আজ ৩০ শে এপ্রিল
অনিলা তোমার মনে পড়ে সেদিনের কথা
ভোর হবার আগেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে তুমি এসেছিলে আমার কাছে। কান্নাকন্ঠে বলেছিলে আমাদের সবচে’ প্রিয় বন্ধু নিশীথ আতœহত্যা করেছে! প্রথমে ভাবলাম তুমি আমার মন খারাপ করিয়ে দেবার জন্য বলছো!
কিন্তু পরক্ষনেই আমার ভুল তুমি ভাঙালে তোমাদের মাঠের ধারে নীল লেকের পাড়ে পড়ে থাকা নিশিথের লাশ আমাকে প্রথম বারের মতো পাথর কান্নায় ভাসিয়েছিলো।
সেদিন আমি অনেক কেঁদেছি বোবার মতো। চিৎকার করতে পারিনি। আমি যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।
আমাদের প্রিয় বন্ধু নিশীথ। আমার হাত ধরেই সে জীবনে প্রথম ভালোবাসার গাছে পানি ঢেলেছিল তাতে ফুল ফোটেনি, সবে ছিল কলি; কে জানতো ভুল ভালোবাসায় ওকে হতে হবে বলি।
আজও চোখে ভেসে উঠে দোম্রানো-মোচ্রানো শাপলার মতো ভেসে থাকা নিশীথের লাশ।
তোমার মতোই কোন এক নারী তাকে উপহার দিয়ে গেছে মৃত্যু।
বোবা হয়ে যাওয়া কান্নায় জমতে জমতে সেদির মিশে যাচ্ছিলাম; মনে হচ্ছিল একটা ব্যার্থতা জীবনে জায়গা করে নিলো আমার। আমিই তো ভালবাসতে শিখিয়েছিলাম ওকে। অনি আজ মনে হচ্ছে সেদিন আমি অপয়া ছিলাম।
আমি যেখানে হাত দেই সেখানেই মেঘ জমে; বর্ষণ হয়।
টপটপ করে বেয়ে চলা নোনা ফোটা দুঃখের বিন্দু সৃষ্টি করে যায় অবিরত; সে বিন্দু চারপাশ ভাসায়। অনি বলতে পারো আর কত ব্যার্থতা আসবে?
ছোট বেলা মা গেছে; বারো বয়সে বাবা গেছে; চৌদ্দ বছরে ভাই গেছে; কাউকেই তো ধরে রাখতে পারিনি।
তুমি বলবে আমরা কেউই হয়তো সম্পর্ক সারাজীবন ধরে রাখতে পারিনা; তাই বলে আমার কি একটু ভালোবাসা? কি স্নেহ পাবার অধিকার ছিলনা? হয়তো ছিল। কিন্তু বিধাতা পুরুষ আমাকে ষ্ট্রাচু করে রেখেছে; যেন আমি সব সয়ে সয়ে শেষে ক্ষয়ে যেতে পারি।
তোমার মনে আছে অনি; সেদিন তুমিও অনেক কেঁদেছিলে। আমি বলেছিলাম তুমি কাদঁছো কেন?
তুমি অনেকক্ষণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলে হয়তো সে চোখে অনেক কথা ছিল, হয়তো সে কথা আমি না বোঝার ভান করে তোমাকে সেদিন এড়িয়ে গিয়েছিলাম।
অনেক দিন পর একদিন তুমি বলেছিলে; সেদিন নিশিথের সাথে সাথে আমার কথা ভেবেও খানিকটা কেঁদেছিলে
আমি বলেছিলাম; আমি আবার কি করলাম!!
তোমার নিরব সে চাওনি যেন আমাকে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল যেদিন তুমি মরে যাবে; সেদিন আমায় কে তোমায় শ্বান্তনা দেবে ? আর সেটা ভেবেই তুমি কাঁদো।
আজ কেন যেন তোমার সে কান্নাটা দলা পাকিয়ে আমার গলায় আটকে যাচ্ছে।
অনি কিছুই বলতে পারছিনা আজ।