অথর্বতার সীমা
- আরশাদ ইমাম
১. যত রকম বসা
বসে আছি, আছি বসে, বসে বসেই আছি
বসেই থাকি, থাকতেই হয়, মারি মশা-মাছি।
নাকের উপর চশমা তুলে,
গাল পাড়ি তার মা-বোন তুলে
চোখ রাখি না নিজের ভুলে, বসেই মক্কা কাশি।
বসেই আমার হাসি, আমি বসাই ভালোবাসি।
কোমর ব্যথা, পায়ে ব্যথা, মুখ খুললেই দাঁতে ব্যথা
রক্তে গরল কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশারে ভারী মাথা
চলাফেরায় কষ্ট বলে
বসেই কাটাই সদলবলে
সময়ান্তে চেম্বারে যাই, মাথায় তুলি অষুধ-ছাতা
বসা থেকে উঠলে আমার লাগে কেমন যা-তা!
শিশু থেকে বসে আছি, হামাগুড়ির পরে বসি
বয়স বাড়ে পড়তে বসি, সময় কালে বিয়ে বসি
বাসে-ট্রেনে, পথে ঘাটে
চলতে বসি, খাইতে বসি
বেকার কালে বসে ছিলাম, কাজ পেয়ে তাই গেঁড়ে বসি
বস ডাকলে উঠতেই হয়, তা না হলে শুধুই বসি।
কোটে বসি, জোটে বসি, টাকা পেলেই ভোটে বসি
জমি-জিরোত বসেই বানাই, তখন-যখন পেয়ে বসি
বসে বসেই সুতো পেচাই
বসে বসেই ঘুরাই লাটাই
বসা থেকে উঠায় আমার বেজায় রকম শুচি
বসে ছিলাম, বসে আছি, বসাতেই নিকুচি।
২. ফাঁক অথবা ফাঁকী
ফাঁক ছিল না দেহের কোষে, জটিল অঙ্কে হিসেব কষে
প্রকৃতি তার সবটা দিয়ে, জন্ম দিলেন মানুষ বেশে
জন্মে আমি অমর হলাম এবার আমায় কে পায়
শুরু করলো জীবন নিয়ে ধস্তাধস্তি ক্ষ্যাপায়।
অতিভোজন, অর্ধ ভোজন
অখাদ্য, নেই খাদ্য ভোজন
মেদ-ভূঁড়ি আর চর্বিতে কোষ
বাড়িয়ে চলে দেহের ওজন।
তাতেও আমার সাধ মেটেনা, নতুন অঙ্ক করি
পকেটটাকে লকেট করে গলায় ঝুলিয়ে ধরি।
উ-চিত কাজে সময় কোথায়, উ-পুড় কাজকে চিনি
আসল কাজের নাম নিয়ে তাই হিসেব করি গিনি।
রোজ সকালে জটলা ঠেলে কাজ হয়ে যায় অফিস গেলে
হাজিরাটাই আসল কর্ম, তাতেই সকল মাইনে মেলে।
সারাটি দিন ধর্ণা দিয়ে
পরের কাজের বর্গা নিয়ে
আরেক জনের টেবিলে যাই
তাকেও পাই না গিয়ে
সেও গেছে আমার মতই আরেক ভাড়ার খ্যাপে
কাজ হবে কি? না হবে না, সবাই পড়বে গ্যাপে।
যদিও বসি নিজের ঘরে, ক্লায়েন্টরা সব কাতার ধরে
কার আগে কে সেবা নেবে, আর্দালি নেয় কামাই করে
ঘরে বসে সেবা দিলে নিজকে মহান ভাবি
আমাকে পায় অফিস এলে, করি এমন দাবী।
এটাই আমার করার কথা
এ বিষয়ে মাথাই ফাঁকা
অমুক সাহেব লোককে ঘুরান, থাকেন ভদ্রে-কালে
আমিও যে গ্রেট ফাঁকিবাজ লোকে সেটাও বলে!
লাজ লজ্জা থাকবে কেন, জেনেটিক যা ছিল
কাটা ছেঁড়ায় সে সব গেছে, বে-লাজ টিকে গেল।
এখন আমার বিবেকও নেই, ওসব পুরান কথা
মাথা এখন সাফ সুতরা, ঘামাবে কে সেটা!
ফাঁক পেলে যাই ফতেহপুরে
ফাঁক বুঝে যাই সুদূর দূরে
স্বদেশ ছাড়া বিদেশ ঘুরে
ব্যাপক কাজে মুন্ডু ঘোরে
বিদেশ ঘোরার শেষে আমার শরীর বেজায় ভারী
এবার একটু জেরার সময়, জীবন কী বাহারী!
আরশাদ ইমাম//ব্যাজার কাব্য//ঢাকা
০৪ আষাঢ ১৪২৬//১৮ জুন ২০১৯।