কেউ বলে ছুকড়ি, কেউ বলে পিচ্ছি,
কেউ বলে আমাদের বাসার মেয়েটা,
কেউ বলে আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।
বাবা-মা যে একটা নাম রেখেছিলো
সেটা নিজের অজান্তেই ভুলে বসেছি।
এই সমাজে আমাদের কোন নাম নাই,
যদিও থাকে সেটা কখনও আপন নয়,
পোষা প্রাণীর মতো আমাদেরও নাম রাখা হয়।
তাতেও আমাদের দুঃখ নাই।

মায়ের কোল তো কখনও ছাড়তে চাইনি
যখন প্রথমবার বাড়ি ছাড়ি
খুব অভিমান হয়েছিলো মায়ের উপর,
রাগ হয়েছিলো দরিদ্রতার উপর।
মা তো আমার ভালোই চেয়ে ছিলো,
বলে ছিলো, তুই তো ভালো থাকবি,
ভালো খাবি, ভালো পড়বি,
ঠিক শহর থেকে আসা মেম সাহেবদের মত
এই খানে আর কি খাস ছাই পাস যত।

আমাদের কোন নাম নাই,
আপুষ্ট শিশু হয়েও আমরা,
আরেক শিশুর হাতে দুধের গ্লাস তুলে দেই,
আমরা নিরক্ষর হয়েও অন্য শিশুর বই গুছাই,
সোফা চেয়ারে আমাদের বসতে মানা,
খাবারের থালা-গ্লাস আমাদের আলাদা।
সবাই যখন বসে গাড়ির সিটে,
আমাদের তখন পায়ের কাছে মিলে ঠাঁই,
নামি-দামি হোটেলে আমরা তাদের ঝুটা খাই।

আমাদের কোন ক্লান্তি নাই, ভুলেরও ক্ষমা নাই
জিহ্বার ছোবল, লোহার ছেকা সব কিছু সয়ে যাই
ঘরে যদি কিছু হারায়, দোষটা কেবল আমাদের গায়
অদৃশ্য শিকলে বন্দী আমরা, পালিয়ে শুধু বাঁচতে চাই,
নির্বিচারে মরি আমরা, মৃত্যুর কোন বিচার নাই
এই ভদ্র সমমাজের ভদ্রদের মুখোশ
আমাদের চেয়ে ভালো চেনেনা কেউ,
ভদ্রদের ভীরে আমাদের নাই কোন ইতিহাস
আমরা এই সমজের নব্য কৃতদাস।

লেইসম্যানশন
তাজপুর, সিলেট
২৪/০৪/২০২২