- কবিতা কেন লিখি?
=সহজ প্রশ্ন। হা হা হা। এটা কোন প্রশ্ন হলো? কবিতা কেন লিখি? কেন তুই জানিস না? কবিতা কেন লিখি! কবিতা লিখি...কারণ, কবিতা লিখি... লিখি...উত্তরটা মুখে এসেও আসছে না। আচ্ছা তুই বল তো কেন লিখিস?
- আমি তো তোকেই জিজ্ঞাসা করেছি, তুই বল।
=আমি তো বলবই, আগে তোর কথা শুনি, কেন লিখিস কবিতা?
- আমার একটা ভাবনা আছে, কিন্তু সেটা দানা বাঁধছে না, এজন্য তোকে জিজ্ঞাসা করলাম।
=আমি কবিতা লিখি আমার প্রেমকে-ভালবাসাকে প্রকাশের জন্য। আমার ভালবাসার মানুষকে উদ্দেশ্য করে লিখি। ভালবাসার কথা, পরিকল্পনার কথা, স্বপ্নের কথা, স্বপ্ন ভঙ্গের কথা, আশার কথা, আহ্বানের কথা।
- ভাল বলেছিস। আর কোন কারণ নেই?
=আছে। এই ভালবাসার মানুষ কখনো মা, কখনো বাবা বা ভাই-বোন, কখনো সন্তান, কখনো কোন দুঃস্থজনও হতে পারে। তাদের জন্য ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে, মানে, মূলে আছে ভালবাসা।
- ঠিক তাই। ভালবাসা থেকে কবিতার জন্ম। যেমন একটি শিশু জন্ম নেয় পিতামাতার ভালবাসা থেকে।
=অবশ্য ঘৃণা, হতাশা, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, তৃষ্ণা, যন্ত্রণা, কষ্ট-এগুলোকে ভর করে রচিত কবিতা অজস্র। মহৎ কবিতার অনেকাংশই দখল করে আছে এসব অবেগ সঘণ কারণ।
-এবার এল আবেগ। এই আবেগ থেকে কবিতার বেগ আসে। সবেগে নিক্ষিপ্ত হয় কবিতা। সজোরে পতিত হয় ভূমিতে।
=আরো আবেগ আছে....
- আছে। বলতো কি?
=আবেগের অপরিপূর্ণতায় আসে গালিগালাজ, বকাবকি, অহেতুক খোঁচাখুঁচি।
- তা আছে। কিন্তু.....
=কিন্তু কি?
- আমি একটা বিষয় ভাবছি সেটা তো বললি না।
=তোর ভাবনা তো আমি বলতে পারবো না!
- তা ঠিক। আচ্ছা কবিতা তো দেশ প্রেম, সমাজ চিন্তা, সংস্কার কমীতা, পরিবর্তন, বিপ্লব, বিক্ষোভ, বিদ্রোহ, প্রতিবাদ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ-কটাক্ষ (গালাগাল, বকাবকি, খোঁচাখুঁচি নয়), হেঁয়ালি, ইঙ্গিত এসবও মূখ্য উপজীব্য করে হতে পারে।
=পারে। এবার তুই নতুন একটা প্রসঙ্গ এনেছিস....উপজীব্য। হ্যাঁ কোন কিছুকে উপজীব্য করেও কবিতা লেখা হয়।
- এবং অনেকে সাধারণ আবেগ ছাড়াও কোন বিষয়, ঘটনা, চিন্তা-ভাবনা-দর্শন কে উপজীব্য করে, ব্যথা উপশমকে লক্ষ্য করে কবিতা লেখেন। তাই নয় কি?
=তা লেখে। তাহলে প্রশ্নের উত্তর কি হলো?
-মনের ভাবকে উন্মুক্ত করে নিঃশ্বাসের সুযোগ করে দেয় কবিতা।
=আসলেই মানুষের মূল সম্পদ মন। মনে যা দাগ কাটে তাই সাধারণতঃ স্বল্প পরিসরে, বিস্তারিত বর্ণনার পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত আকারে, কখনো রূপকাকারে, ইঙ্গিত আকারে বা ভাষার আরো জটিল ইমারতের মাধ্যমে প্রকাশই কবিতা, যা অন্তে মনের একটি বিশেষ ভাবকে জনসমক্ষে তুলে ধরে।
- বেশ খটমটে করে বললি। সহজে বলতে পারিস না?
=কেমন সহজ?
- এই ধর কবিতা হলো জীবনের স্ল্যাপশট।
= হ্যাঁ, তাও বলতে পারি। তবে, নারে দোস্ত, আজ আর নয়, বেশ কাঠখোট্টা লাগছে এসব কথা। একটু নরম কথা বল।
- চল তাহলে একটা কবিতা হয়ে যাক!
=বেশ হোক। দু’জনে মিলিতভাবে। প্রথমে আমি বলি। তারপর তুই।
- ঠিক আছে। বল।
= আকাশ জুড়ে মেঘ জমেছে, সবাই যখন ঘুমে
আকাশ থেকে নামলো মনস্তাপে
পুরুলিয়ার সবুজ ঘাসে, কঠিন প্যাকেট করে
মানুষ মারার রসদ এয়ার ড্রপে।।
- থাম থাম, আমারটা শোন।
=বল।
- এবার বন্ধু ঘুম থেকে তুই জাগ,
সিথানে তোর যুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে
মাথার ভিতর অস্ত্রকে তোর শাণ
বুকের সাহসে বাইরে আনবি তাকে।
= সেখান থেকে খাগড়াগড়ে, পথে অনেক দেরি
বুদ্ধদেবের পথেই মম্তা দেবী
বাংলাদেশে জায়গা হয়নি, তুমিই দিলে ছায়া
মরবে নাকি ডুববে বলেন দিখি?
সময় আজো সমূলে যায়নি, বাঁচার আশা আছে
বিজাতীয় এই শত্রু সমূলে নাশ
বাঁচাতে পারে দুই বাংলা, মানুষ এবং মাটি
বাঁচাতে পারে মাঠের ধান ও ঘাস।।
- না জাগলেও রক্ষা হবে না কোন
জাগলে বরং বাঁচার আশাটা থাকে
বন্ধু রে তোর বুকের জমিনটাতে
উজ্জীবনের মন্ত্র-বৃক্ষ আছে।
আজকে সেটাতে ফুল ফোটাতে হবে
পুষ্পে-বীজে ভরাতে হবেই মাঠ
জীবন ফুলের সৌরভ ভরা মাঠে
পৃথিবী আবার শান্তির হাওয়া পাক।
চল বন্ধু আজকে উঠি, যাই। অনেক কথা হলো। কথা যেমনই হোক দু’বন্ধুতে কিছু আদান-প্রদান তো হলো। বাঙ্গালী তো আড্ডা প্রবণ জাতি ছিলো। সেই আড্ডাকে ফিরিয়ে আনলে বাঙালীত্ব রক্ষা পাবে, কবি রক্ষা পাবে, কবিতা রক্ষা পাবে। আয় আমরা সেই চেষ্টা করি।