আমার একটা পুরাতন যুগের
ভাঙা ঘড়ি ছিল
ঘড়িটা শীর্ণকায় হাতের কব্জিতে পড়তাম
কিন্তু ঘড়ির কাঁটাগুলো চলতোনা
অথচ খুব উৎসুখ হয়ে সময় দেখতাম,
জড়তার ভারে নুয়ে পড়া ঘড়ির থেমে
যাওয়া সময়ের মতো করে নয়
নিজের মতো করে দেখতাম
নিজে যা ভাবতাম সেটাই সময় হয়ে উঠতো
সময়কে বন্দি করে,
নিজেকে স্বাধীন মানুষ ভাবতাম
অথচ কী বিচিত্র !
সময় যে আমার কাছেই পরাধীন
হয়তো সুবিধাবাদী একটা চরিত্র
নিরব ঘাতকের মতো ছিল  
যেটা আমাকে বুঝতেই দেয়নি
আমি যা ভাবছি
আমি তা ভাবছিনা
আমি যা বলছি
আমি তা বলছিনা
আমি যা
আমি তা না,  
আমি ভাবতাম আমি স্বাধীন
অথচ নিজের ভিতরেই
আমি কতটা পরাধীন
কী বিদঘুটে এক দর্শন
সবাই ভাবছে, নিজেকে স্বাধীন
অথচ পরাধীনতা সবখানেই
শরীর থেকে মনে
রক্ত থেকে অস্তিত্বে
বিবেক থেকে ভাবনায় |
স্বাধীনতা ঠিক
স্বাধীনতার মতো আর নেই
বরং অন্যকে পরাধীন করে
পরাধীনতার প্রাচীর গড়ে গড়ে  
স্বাধীনতার জন্ম হচ্ছে
অলিতে-গলিতে
সর্বত্রই,  
অথচ বুঝতেও পারছেনা কেউ
পরাধীনতা রেখে
স্বাধীনতা অর্জন করা যায়না
স্বাধীনতা কাউকে পরাধীন করে হয়না
স্বাধীনতা প্রাচীর ভেঙে ভেঙে
মুক্ত পাখির নিজের
ইচ্ছামতো ওড়ার মতো হয়  
আচ্ছা আবার সময়ের কথায় আসি
ঘড়ির সময়,  
আমি যেটা ভাবতাম, সেটাই সময়
হয়ে যেত,
সেই সময়ের ভিতর রাত-দিন ছিলোনা
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ছিলোনা
হেমন্ত ছিলোনা
খুব অদ্ভুত হলেও সত্য
সেখানে বসন্ত ছিল
যে বসন্তে প্রেম ছিলোনা
রং ছড়ানোর উৎসব ছিলোনা  
বরং বিরহ ছিল
বিবর্ণতা ছিল
অথচ সে বিবর্ণতায় সাহসীদের মতো
আপোষহীনতা ছিল
বিদ্রোহ ছিল
বিপ্লব ছিল
তারপরও  বিদ্রোহ বিপ্লবের পিছনে
কাপুরুষতা  ছিল
বিশ্বাসের ভিতরে যে তখনও
বিশ্বাসঘাতকতার মতো স্বার্থের
বিন্দু বিন্দু বরফকণা ছিল
যেটা আগুনে পুড়লে পানি হতো
আরও পুড়লে বাস্প হতো
আবার আগুন সরিয়ে নিলে
পানি হতো, আবার বরফ হতো
বাষ্পও হতো  
হয়তো নিজের অজান্তেই
নিজের খোলসটা
নিজের মতো করে বদলাতো  |
এইতো মানুষ
এতো চেনা, এতো আপন,
তবু কত অচেনা
বলছে স্বাধীন
অথচ করছে পরাধীন
বলছে সাহসী
অথচ ভিতরে কাপুরুষ
বলছে নিঃস্বার্থ
অথচ কতটা স্বার্থপর
মনস্তত্ব ঠিক মনের ভিতরে নেই
দর্শন ঠিক যুক্তির ভিতরে নেই
সময় আছে, মানুষ আছে
সময়ের ভিতরে মানুষ নেই
মানুষের ভিতরে সময় নেই
সব যেন এলোমেলো
দেশটাই এখন জবরদস্তির
গণতন্ত্র নেই
মানুষের অধিকার নেই
অস্ত্রের উপর বসে আছে শাসক
হাতে তাদের রক্ত
মুখে রক্ত
সর্বত্রই রক্ত
রক্ত ঝরছে প্রতিদিন
তরুণদের জীবন খুব সস্তা
অবৈধ ক্ষমতার কাছে,
কেউ সত্যটা বলতে পারছেনা
সত্য বলতে গেলেই
ধ্বংসস্তুপ  হচ্ছে মানুষ
কখনো তুলে নেওয়া হচ্ছে মানুষকে
তারপর কোনো খোঁজ নেই
জীবিত কি মৃত
কেউ জানছেনা
সবাই বুঝছে  শাসকের কাজ
অথচ দোষী বানানো হচ্ছে
আমজনতাকে
নিজেদের  কৃতকর্ম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে
নিরপরাধ মানুষের উপরে
কখনো খেলা সাজানো হচ্ছে
নিজেদের মতো করে  |
কত হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে
আরও কত ঘটবে
অথচ শাসক অভিনয় করছে
নিজেরা মারছে, নিজেরা কাঁদছে
খুব হিপোক্রেটের মতো
একটা দেশ,
বলছে স্বাধীন, পুরোটাই পরাধীন
বলছে গণতন্ত্র, পুরোটাই স্বৈরতন্ত্র
পুরো সিস্টেম পচিয়ে ফেলেছে
মানুষকে যা দেখানো হচ্ছে
ঘটছে তার বিপরীত
জানিনা মুক্তি আসবে কিনা ?
সব জায়গায় রাজনীতি ঢুকিয়েছে
সবাই সেটা চায়না
ভয় দেখিয়ে ভয়তন্ত্রের বিষবাষ্পে
মানুষের চিন্তার অধিকার
লুন্ঠিত হয়েছে
সেখান থেকে মানুষকে  
বেরিয়ে আসতে দিচ্ছেনা |
জাতিকে বিভক্ত করার তন্ত্রমন্ত্র
হীরক রাজার মতোই হচ্ছে
পোশাক নেই, তবে পোশাকের ভিতর
মানুষ আছে বলা হচ্ছে |
বিবেক বলছে রুখে  দেই
অথচ অনেক বিবেকের
সম্মিলিত শক্তি দাঁড়াতে পারছেনা
লুটছে টাকা
কিনছে মানুষ
পাচার হচ্ছে রাষ্ট্রের সম্পদ
ঘুষ-দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়েছে
বৈষম্যের দ্রোহে পুড়ছে
মেধা ও সৃজনশীলতা
মরছে আগামী প্রজন্ম  |
মনে হচ্ছে টেনে নামাই
সেই পর্দার পিছনের বড় খেলোয়াড়কে
কারণ সবাই তাকে চিনে
কিন্তু সেই সত্যটা কেউ বলছেনা |
সব যেন নিজেদের সাথে
নিজেদের প্রতারণার মতো |
হয়তো সবটাই একটা
বস্তাপচা সিনেমার গল্পের মতো
যেখানে দর্শক নেই
গল্প নেই
অভিনেতা-অভিনেত্রী নেই
পর্দায় বন্দি কিছু সময়ের
ঘটনা আছে
সেটা থ্রিলার, রোমান্টিক নাকি ট্রাজিডি
সেটা বুঝার মতো মানুষ নেই
সত্যকে এভাবে বলতে গেলে
মুণ্ডপাত হয়তো ঘটবে আমার
তখন সবাই চারপাশে
মুখ বুজে দেখবে
মিথ্যা নাটকটাকে সত্য ভেবে
আমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে নামবে
কারণ সবাই যে মজা নেয়
পাশে থাকেনা দুঃসময়ে একজনও  |