ভাদ্র মাস । ত্রিশ তারিখ । রাতটি পূর্ণিমা ।
আগামীকাল নাট্যমঞ্চে নায়কের ভূমিকায়
থাকবেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা !
তার পরদিন থেকে শুরু হবে গণন…
সমগ্র ভারতবর্ষের সনাতনী
ঘরে-ঘরে ছোট্ট-ছোট্ট ছেলেমেয়েরা
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা উন্মুখ হয়ে
গুনতে থাকবে বিশ আশ্বিন আসবে কবে !
হ্যাঁ, আমিই দূর্গা ।
অামার আগমনী বার্তায় উন্মুখ হয়ে থাকে
লক্ষ-কোটি সনাতন ধর্মের…(মানুষ বলছি না) ।
আমি আসতে চাইনা । কিন্তু আসতে হয়…
বারবার এবং প্রতি বছর । শরতের শাদা মেঘে ভেসে ।
সারা বছরেই ওরা আমাকে বিভিন্ন নাম দিয়ে
টেনে আনে ওদের হিংস্র কামনার পাতিলে !
কখনো মনসা কখনো চণ্ডী কখনো কালী
কখনো লক্ষ্মী কখনো সরস্বতী…
এরকম বহু মেয়েলী নামে আমাকে ডেকে আনে
তিথির জো দেখিয়ে বেলপাতা-ধান-দূর্বা দেয়
সুস্বাদু ফল-ফলাদিও দেয়
উপবাসী হয়ে মন্ত্র-টন্ত্র পড়ে আমার কাছে বর চায়
যেমন চেয়ে আসছে বিগত হাজার বছর ধরে ।
মেয়েরা বিভিন্ন বর চায়-
চমৎকার স্বামী ও শান্তিভরা সংসার তাদের অন্যতম
ছেলেরা শুধু চায়- শক্তিমান পুরুষের রূপ দিতে ।
আমি দেই, সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করে দেই
এবং দিতে হয়, নয়তো যে আমার নিস্তার নেই !
অধীর আগ্রহে আসে মহালয়া, তারপর
ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী… তখনো সব ঠিকঠাক
দশমীর পূজো শেষ হলেই শক্তিমান পুরুষের
আসল রূপ বেরিয়ে আসে…!
যারা ছিল আমার ভক্ত
দশমীর শেষ পুজো পর্যন্ত !
ওরা ভাবে আমাকে ওরা বিদায় দিচ্ছে,
কিন্তু ওরা জানেনা ওদের শক্তিমত্তা দেখে
আমিই বরং কাঁদতে-কাঁদতে বের হই
এবং প্রত্যেক বছর-ই ।
আমি কাঁদি- ঘরে, জলে, বনে, রাস্তায়, নির্জন দ্বীপে !
কালী নামে যখন ওরা আমাকে পুজো দেয়, আর
মা মা বলে চিৎকার করে, তখন বুকটা ফেটে পড়ে
আমি ওদের শান্ত করি, বর দেই ।
সেই পুরুষেরাই- কালো বলে আমাকে বিয়ে করতে চায় না !
করলেও দিতে হয় একগাদা পণের বহর !
আর পণ ছাড়া বিয়ে... কিঞ্চিৎকর !
আমারই বর পেয়ে, ওরাই আমার ওপর ঝেপে পড়ে !
টেনে হিঁচড়ে উলঙ্গো করে
আমার গাল চিবুক স্তন পেট নিতম্ব যোনী
কামড়ে-কামড়ে রক্তাক্ত করে,
নিষ্ঠুরতার সর্বস্ব ঢেলে দেয় আমার উপর
আমারই বরে…!
কখনো একা, কখনো বা দলবেঁধে
আমাকে ধর্ষণ করে
এমনকি হত্যা করতেও ওদের হাত কাঁপে না !
পায়ের নখ থেকে মস্তিষ্ক- কিছুই না !
যখন বর পাওয়া একদল শক্তিমান পুরুষ আমাকে ধর্ষণ করে
আরেকদল শক্তিমান পুরুষ দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে তা পর্যবেক্ষণ করে
আরেকদল শক্তিমান পুরুষ বিচারের নামে করে-প্রহসন !
সকল আসামী খালাস অথবা কিছু জরিমানাসহ…!
বিচারিক কার্য্য শেষ ।
পরক্ষণেই নতুন ঘটনা শুরু !
চিতায় জ্বলে তখনো আইবুরো !
আমি দূর্গা, দূর্গতিনাশিনী, বিপত্তারিনী ।
পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের দেয়া নামেই বেঁচে আছি ।
নিজস্ব বলে কিছুই নেই ।
তাদের ডাকে সাড়া দিতে হয়
তাদের ডাকেই নদীর জলে ভেসে যেতে হয় ।
ওদের ইচ্ছেই বর দিতে হয় ।
ওদের ইচ্ছেই আমি হয়েছি- গল্পের গাভী..
আমি দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী, বিপত্তারিনী !
ওদের গল্পে থাকি শংকায়, হয়ে কামিনী !