এসেই পড়েছ যখন, হে মৃত্যু, একটু রসো,
এসো, একটু বসি পাশাপাশি,
কিছু সুখ-দুঃখের কথা কই,
কিছু জ্যোৎস্না মাখা সুখ, কিছু কালীদহ দুখ
ভাগ করে নিই। কিছু অনুরাগ, বিরাগ,
বিতৃষ্ণা, কিছু ক্ষুধা, তৃষ্ণা কিছু,
কিছু প্রবৃত্তির উদ্গার, কিছু
নিবৃত্তির প্রশান্তি, এসো
যোগ করে নিই দু’জনের
মনন ভাণ্ডারে।
থাক না কিছু কিছু অপমান,
হতমান কিছু স্মৃতি মনের মণিকোঠায় তোলা,
থাক না কিছু কিছু গোপন সন্তরণ
অমৃত সমান অন্তঃসলিলে।
থাকে যদি কিছু কিছু ঘাম রক্ত দার্ঢ্য
বিনীত করসম্পুটে, ক্ষতি কী?
কিছু কিছু নতজানু নিষিদ্ধ নিশীথ,
কিছু কিছু পরিম্লান পারিজাতের অভিমান
আর পরিযায়ী বহুমুখী মনের অনুষঙ্গ
বিশ্লেষণ করলে মনের ঔদার্যে,
কী এমন বিলম্ব হয়ে যাবে।
অভিমানী জীবনকে একটু না হয়
আদর করেই যাই, ছটফটে বাসনাগুলোকে
না হয় একটু প্রশ্রয় দিয়েই গেলাম।
ব্যতিক্রমী কিছু অনুরাগ মুক্তোর মত
আহরণ করে সঞ্চয় ভাণ্ডারে জমা করেই গেলাম।
এটুকু প্রশমন কি দিতে পারো না হে মরণ?
এটুকু সমব্যথা কি আশা করতে পারি না
তোমার কাছে। যেতে তো হবেই,
যাব তো চলেই, তবু এক বার প্রিয়
পরিমণ্ডল যা কর্ণের কবচ কুণ্ডলের মত
আগলে রেখেছিলাম সযত্নে, আশ্লেষে--
আলিঙ্গন করে নিতে দাও, শেষ বারের মত।
কারণ জানি—সমুখের পথ নিবিড় তমসাচ্ছন্ন,
আসন্ন কোনও পুনর্জন্মে আমি বিশ্বাসহীন,
তাই কোনও রূপেই প্রত্যাবর্তনের আশা
দেখি না, ফিরে আসিও বা যদি,
জাতিস্মর স্মৃতি কোথা পাব, তাই
এসেও না আসা হবে সমান, যদি
আগের জন্মকথা মনেই না রইল,
ফিরে এসেই বা কী লাভ।
তাই সর্বকালের মতই আমি চলে যাব,
যেহেতু যাওয়া অমোঘ, অনিবার্য, অবধারিত।