সম্রাট
কতদিন এই ভাবে ঘুমিয়ে আছো, সুফিসম্রাট ।
আকবরই আইনের ধুলো যতটুকু
ভারতের ইতিহাশ বলে
তোমার ইতিহাশ তেমন
কেউ কোনদিন বলবে না জানি ।
তোমার জীবনীতে নেই
মণিমুক্ত, মহফিল, তাজা ঘোড়া
রাজদরবার, রাজার সিংহাসন ।
তোমার জীবনীতে নেই
সর্বান্তকরণ প্রেম, নেই মমতাজ
নেই তাজমহল, নেই সুমহান স্থির শিল্পকলা
লাল কেল্লা, নেই রক্তপায়ী তোলোয়ার
নেই সর্বোচ্চ রাজ মুকুট বিজয়ের গৌরব ।
কোনদিন করোনি তো জয় কোন রাজার আসন
তাই আকবরই আইনের ধুলো যতটুকু
ভারত সম্রাটের ইতিহাশ বলে
তোমার ইতিহাশ তেমন
কেউ কোন দিন বলবে না জানি
তবুও তো চিত্রা সেই দু:খের মিতার মতো
তবুও তো চিত্রা সেই দু:খের যমুনার মতো
তোমার পাশাপাশি চিরকাল এমনি বহে যাবে।
সর্বান্তকরণ প্রেম মমতাজ
পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্য তাজমহল
লাল কেল্লা সুমহান স্থির শিল্পকলা
একদিন পৃথিবীতে ঠিকই ধবংস হবে
রক্তপায়ী তোলোয়ার বিজয়ের মুকুট
একদিন পৃথিবীর ধুলোয় ঠিকই লুটাবে
ভারত সম্রাটের গৌরবের ইতিহাশ
একদিন ঠিকই মুছে যাবে
হুমায়ুনের পুত্র মারা গেছে
রাজ মহলের
রাজ জৌলুস ম্রিয়মান প্রায়
রাজ দন্ড ভেঙে গেছে
তবুও তো চিত্রা সেই দু:খের মিতার মতো
তবুও তো চিত্রা সেই দু:খের যমুনার মতো
তোমার পাশা পাশি চিরকাল এমনি বহে যাবে।
চিত্রা
আমার বুকের ভিতর বহে যায়
তেরোশত নদী
আমার যা কিছু ভালো লাগা
আমার যা কিছু ভালোবাসা
তার সবটুকু সেই খানে ।
সীমান্ত রেখার মতো এঁকে বেকে সাজানো
বুকের নিভৃত দেশে
এতো জল এতো যুদ্ধ এতো রক্তপাত
এতো ভাঙাভাঙি শালিক উড়ে যায়
দেবদারু বট বৃক্ষের শাখা ছেড়ে চন্দন গন্ধ মেখে
আমার বুকের ভিতর বহে যায় চিত্রা
আমার বুকের ভিতর বহে যায় প্রমত্ত
আমার বুকের ভিতর বহে যায় অমৃতভাষিণি
আমার বুকের ভিতর বহে যায় চিত্রা
জলে যার ভেসে ওঠে মহাসাধকের মুখ
আমার বুকের ভিতর বহে যায় চিত্রা
জান্নাতের উদ্যানের মতো সবুজ শালের মতো
পেতে আছে যে কচি ঘাশের বুক
ঘাশের নরম বুকে পড়ে আছে
অতল-আয়না জল
জলে যার ভেসে আছে আমার হুজুরের মুখ।
বৃক্ষ
আমি জানি নদী বৃক্ষের মতো
অনড় নহে
আমি জানি নদী মানুষের মতো
নিরন্তর ছুটে চলে...
তবুও তো বৃক্ষের মাতৃছায়া তলে
গড়ে ওঠে নদীর সংসার ।
আমি জানি মানুষের মতো
বৃক্ষদের নেই কোন বিশ্ববিদ্যালয়
আমি জানি মানুষের মতো
বৃক্ষদের নেই কোন সুশিক্ষিত পন্ডিত সমাজ
আমি জানি মানুষের মতো
বৃক্ষদের নেই কোন রাজা
নেই কোন সরকার
নেই কোন সুনির্বাচিত গণ পরিষদ
আমি জানি বৃক্ষদের অধিকার নিয়ে
বৃক্ষদের পক্ষে অন্য কোন বৃক্ষদল
আন্দোলন সংগ্রামে প্রতিবাদ করে না
কথা বলে না, লড়াই করে না ।
তবুও তো লোকালয়ে মানুষের
চিরস্থায়ী বসবাস করতে বসতি গড়তে
কিছু কিছু বৃক্ষরা রেখে যায় অবদান
তবুও তো মানুষের নি:শ্বাস
তবুও তো মানুষের ফুস ফুস
আছে কিছু বৃক্ষদের কাছে ঋনি ।
তবুও তো বৃক্ষদের সবুজ পুস্তক পড়ে
আদিম মানব সমাজ একদিন শিখেছিলো বিদ্যা
তারাই তো একদিন সর্বশিল্পী হয়ে
গড়েছিলো বিদ্যাপীঠ গ্রীস, গড়েছিলো সেরাসিন।
হে জাংগালিয়া
তুমিতো শতবর্ষী ধ্যান মগ্ন বৃক্ষের মতো
তুমিতো অনড়, তোমার ছায়াতলে
শতবর্ষ পরে একদিন গড়ে ওঠবে
জরা ক্রান্ত ব্যাধি গ্রস্থ মানুষের
আরোগ্য আশ্রম ।