আগামী ৫ই মে মিডওয়ায়ফারী দিবসে ঢাকা মেডিক্যাল নার্সিং ইন্সটিটিউট এর প্রোগ্রামের জন্য লেখা কবিতা।
মা ও শিশুর ভালোবাসা
-আসাদ ইসলাম
মা হবার তীব্র বাসনায় উচ্ছলিত এক মা!
কায়ার ভেতর কায়া, প্রাণের ভেতর প্রাণ,
ছায়ার ভেতর ছায়া।
আঁখি দুটি মুদি
মা দেখে কল্পনায় জল্পনায়--
দীগন্ত জোড়া বিস্তৃত আকাশে উড়ে বেড়ায়,
পাখা নেই তবু উড়ে বেড়ায়-
গুদু গুদু ফর্সা গাল, কি মিষ্টি দুটি চোখ,
কি ছোট্ট নাক আর ছোট্ট দুটি অধরের ফাঁকে দন্তহীন কি মিষ্টি হাসি; খলখলানি হাসি।
মা- মা- রবে দুটি হাত দুটি পায়ে
আকাশ পথে ছুটে আসে যে শরীর --
বুকের ভেতর ঝাঁপিয়ে পরে চলে যায় আপন কুঠুরিতে, জরায়ুতে।
কি যে ভালোলাগায় ভালোবাসায় মন ভরে যায় মায়ের।
দুটি হাত স্পর্শ করে অনুভব করে ছোট্ট শিশুর অবয়ব; যেন মা মা রবে ডাকছে এখনো।
ভালবাসার টান, নাড়ীর টান
মায়ার বাঁধন কত যে বেদনায় জর্জরিত করে-
মা আজ সমস্ত দেহমনে টের পায়।
চোখের নিচে কালি জমে গেছে মায়ের।
শরীরের শক্তি যেন ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে মায়ের।
সব শক্তি শেষ হয়ে যাক--
প্রতি হৃদস্পন্দন তোর হৃদে স্পন্দিত হোক--
আমার রক্ত মাংস সব তোর হোক--
তবুও তুই আস---
আমার বেঁচে থাকা ভগ্ন বুকে,
নয়তো আমার মৃত নির্জীব দেহে
একবার ডেকে যাস--
মা, মা বলে।
কত যাতনা কষ্টে, গাঁয়ের মেঠোপথে, কর্দমাক্ত রাস্তায়, নৌকোয় শুইয়ে-
হাসপাতালের বেডে পৌঁছে প্রসব যখন শেষ;
তখন কে যেন মায়ের হাতে আলতো স্পর্শ দিয়ে যায়।
"কে তুমি ওগো?"
ঝাপসা চোখে কাকে যেন খোঁজে মা।
মাথায় কি যেন এক টুপি
আর গায়ে ধবধবে সাদা পোশাক।
"কে তুমি ওগো?"
"আমি সিস্টার।"
"আমার বোন।"
"হ্যা- তোমাদের বোন।"
মুচকি হেসে দু'হাত মেলে ধরে বোনটি--
"আর এইযে তোমার বুকের ধন। তোমার কল্পনার মাণিক।"
কালি জমা মায়ের চোখদুটো মুক্তোর জলে জ্বল জ্বল করে ওঠে।
শরীরের নিঃশেষিত শক্তি এক হলকায় জেগে ওঠে আবার।
কল্পনার সেই শিশুটিই-
নিখাদ চাহনি আর বাদামের মত ঠোঁট নেড়ে মায়ের বুকের কোণে
ফিসফিসিয়ে যায়--
"আমি এসেছি মা তোমার কোলে।"
মা দু'হাত মেলে পরম মমতায় বুকে টেনে নেয় তার মাণিককে।
তার সাত রাজার ধন।
না- না-
জগতের কোন ধনেই এই ভালোবাসা পাওয়া যায় না,
এই ভালোবাসা লেখা হয় না।
এই ভালোবাসা লেখা হয় হৃদয়ের কালিতে, নাড়ীর টানেতে।
মা ও শিশুর ভালোবাসা।
যার নীরব স্বাক্ষী পাশে দাঁড়িয়ে রয়-
ভালোবাসায় সিক্ত,
সদা হাস্যোজ্জ্বল সেই-- সিস্টার!!