বিস্মৃতির ঘন অন্ধকারে অস্তমিত সূর্য।
লালাভ রেখাচিত্রের অন্তরালে,
অতীত রুক্ষ রূঢ় শব্দের ছাপ ফেলে যায়।
প্রেক্ষাপটটা পুরানোয় নতুন।

রাইখস্টাগের চূড়ায় জটপাকানো ধোঁয়ায়
লেলিহান শিখা উন্মত্ত, রাজার মতো।
ব্যস্ততার রাত্রিভোজ-ভোজবাজি, ফন্দি-ফিকির,
আর পরিকল্পিত ফরমান, সর্বেসর্বার উত্থান।
বন্ধু মুসোলিনির হাত ধরে বিশ্বজয়ের
অলীক এক দিবাস্বপ্ন।
ইহুদি সংহারক, হলোকাস্ট ও Auschwitz বন্দী শিবিরের পৃষ্ঠপোষক,
চরম নাৎসি অপরাধের প্রতীক তিনি এক একনায়ক।
তাঁরা ছিলেন, আছেন, থাকবেন কোনো এক সন্ধিক্ষণে।

হতদরিদ্র উগান্ডার অনুর্বর পৃষ্ঠভূমি
আর ইদি আমিনের নির্মম পদচারণ।
দমন, নিপীড়ন, দুর্নীতি, গণহত্যা,
কসাইয়ের কষাঘাতে কলুষিত কোবোকো।
তাঁদের সৃষ্টিতে ধ্বংস স্রষ্টা।

খেমার রুজ ও সালোথ সার,
তথাকথিত কাম্পুচিয় সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র।
সর্বেসর্বার বর্বরতার
বিষাদ আঁকড়ে Choeung Ek।
তাঁদের উত্থানে মানবতার পতন।

তাঁরা ছিলেন "কঙ্গো মুক্ত রাজ্যের" বন্দি কঙ্গোতে,
রুশ বিপ্লব ও গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটে,
রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, ও মধ্য আফ্রিকার দারিদ্রের অন্তরে।
তাঁরা ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে, ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার
মানবজাগরণ ও সংগ্রামের শিলালিপিতে।
কিউবার হাভানায় বাতিস্তা রূপে,
অথবা কিম-এর স্থূলতায়।

তিনি একনায়ক, নেরুদার চোখে,
“মাথায় লম্বা রেশমি টুপি, সোনালী কাজকরা ঝালর, উঁচু শক্ত কলার।
ছোট্ট প্রাসাদটা মনিবন্ধনীর মতো ঝিকমিক করে জ্বলছে।
আর দস্তানায় সুসজ্জিত তিনি।“

তিনি একনায়ক, আমার চোখে,
ধপধপে সাদা কুর্তায় ঢাকা মেদবহুল ছাপ্পান্নকায় শরীর,
শ্মশ্রুমন্ডিত চিবুকের কোনে ঠোঁট বাঁকানো কৃত্রিম হাসি।
লালচে-সাদা লোলুপ-বিনিদ্র ভ্রুকুটি।
তিনি অবতার, ক্ষমতার, জনতার।

এক দেশ, এক জাতি, এক নেতা - বুলি আওড়ান,
তিনি একনায়ক।
জবাবদিহির পরোয়া, নিষ্প্রয়োজন।
নগ্ন রাজার বেহেড মগজ,
অসীম সসীমের কানাকানি।
তাঁর উন্মত্ত আস্ফালনের চোরাবালিতে
ঢেকে যায় দশের করুন দশা।
প্রতিবাদের নিথর ভাষা
দুমড়ে মুচড়ে পরে থাকে পথের প্রান্তরে
অথবা কারাগারের বন্দিদশায়।

গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন অথচ বিনিদ্র
জাতির বংশধর।
তিনিই রাজা তাঁর এই রাজার রাজত্বে,
নির্লজ্জ নতজানু তাঁর চাটুকার।
তিনি একনায়ক সরকার।

হিটলার থেকে হুয়ের্তা...
ফ্রাঙ্কো থেকে সেকো...
অথবা বার্লিন থেকে বারাণসী,
এক নথিপত্র
উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, বিদ্বেষ, জাতীয়তাবাদের।

আমার আশাতুর মনন এখনো সাবলীল,
ঘষা কাঁচে রঙিন আঁকিবুকি কাটে,
আর সাদা রঙের পরতে আকাশ ঢাকতে চায়।
"আঘাতে আঘাতে
ক্লেদাক্ত, নৈঃশব্দ ভরা পল্বলের বীভৎস জলে
পরতে পরতে জমে ওঠা ঘৃনার" প্রাচীর ভাঙবে একদিন।
অহংকার হবে বাঙ্কারবন্দী।