অনেক সুখকে আমি আহ্লাদ করে
ছেড়ে রেখেছিলাম, যেমন অনেকে ছিপে
গাঁথা মাছকে খেলিয়ে খেলিয়ে খেলিয়ে
খেলিয়ে তারপর সময় মত টেনে তোলে
পাড়ের দিকে। আমিও তেমনই ধরা দেওয়া
সুখকে ছেড়ে রেখে রেখে রেখে রেখে খেলিয়ে
খেলিয়ে খেলিয়ে খেলিয়ে নিজের দিকে আনছিলাম
টেনে, এবার ধরব বলে হাতের মুঠোয়।
কিন্তু কিছু কিছু মাছ যেমন পাড়ের কাছে
এসেও ছিপ ছাড়িয়ে হাত ছাড়িয়ে জলে
দেয় ঝাঁপ, ঝলে ঝাঁপিয়েও তাকে ধরা
যায় না, অধরাই থেকে যায় শেষ পর্যন্ত,
তেমনই আমার ছেড়ে রাখা প্রায় পোষ
মানা সুখগুলো হঠাৎ হাতের মুঠোয় এসেও
কেন যেন সুড়ুৎ করে পিছলে গেল, আর
অধরাই রয়ে গেল শেষ পর্যন্ত, কিছুতেই
দিল না ধরা।
এই না পাওয়ার যন্ত্রণা বা আফশোস আমাকে
মাঝে মাঝেই কুরে কুরে খায়, আমার
তথাকথিত আহ্লাদকে ব্যঙ্গ করে, একটা
আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, যেন বলতে চায়,
“তেন ত্যক্তেন ভূঞ্জীথাঃ” অর্থাৎ ‘তিনি ত্যাগের
দ্বারাই ভোগ করেন’। এ ত্যাগ আমি করতে
চাইনি, আমি কেবল বেশী সুখের আশায়
সুখগুলোকে ধরব বলে খেলাচ্ছিলাম মাত্র।
তারাও যে আমাকে নিয়ে খেলবে, এ আমি
কল্পনাও করতে পারিনি। এখন তাই ওই না
পাওয়া সুখগুলোর উপর আমার যত অভিমান,
ওরাই আমার প্রথম ও শেষ সুখ, কারণ
আর কোনও সুখ কেন জানি না আমার হাতে
এসে আর ধরা দেয়নি-- সুখী হতে হতে
ঘটনাচক্রে অসুখী একজনকে সুখী তারা
দেখতে চায়নি বলেই হয় তো। সুখদের
এই অসুখকর আচরণ আমাকে ব্যথাই দেয়,
গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে একটা অসুখী মন দু’হাত
বাড়িয়ে সুখ ধরা সুখ ধরা খেলা খেলে যায়--অনুক্ষণ।