হঠাৎ বাবার স্ট্রোক, ততদিন অবধি, বাবা শুধুই অভ্যাসে ডাকা একটি শব্দ,
কিন্তু তার অসুস্থ হওয়ার পরক্ষণেই,কেমন যেন আমার লাফালাফি চিৎকার সবই জব্দ।
বাবাকে বিছানায় শুইয়ে, চিন্তা; কি করব এখন, কি বা করা উচিৎ ?
দাদাকেও খুব অস্থির দেখাচ্ছে, এবার হয়তো দেওয়ালে ঠেকেছে পিঠ।
তখনও বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষটি আবছা স্বরে বলছে; আমি ঠিক আছি;
বাবাকে ওইভাবে কোনোদিন দেখিনি;তাই, সত্যি ভেঙে পড়েছি।
লক্ষ্য করলাম নিজের হাতটাই তুলতে পারছে না,বাঁ পাশে নেই কোনো বস,
মুখটা কেমন বেঁকে গেছে, কথাটা হালকা তোতলা,আছে বলতে শুধুই হুশ।
খুব চিৎকার করে কাদলাম, কিন্তু গলা থেকে আওয়াজ বেড়োনো নিষেধ,
মনে হল কেউ মুখে গামছা এঁটে,পিঠের ওপর দিচ্ছে গরম শিকের স্বেদ ।
যাইহোক ,সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, এবার কিছু একটা না করলেই নয়,
বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে,কেমন ভেবেই করছে ভয়।
হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনে,অনেক টোটোওয়ালা গাড়ি ঘুরিয়ে নিচ্ছে,
জানি না,হয়তো ভাবছে টাকা দেবে না,তাই মুখের ওপর জবাব দিচ্ছে।
আমরা কি সত্যি, এমন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম ?  
যেখানে মানুষ টাকার কাছে বিবেককে করেছে নিলাম।
অবশেষে, একজন এসে দাড়ালো, সত্যি তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ রইলাম,
অন্তত নেতাজি-বিবেকের দেশে, একজন মানুষ তো খুঁজে পেলাম।
হাসপাতালে ডাক্তারবাবু দেখে বললেন,অপারেশন করতে হবে, চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়,
বুঝলাম,আসলে হাসপাতাল নেতাদের সমাজসেবার মাধ্যম,বাকিরা হয়রানির শিকার হয়।
সেই হতভাগাদের মধ্যে আমরাও আছি,ছুটলাম কলকাতা,
সরকারি হাসপাতালে বেড পাব না জানি,নেই কোনো চেনা নেতা।
বুঝতেই পারছেন ,চিকিৎসা তা আবার কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে,
মাস্টার মশাইয়ের  সারাজীবনের কষ্ট করে জমানো ফিক্সড ডিপোজিট,আজ ভাঙতে হবে।
ব্যাঙ্ক থেকে বারবার ঘোরাচ্ছে,এই টেবিল থেকে ঐ টেবিল ,এটা লাগবে ,ওটা লাগবে;
যাইহোক,ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনে,টাকার জোগাড় হল, এবার বাবার চিকিৎসা হবে।
বাড়ি গিয়ে দেখি,তখনও মা  ঠাকুর ঘরে বসে কাঁদছে, ভয়ে;
খবর পেলাম, অ্যাম্বুলেন্স চালক একটা ফেক নার্সিংহোমে ঢুকিয়েছে,কিছু পয়সার বিনিময়ে।
কারোর অসুস্থতাও কারোর কাছে সুযোগ হয়ে ওঠে, তা আজ জানলাম,
এসব মানুষ গুলো আর যাইহোক মানুষ নয়,মনকে শক্ত করলাম।
এ যেন বিপদের সঙ্গে শত্রুতা করে,চরম বিপদ ডেকে এনেছি,
যাইহোক,সবের শেষ আছে,খারাপ সময়টাও একটা সময় কাটবে, মনকে বুঝিয়েছি।
অবশেষে সঠিক নার্সিংহোমে বাবাকে ভর্তি করানো হলো,
এখন বাবা অনেকটাই সুস্থ, ঝড়টা এবারের মতো থামল।
জীবন যখন চরম অন্ধকারে ডুবে যায়,মন যখন হারিয়ে ফেলে আশা,
প্রথম যার হাতটা তোমার কাধে এসে পড়লেই কাটবে সব ধোঁয়াশা,
সে আর কেউ নয়, তুমি যার ছত্রছায়ায় বড়ো হয়ে,উঠেছ,
যার হাত ধরে ছোটো বেলায় বিকেলে রাস্তা দিয়ে হেটেছো।
মা যেমন অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে আমাদের দশ মাস  দশ দিন গর্ভে ধারণ করে,
তেমনি বাবা আমৃত্যু সখ-আহ্লাদ ত্যাগ করে,সন্তানের  ভবিষ্যতের কথা মনে করে।