ঐ যে সেনবাবুদের ছেলেটা পড়াশোনায় বড়ই ভালো,
মাধ্যমিকে স্টার, আর এইচ.এস রাজ্যে সেকেন্ড হলো ।
কেনই বা হবে না, সারাদিন লেখাপড়া ছাড়া কিছু বুঝত না,
খেলাধুলা তো ওই উইক এণ্ডে একবার ,তাও মাঝে মাঝে হতো না।
পাড়ার কিন্তু গর্ব বলো, এরম ছেলে কে না চাই ?
মা তো রত্নগর্ভা আর সেনবাবু নিজেই মাস্টার মশায়।
পাড়ার সবাই হিংসে করে,তবে পারলো না তো কেউ,
ওই সেন বাবুই দেখিয়ে দিলেন, তার ছেলেই শ্রেয়।
যাইহোক, এইতো বছর দশেক হলো, ছেলে বিলেতে,
সত্যিই তো, ওই ছেলেকি এই পোড়া দেশে, চাই থাকতে!
তবে,এই দশ বছরে দশবারও মনে হয় দেশে আসা হয়নি,
আসলে কাজে হয়তো খুব ব্যস্ত,তাই হয়তো ফেরেনি।
এক মাস হলো সেনবাবুর স্ত্রী মারা গেছে,
ছেলে বলেছে , টিকিট পাইনি,পরে আসবে।
মায়ের মৃত্যুও তাকে কাজ থেকে বিচলিত করতে পারে নি,
পারলৌকিক কাজও ভিডিও কলেই,এদেশে আর আসা হয়নি।
তবে,মিসেস সেন গত দুমাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন,
ছেলে কিন্তু খুবই ভালো, বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছেন।
কিন্তু মাকে দেখতে আসা হয়নি তার, সেন বাবুও জোর করেননি,
কাজটা এতটাই জরুরী যে অসুস্থ মাকে একবার দেখতে আসা হয়নি।
যাইহোক, সব কাজ মিটে যাওয়ার পর সেনবাবু সেদিন খুব কাঁদছিলেন,
আর এখন তো ,কেমন যেন জানালার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন।
ওই তো সেদিনই তার বাড়ি গিয়েছিলাম,জানতে এখন কেমন আছেন?
জিজ্ঞাসা করলাম, ছেলে সাথে কথা হয়েছে? বিদেশে যাচ্ছেন?
কেমন যেন রেগে বললেন আমি এদেশেই ঠিক আছি,
ওরা ওখানেই থাক,আমি এখানে একাই ভালো আছি।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর দেখি,চোখের কোনে জল
বললেন আর কথা হয় না,ছেলে বিয়ে করে ওখানেই সেটেল।
বৃদ্ধ বাবার জন্য আর মন খারাপ করে না,তবে সেও এখন বাবা,
একটাই আফসোস,ওর মার নাতিটাকে একবার দেখা হল না।
ছেলেটা এরম ছিল না জানো, এখন বড়ো অচেনা মনে হয়,
এতটাই এখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত,ভুলতে বসেছে আমায়।
দোষটা অবশ্য আমারই, ওর ঠাকুমা যখন অসুস্থ ছিল,
ও ওর ঠাকুমার কাছে আসার জন্য খুব কান্না করছিল,
আমি বলেছিলাম,একমাস বাদে পরীক্ষা পড়ায় মন দাও,
তারপর যখন মা মারা গেলেন,দিইনি মৃত্যুর খবরটাও।
সেই শিক্ষা যাবে কোথায়, যেমন গড়েছি, তেমনই তো হবে!
ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চেয়েছিলাম,ভেবেছিলাম মানুষ তো এমনিতেই হবে।