মধুমতীর অগ্র সহোদরা গড়াই
নামে ও ধ্যানে খুব বিখ্যাত কোন নদী নয়
তবু রুপে ও বিদ্যায় এ নদী যেন এক ভজন গায়িকা
তবু রুপে ও গুনে এ নদী যেন কবির হৃদয়ের
নিত্য কালের অতিন্দ্রীয়া প্রিয়া ।
কদম ঋতুতে এ নদীর কন্ঠে উথলে ওঠা ঢেউ
কবির হৃদয়ে আনে ভাবের আবেগ ।
একতারপুর গ্রামে এ নদীর পাড়ে আছে
এক কাপালিকের আশ্রম ।
এ নদীর পাড়ে বাস করেন অনল-সংকাশ উগ্রতেজা
এক সাধু হাতে তার সাগর তল দেশি
শ্বেত কুষ্টের মতো শাদা শঙখের শাখা
কন্ঠে তার পদ্ম বীজ ও রুদ্রাক্ষের মালা ।
সাধু শ্রেষ্ট এ পুরুষ উত্তমের চোখের মনি
সমুদ্র জলের মুক্ত, প্রবালের মতো চক চক করে ।
লোকের মুখে শুনেছি তিনি যুগ-যুগান্তরে
ভাত স্পর্শ করেন নি
নিদ্রা দেবী তাকে স্পর্শ করেন নি ।
যদ্যপি তিনি যদভবিষৎ এক সন্যাসী গুরু ।
আদ্যা-মাঁ বিপদ তারিণীর বরপুত্র এ মহাতপা
কাপালিকের নাম বিপদ ভজন
ভজন গায়ক নন তিনি তবু নাম তাঁর
ইহকালে বিপদ ভজন ।
একদিন ভাগ্য গুনে এ সাধুর সত্যাশ্রয়ী আশ্রমে
দুপুর বেলা অষ্টগানের আসর শেষে
এক মুঠো ডাউল ভাত খেয়েছিলাম
এক মুঠো ভিক্ষার অন্ন খেয়েছিলাম পদ্ম পাতায়
সেই থেকে ডাউল ভাত আমার খুব প্রিয়
সেই থেকে ডাউল ভাত আমি বড় ভালোবাসি
সেই থেকে ডাউল ভাত আমার কাছে কল্যাণ অন্ন
সেই থেকে ডাউল ভাত আমার কাছে সুশীলা ভদ্র
সেই থেকে ভিক্ষার অন্ন আমার কাছে -
গণদেবতার প্রসাদ গণদেবতার অর্ঘ ।
সেই থেকে প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার রাতে
আমি সেই মহাতপা কাপালিক কে স্বপ্নে দেখি
তাঁঁর হাতে পোড়া মাটির পাত্রে ভিক্ষার অন্ন
তাঁর বৃদ্ধা ও অনামিকা আঙুলে কৃঞ্চ তুলসির মালা
তিনি পাঠ করচ্ছেন আদ্যাস্তব
বুদ্ধ পূর্ণিমার মতো জ্বলচ্ছে তাঁর কপোল
তিনি আদ্যাস্তব পাঠ করতে করতে হেঁটে যাচ্ছেন
চায়ের দোকানদার থেকে মাছের আড়ৎ
বিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে কোর্টের উকিল
নগরের সমস্ত পেশার নাগরিক
ছুটচ্ছে তাঁর পিছে...
সুধীবৃন্দ আপনারা বলুন-
সামান্য ডাউল ভাতের সাথে
সামান্য ভিক্ষার অন্নের সাথে
অবিদ্যার কোন যোগ কোন মায়া আছে কি?
কি অর্থ বহন করে আমার এ স্বপ্ন ?
ধবল দুহিতা বুদ্ধ পূর্ণিমার রাতে
মহাপ্রাণ বুদ্ধের সাথে এই কাপালিকের
কোন যোগ, কোন মায়া কোন, সদৃশ্যতা আছে কি?
আমি আমার বাড়িতে একদিন
অষ্টগানের আসর বসাতে চাই
সেই আসরে আমি পৃথিবীর সব সাম্রাজ্যবাদী
পরাশক্তিধর রাষ্ট্র নায়কদের ইনভায়েট করতে চাই
অষ্টগানের আসর শেষে তারা আমার বাড়িতে
এক মুঠো ডাউল ভাত খেয়ে
এক মুঠো ভিক্ষার অন্ন খেয়ে
ভুলে যাবে সম্রাজ্য বাড়ানোর নেশা
ভুলে যাবে যুদ্ধ বাজী ভুলে যাবে রক্তপাত
ভুলে যাবে প্রাণ হানি ভুলে যাবে সংঘাত ।
মহাপ্রাণ বুদ্ধের দৈব আশির্বাদে
মহা প্রাণ বুদ্ধের দৈব যোগ- মায়ায়
সবার দেহ মনে প্রতিষ্টিত হবে মহাপ্রাণ ।
দ্বান্দিক বস্তু বাদে না
সম্রাজ্য নীতিবাদে না
অস্ত্রের বাণিজ্যে না
বারুদের বজ্র আঘাতে না
রক্তপাতে গণহত্যায় না
এক মুঠো ভিক্ষার অন্নে
অষ্টগানের আসরে মিলুক
মানুষের আত্মার মুক্তি