আমি কে?
শুনে যাও মোর পরিচয়ের গান,
আমি কোকিলের কুহু কলতান,প্রকৃতির প্রান।
আমি ঊষার গগনে কোমল রবি,
আমি বাংলার শ্যামলিমা ছায়াছবি।
আমি শুষ্ক পাতার ধ্বনি মর্মর,
আমি গ্রাম্য মেঠো পথ পাশে পাতায় ছাওয়া ঘর।
আমি বৃক্ষচূড়ায় বাতাসের দোল,
হৃদয় আমার বাংলা মায়ের কোল।
আমি মায়ের হাতের স্নিগ্ধ পরশ,
আমি সকলের সুখ স্মৃতি।
আমি এই প্রকৃতির রূপে রাঙ্গা মেঘহীন নীলাম্বর,
আমি আসমান ধোয়া মৃত্তিকামুখী জলের ঝর ঝর।
আমি বৃষ্টির টিপ টিপ ছন্দ অবিরত,
আমি উড়ন্ত পতাকার ধ্বনি পত পত।
আমি পাহাড়ের গা ঘেঁষা প্রকৃতির ঝর্ণা,
আমি বাংলার সকলের কেউ মোর পর না।
আমি গ্রাম্য জলাশয়ে প্রস্ফুটিত শাপলার সাদা রং,
আমি শীতের সকালে কুয়াশার কোমল আবরন।
আমি ভোরের ঘাসের বুকে বিন্দু বিন্দু জল,
আমি প্রকৃতির মাঝে মিশে যাই করে খেলার ছল।
আমি ঢেউ খেলা এক নদীর কলতান,
বাংলার সবুজ বুকটাই আমার প্রান।
আমি ঝাউবন শাখে পাখিদের ধ্বনি,
আমার দেহ পবিত্র-এই মাটির আবরনী।
আমি মাটির বুকে জন্মনেয়া বুনো বিটপীর লাল ফুল,
আমি মায়ের মাথার ঘন কালো রং চুল।
আমি এক বুক পানির মাঝে হোগলের বন,
আমি হাজার রঙে রঞ্জিত পুষ্প কানন।
আমি সবুজ ফসলের সীমান্তহীন মাঠ,
আমি সাপের মত আঁকা-বাঁকা গ্রাম্য এক বাট।
আমি পথিকের পায়ে মাড়ানো সবুজ ঘাস,
আমি এক পবিত্র শিশুর কোমল নিঃশ্বাস।
আমি বাতাসের বুকে উড়ে চলা সাদা মেঘ,
আমি শান্ত পথিকের স্নিগ্ধ চলার বেগ।
আমি নীরব প্রকৃতির নিঝুম রাতের কালো,
আমি রাতের আকাশের বুকে রূপালী চাঁদের আলো।
আমি নবান্নের ঘরে ঘরে পিঠা পায়েসের ঘ্রাণ,
আমি এই বাংলার উৎসবের আমেজ অম্লান।
আমি সকলের পরাণ জুড়ানো শীতল বায়ু,
আমি এক নব জাতকের জনম জনমের আয়ু।
আমি পুষ্প-পল্লবে বাসন্তীরং সাজ,
আমি স্রষ্টার গড়া বিশ্বের সেরা কারুকাজ।
আমি সেই নদী-যা এ মাটির বুকে চিরদিন বয়ে যায়,
আমি নদীর তীরে জমে ওঠা এক জেলে লোকালয়।
আমি নদীর বুকে জেগে ওঠা এক উর্বর চর,
আমি গৃহহীন মানুষের ফিরে পাওয়া ঘর।
আমি পল্লীবধূর জল ভরা মাটির কলসি,
আমি বাংলার শোভা,এই বাংলার বুক থেকে বলছি।
আমি বর্ষার জলে ভেজা হলুধাব নীপ,
আমি দূর সাগরের বুকে ভাসমান দ্বীপ।
আমি সাগরের বুকে ছোট্ট এক দ্বীপের মনোরম শোভা,
আমি এ মায়ের শান্ত-শীতল আভা।
আমি ফুলের বাগানে মধু মুখে উড়ে চলা মৌমাছি,
আমি এই প্রকৃতির মাঝে সদা মিশে আছি।
আমি কৃষকের শ্রমে ফলা ফসল রাশি রাশি,
আমি উর্বর মাটির বুকে সূর্যমুখীর হাসি।
আমি তাল তমালে ঘেরা বনে বৃক্ষের ছায়া,
আমি দিনের শেষে ক্লান্ত রাখালের কায়া।
আমি গ্রীষ্মের রৌদ্রদাহে জলের শীতল ছোয়া,
আমি আমের বনে ডেকে ওঠা শান্ত কাকাতুয়া।
আমি বর্ষার কোলে জমে ওঠা নরম কাঁদা মাটি,
আমি এই বাংলার মাঝে পল্লী রূপের ঘাঁটি।
আমি এক পশলা বৃষ্টির পরে সাত রঙে রাঙ্গা রংধনু,
আমি বাংলার বুকে মিশে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনু।
আমি খেজুর গাছের দেহ ঝরা ফোঁটা ফোঁটা রস,
আমি হেমন্তের এক মেঘহীন নির্মল আকাশ।
আমি মুক্ত মনে পাখিদের উড়া উড়ি,
আমি রঙিলা কাগজের হাওয়ায় ভাসা ঘুড়ি।
আমি পুকুরের জলে সবুজাভ শেওলার আবরন,
আমি বাংলার মাঠে ঘাটে ছুটে চলি অকারন।
আমি বৃক্ষের সাথে গভীর মমতা জড়ানো লতা,
আমি কোন শান্ত কবির কবিতা লেখার খাতা।
আমি বাংলার বিলে-ঝিলে খেলা করা হাস,
আমি চাই এই বাংলায় চিরদিন বসবাস।
আমি ফসলের বুকে বাতাসের ঢেউ,
আমি এই বাংলার প্রকৃতিরই কেউ।
আমি বাংলার জলাশয়ে খেলা করা মীন,
আমি বাংলার প্রকৃতির মাঝে বেঁচে রবো চিরদিন।