ঘুম থেকে জাগলাম একটা বিকট শব্দে, বারুদের ঘ্রাণে।
ঘরের ভেতর থেকে আকাশ দেখা যায়, ভাঙা দেওয়ালের ওই ফাটলটা দিয়ে।
আকাশ তখন ধূসর, সূর্যের ঝাপসা লাল আভা পড়েছে পাশের ওই নিথর দেহটাতে।
রাত গড়িয়ে সকাল নামলেও অন্ধকার টা রাতের মতোই।
আমার পা দুটো অবশ, হয়তো অকেজো হয়েছে।
যন্ত্রনায় আর শীতে কাতরাচ্ছি আমি।
পাশের গালিচা টা যেন তৃষ্ণার্ত, শুষে নিচ্ছে আমার শরীর থেকে বয়ে যাওয়া লহু।
কোনক্রমে পাশ ফিরলাম আমি।
শরীরটাকে টেনে হিঁজরে নিয়ে গেলাম ওই নিথর দেহটার পাশে।
পাঁজর হিম হয়ে এলো তাঁর বিকৃত মুখমণ্ডল দেখে।
সে যে আমার জন্মদাত্রী মা।
রক্তমাখা অথচ বিবর্ণ, জীর্ণ, ক্লেশহীন, কত শান্ত।
দুহাত বাড়িয়ে কাছে টানে না, জানায় না কোনো অভিযোগে।
কত কষ্ট পেয়েছে মানুষটা।
আমার ব্যথাতুর মুখ আর অনর্গল অশ্রুধারা,
আমার আর্তনাদ আকাশ ছুঁতে চায়।
হে খোদা, এই কি তাঁর পরিণতি ছিল?
বিকট শব্দ পর্দা বিঁধলো আরো,
ধুলোয় ঢাকা জীবাশ্ম এ শহরে।
কত আর্তনাদ ভেসে আসছে সাথে,
নিথর আর ছিন্নভিন্ন লাশের সারিতে।
আমরা তো পশু-সন্ত্রাসী তাদের কাছে, মরলেই বা কি যায় আসে।
আমার প্রাণের ভাইটা কোথায়, দেখছিনা যে তাকে,
কোথায় গেলি, এই ভাই!
ও যে আমাকে বলেছিলো একটা ফুটবল কিনে দিতে!
বড়ো হয়ে নাকি খেলিয়ে হবে, দেশের হয়ে খেলবে, বাব্বাঃ
কোথায় গেলি, সোনা আমার!
দিনের শেষে সূর্য নেমে এলো,
আকাশ-মাটি রক্ত রঙা লাল।
কামান আর বিমানের সশব্দ আনাগোনা শোনা যায়।
তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত, রক্তাক্ত, ব্যথায় জর্জর আমার দেহটা
শুয়ে আছে আকাশ পানে চেয়ে,
মৃত মায়ের কোল ঘেঁষে।
কালটা হয়তো দেখতে পাবোনা আর,
কালটা কি তবে এমনি থেকে যাবে?
হয়তো কালটা হবে রঙিন,
কালো, সাদা, আর সবুজ রঙের দিন।