পথ পেরুলেই নদী, ছিমছাং নদী।
আমি জানি অনি তোমার’ খুব প্রিয় একটা বন্ধু এই ছিমছাং।
আগে এখানে ভাটির মানুষেরা আসতো দল বেঁধে।
নদীর ধারে নৌকার উপর থাকতো তাদের সারি সারি ঘর।
সন্ধ্যে হলেই মনে হতো কারা যেন প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে; আমরা গুনতাম এক, দুই, তিন....
আমরা আরো গুনতাম ক্যালেন্ডারের পাতা, কবে আসবে নবীন চত্বরের মেলা;
কবে সবাই মিলে সিনেমা দেখবো পর্দা টাঙ্গানো মেলার ছোট্ট সিনেমা ঘরে।
পর্দার উত্তম-সুচিত্রা কিংবা ইন্দ্রনী তখন আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে তুলতো।
মনে হতো বড় হলে হয়তো আমরাও একদিন ওদের মতো নেচে গেয়ে ভালোবাসা বিকাবো।
সিনেমার পোস্টারে ওদের ছবি দেখতাম; হাতে আঁকা ছবি।
সেসব ছবি দেখে হা হয়ে যেত আমাদের মুখ! একেকটি বার মনে হতো পটের পুতুল যদি হতে তুমি;
আমিও হয়তো আঁকতাম তোমায়।
আমরা কত বোকা ছিলাম তখন; তুমি বলতে প্রেম করলে বুঝি এভাবেই নেচে নেচে গান গাইতে হয়! ঠিক
সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের মতো। আমি বলতাম কি-জানি হয়তোবা! ঠিক উত্তরটা আমারও তখন অজানা ছিল।
অনেক অজানাই যখন জানা হলো তখন এই বয়সেও সেসব কথা মনে হলে হাসি আসে।
আজ তোমাকে খুজতে বেড়িয়ে কতকিছু যে মনে পড়ছে।
দোয়েল মাঠে নেমে হতবাক হলো এ চোখ! সারি সারি দোতলা বাড়ি। যেখানে হাতেগোনা চার-পাঁচটি বাড়ি ছাড়া সব ছিল টিনশেড ঘর। এখন তোমাদের বাড়ি খুজে বের করা মুস্কিল। তবুও হাল ছাড়তাম না।
সামনের গলিতে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম অনিলা চৌধুরীর বাড়ি যাবার রাস্তাটি কোন দিকে।
‘কোন অনিলার কথা বলছেন ডাঃ অনিলা চৌধুরীর?
আবার হতবাক হবার জো! অনিলা ডাক্তার হলো কবে? কি জানি হয়তো পাশ-টাশ করে এদ্দিনে হয়ে গেছে।
ডাক্তারদের বাড়ীর গেট খুজে পেতে যে অসুবিধা হয়না সেটা আজ বুঝলাম
পথচারী আমাকে ঠিক দশটা গলি ঘুড়িয়ে দাড় করালো তোমাদের আস্তানার সামনে।
গেট খুলতেই ছোট একটি ছেলে জিজ্ঞেস করলো কাকে চাইছেন?
আনিলা আছে?
ডাক্তার আপা তো এখনো ফিরেনি? আপনি বসুন এই এলো বলে!
বসলাম বাইরের ঘরে অতীতে এখানে আমাদের আড্ডা হতো। দেখলাম ঘরের সাজগোজ আগের মতো নেই কিন্তু তোমার ছোটবেলার একটা ছবি আজও র্যাকে ঝুলছে ঠিক আগে যেমন থাকতো।
আজ ছবিতে একটিবার তোমাকে দেখে নিলাম। পচিঁশ বছরের পুরোনো আমার না দেখা সেই মুখ। অনি। আমাদের বোকা বুদ্ধু-টিমের অনিলা।
নিরব একটা মেয়ে। ছোট বেলায় ব্যাথা পেয়ে কোনদিন কেঁদেছে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে কেননা ওকে কোনদিন সামনা-সামনি কাঁদতে দেখিনি। খুব ভালো সাইকেল চালাতে পারতো।
আজ ওদের বাড়ীর গেট দেখে মনে পড়ে গেল এখান থেকেই আমাদের সাইকেলের রেস হতো ষ্টেশন পর্যন্ত।
আমরা বুদ্ধুর দল রোজ বিকেলে রেসের শেষে বসে থাকতাম ট্রেনের জন্য। ট্রেন দেখবো লালরঙ্গা ট্রেন।