''আচ্ছা বাবা!
মার শাড়ি টা অনেক দামী বুঝি?"
বাবা মৃদু হাসে।
''তোর মাকে কি কম দামের শাড়ি দিয়েছি কখনো?"
ছেলে মাথা নাড়ে।
"তাতো ঠিকই বাবা।
আচ্ছা, শাড়িটার দাম কত?"
"বিশ হাজার টাকা।"
ছেলের চক্ষু চড়কগাছ।
"বি-শ হাজা--র!
বাবা এবার ছেলের পানে তাকিয়ে দম্ভভরা হাসি দেয়।
" এটাই বেশি মনে হয়।
গতবার তো পঁচিশ ছিল।"
ছেলে কি আর সব বোঝে?
সে আবার শুধায়,
"আচ্ছা বাবা, আমার পাঞ্জাবীটার দাম কত?"
"আট হাজার টাকা। একটু কম হয়ে গেল তাই না?"
"না ঠিক আছে। তবে আমার স্যার কি ভুল বলে?''
"কোন স্যার?"
"বাসার স্যার।"
''ও বাসার টিচার! তো কী বলে?"
"বলে, পাঁচশ টাকায় খুব ভাল পাঞ্জাবী পাওয়া যায়।"
বাবা হাসে। খলখলিয়ে হাসে।
পেট চেপে ধরে হাসে।
সংক্রমিত হাসিতে ছেলেও হাসে,
বাপের সাথে তাল মিলিয়ে।
হাসতে হাসতে বাবা বলে,
" গরীবের জন্য শুধু পান্তাভাতই অমৃত।
আর সস্তা পোশাক অনেক দামী।"
ছেলে কী বোঝে বা না বোঝে;
মাথা নাড়ে।
"তাই বুঝি।"
ঈদের আর কদিন বাকি।
বাবা অনেক শাড়ী, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী কিনেছে।
যাকাত দিবে বলে।
কী হিসেব-নিকেশ!
অনেক কমে পেয়েছে এবার।
হঠাৎ বাবা ছেলেকে ডাকে।
ছেলে দৌড়ে যায়।
বাবা একগাল হেসে বলে,
''তোর টিচার আছে না,
তাকে এই পাঞ্জাবীটা দিবি।
সুন্দর না?"
ছেলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।
"কী মজা। স্যারকে এবার গিফট দেব।"
উজ্ঝল চকচকে নতুন পাঞ্জাবীটা মেলে ধরে।
"অনেক দামী বুঝি?"
বাবা বিরক্তভরে তাকায়।
" আরে না । এবার অনেক কমে পেয়েছি।
লট ধরে কিনেছি তো।
প্রতিটা আড়াইশ টাকা করে পরেছে।"
ছেলের চেহারাটা হঠাৎ মিইয়ে যায়।
"মাত্র আড়াইশ টাকা!"
এত কমে পাওয়া যায় বাবা।"
বাবা আরো বিরক্ত হয়ে বলে,
"কাপড়গুলো অনেক ভাল বুঝলি।"
ছেলে আরো উদ্বেগ নিয়ে শুধায়,
"বাবা, তুমি কি তবে খুব গরীব?"
বাবা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ছেলের দিকে।
ছেলে ধীরস্থিরভাবে বলে,
"পাঁচশ টাকার পাঞ্জাবী যদি গরীবরা কেনে
তবে আড়াইশ টাকায় যে কেনে সে তো খুউব গরীব।"
বাবা ধমকে ওঠে এবার।
"যাবি তুই। এসব কি আমার জন্য কিনেছি।
এগুলো তো যাকাতের মাল। হতদরিদ্রদের জন্য।"
ছেলে গম্ভীর হয়ে ধীরপায়ে বাপের দিকে এগিয়ে যায়।
পাঞ্জাবীটা এগিয়ে দেয় বাপের দিকেই।
বাবা বিষ দৃষ্টিতে তাকায় ছেলের পানে।
ছেলে মুচকি হেসে গর্বভরে বলে,
"আমার স্যার কিন্তু হতদরিদ্র নয় বাবা।
তিনিও যাকাত দেন। যাকাত নেন না কখনই।
পরিবারের সবার জন্যই কিনেছে-ন।
উনি কী বলেন জানো?
নিজের জন্য যা পছন্দ অন্যের জন্যও তাই পছন্দ।
আমি তোমার ছেলে হয়ে,
তার কাছে এ পাঞ্জাবী কেমনে দেব বলো।"
বাবার মুখে আর কথা বের হয় না।
ছেলে বলেই যায়,
"সে তো অর্থে গরীব কিন্তু মনে ধনী।
আর তুমি?
তুমি কী তার বিপরীত?"
বাবা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।
একেবারে হতবাক।
আর দশ বছরের ছেলেটি;
স্বসংকোচে হেঁটে যায় পড়বে বলে।