সেই সে ইতিহাস
গ্যাসের সাথে খোঁজলেন তার মৌলিক সম্পর্ক
পরে বিগব্যাং থিওরির সম্যক ধারণা লাভে
কিছুক্ষণের জন্য মনও মননের গায়ে পরালেন
গবেষকের সেইসে আলখেল্লা
দর্শনে স্থীর করলেন মহাবিস্ফোরণের মহাশক্তি।
সর্বশেষ আকাশে পাড়ি জমিয়ে
আকাশীরং এর স্বরূপ,প্রকৃতিও
আসল ইতিহাস রপ্ত করলেন।
তারপর কবিতার বিচারিক আসনে বসে
রায় প্রদান করলেন
প্রায় তিনশত লাইনের
ছোট্ট একটি অপ্রকাশিত কবিতায়
যে কবিতা আকাশীরং পোশাকের
উত্থাপিত অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ
নানাবিধ আলোচনা-পর্যালোচনার
বিশদ বিবরণ পারিপার্শ্বিক অবস্থার
যে কবিতায় সূত্রসহ উল্লেখ আছে
আকাশীরং পোশাক আসলেই কার
তবে কী তা একমাত্র আকাশের
না-তা সাগরপাড়ের মেয়ে সাগরিকারও
অপ্রকাশিত তিনশত লাইনের ছোট্ট কবিতাই
বলতে পারে তার আসল সত্য।
/০১/০৪/২০১৯ খৃস্টাব্দ